দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, মেদিনীপুর, ১০ আগস্ট: বোমা ছোঁড়ার পর ৪২ কিলোমিটার দৌড়ে ধরা পড়েছিলেন ক্ষুদিরাম। বিহারের মুজাফফরপুরে সেই পথ ধরেই দৌডলেন মেদিনীপুরের অরিন্দম। ব্রিটিশ ম্যাজিস্ট্রেট কিংসফোর্ডের গাড়ি ভেবে ব্যারিস্টার কেনেডির গাড়ি লক্ষ্য করে বোমা ছুঁড়েছিলেন বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসু ও প্রফুল্ল চাকী। আর, তারপরই ক্ষুদিরাম মুজাফফরপুর থেকে পুসা রোড স্টেশন পর্যন্ত দৌড়ে শেষমেশ পরের দিন সকালে ধরা পড়ে গিয়েছিলেন। শনিবার (৯ আগস্ট) সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি সেই ‘পথ’ ধরেই দৌড়লেন মেদিনীপুরের তরুণ গবেষক ও লেখক অরিন্দম ভৌমিক। তবে, ক্ষুদিরাম দৌড়েছিলেন রেলওয়ে ট্র্যাক ধরে। অরিন্দম সেই অনুমতি পাননি। তাই তাঁকে দৌড়তে হয়েছে প্রায় ৫৪ কিলোমিটার।

thebengalpost.net
দৌড় শুরু করার সময়:

thebengalpost.net
বিজ্ঞাপন (Advertisement):

১৯০৮ সালের ৩০ এপ্রিল, রাত্রি ঠিক সাড়ে আটটা। ব্রিটিশ ম্যাজিস্ট্রেট (বিচারক) কিংসফোর্ডের গাড়ি লক্ষ্য করে বোমা ছুঁড়তে গিয়ে ভুল করে মিসেস কেনেডি ও মিস কেনেডির গাড়িতে বোমা ছুঁড়ে মারেন বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসু ও প্রফুল্ল চাকী। আর তারপরই মুজাফফরপুরের সেই ঘটনাস্থল থেকে দৌড় শুরু করেন ‘অগ্নিশিশু’ ক্ষুদিরাম ও প্রফুল্ল। ক্ষুদিরাম সারা রাত দৌড়ে সকাল বেলায় ৪২ কিলোমিটার দূরে পুসা রোড স্টেশনে ধরা পড়েন। বিচারে তাঁর ফাঁসির নির্দেশ হয়। প্রফুল্ল অবশ্য গ্রেপ্তার হওয়ার আগেই নিজের মাথায় গুলি করে আত্মঘাতী হন। ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দের ১১ আগস্ট সকাল ৬টায় মুজাফফরপুর জেলেই ফাঁসি হয় মেদিনীপুরের বীর সন্তান ‘শহিদ’ ক্ষুদিরাম বসুর। ‘কিশোর’ ক্ষুদিরামের বয়স তখন মাত্র ১৮ বছর ৮ মাস ৮ দিন। আগামীকাল অর্থাৎ সোমবার (১১ আগস্ট) ক্ষুদিরামের ১১৮তম ‘আত্মবলিদান দিবস’। অপরদিকে, আগস্ট মাসেই নিজের ৫০-তম জন্মদিন মেদিনীপুরের বিশিষ্ট গবেষক, লেখক ও প্রকাশক অরিন্দমের। সেই উপলক্ষেই শনিবার বিহারের মুজাফফরপুরের ‘শহিদ ক্ষুদিরাম স্মারক স্থল’ থেকে প্রায় ৫৪ কিলোমিটার দৌড়ে পুসা রোড স্টেশনে পৌঁছন অরিন্দম। আর এই চলার পথে মুজাফফরপুর থেকে পুসা রোডের মধ্যে যে ৬টি রেল স্টেশন পড়েছে, সেই প্রতিটি স্টেশনেই অরিন্দম রোপন করেন ‘বসন্ত সুন্দরী’ বৃক্ষ।

thebengalpost.net
পথে বৃক্ষরোপণ:

ক্ষুদিরামের শহর মেদিনীপুরেই বড় হয়েছেন তরুণ গবেষক ও লেখক অরিন্দম ভৌমিক। ২০১৮ সাল থেকে প্রতিবছর ১১ আগস্ট, ক্ষুদিরামের আত্মবলিদান দিবসে মুজাফফরপুরে পৌঁছে যান অরিন্দম। অরিন্দম বলেন, “ক্ষুদিরামকে নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে আমি জানতে পেরেছিলাম, ফাঁসির আগে ক্ষুদিরামের শেষ ইচ্ছেগুলো অপূর্ণ রয়ে গিয়েছে।” তাই মেদিনীপুরের ‘কিশোর বিপ্লবী’ ক্ষুদিরামের অপূর্ণ ইচ্ছেগুলি পূর্ণ করার চেষ্টা করেন মেদিনীপুর শহরেরই সুসন্তান অরিন্দম। সেই শেষ ইচ্ছেগুলি পূরণ করতেই ২০১৮ সালের ১১ আগস্ট অরিন্দম পৌঁছে গিয়েছিলেন মুজাফফরপুরে। সঙ্গে নিয়েছিলেন মেদিনীপুরের মাটি, সিদ্ধেশ্বরী কালীমায়ের প্রসাদ ইত্যাদি। মেদিনীপুর ফিরে যাওয়ার সময় সঙ্গে নিয়েছিলেন চিতাভূমির মাটি এবং গণ্ডক নদীর জল। সেই জল ও মাটি দিয়ে মেদিনীপুর জেলায় শুরু করেছিলেন বৃক্ষরোপন অভিযান। নাম দিয়েছিলেন ‘সবুজ ক্ষুদিরাম’। ২০১৮ সালেই প্রকাশিত হয় তাঁর বাংলা ভাষায় লেখা বই ‘কে ক্ষুদিরাম’। ২০১৯ সালের ১১ আগস্ট অরিন্দম মুজাফফরপুরে গিয়েছিলেন ক্ষুদিরামের নাতি সুব্রত রায়কে সঙ্গে নিয়ে। শুধু তাই নয়, প্রতি বছর মেদিনীপুর শহরের হবিবপুরে ক্ষুদিরামের জন্মভিটায় ঘটা করে ক্ষুদিরামের জন্মদিন পালন করেন অরিন্দম। শুক্রবার রাতে মুজাফফরপুরে পৌঁছে অরিন্দম জানিয়েছিলেন, “বহু দিন থেকেই মনের মধ্যে একটি ইচ্ছে ছিল যে, ক্ষুদিরাম বোমা ছোঁড়ার পরে যেভাবে সারা রাত দৌড়ে মুজাফফরপুর থেকে পুসা রোড স্টেশনে (শহিদ ক্ষুদিরাম পুসা রোড স্টেশন) গিয়েছিলেন; ঠিক সেইভাবেই আমিও দৌড়ব। সেই ইচ্ছে থেকেই এই দৌড় শুরু। ক্ষুদিরাম রেলওয়ে ট্র্যাক ধরে দৌড়েছিলেন প্রায় ৪২ কিলোমিটার। আমারও তেমনটাই ইচ্ছে থাকলেও, রেলওয়ের অনুমতি না মেলায় স্টেশন সংলগ্ন রাস্তা ধরে প্রায় ৫৪ কিলোমিটার দৌড়তে হয়েছে। আমার সঙ্গেই সাইকেল নিয়ে এই দূরত্ব অতিক্রম করেছেন মুজাফফরপুরের বাসিন্দা সোহানলাল আজাদ জি। আর, বাইকে ছিলেন বাইজু কুমার জি।” অরিন্দম বলেন, “এই আগস্টেই আমার ৫০ বছর পূর্ণ হচ্ছে। সেক্ষেত্রে জীবনের এক বড় ‘স্বপ্ন’ পূরণ হলো!” অরিন্দম এও জানান, আগামী ১১ আগস্ট ক্ষুদিরামের আত্মবলিদান দিবসে প্রকাশিত হবে বহু প্রতীক্ষিত হিন্দি ভাষায় লেখা ‘কৌন ক্ষুদিরাম’ বই। তাঁর লেখা এই বইতে ক্ষুদিরাম সম্পর্কিত বহু অজানা তথ্য থাকবে বলেও জানিয়েছেন অরিন্দম। শনিবার সন্ধ্যায় অরিন্দমের দৌড় সম্পন্ন হওয়ার পর, মুজাফফরপুরের বিশিষ্ট নাগরিকেরা তাঁকে সংবর্ধিত করেছেন।

thebengalpost.net
রবিবার মুজাফফরপুরে অরিন্দমকে সংবর্ধিত করার পর: