National

UPSC: UPSC-তে সফল বাংলার ১৩ জন! উত্তরের জয়শ্রী থেকে দক্ষিণের পারমিতা, লক্ষ্য স্থির রেখেই সাফল্য; ‘দ্বিতীয়’ হয়েও চোখে জল অনিমেষের

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, ১৮ এপ্রিল: প্রকাশিত হয়েছে UPSC (ইউনিয়ন পাবলিক সার্ভিস কমিশন)-র সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার ফলাফল। এই তালিকায় নজর কেড়েছে বাংলা। মোট ১৩ জনের নাম রয়েছে বাংলা থেকে। এর মধ্যে, রাজ্য সরকারের সত্যেন্দ্রনাথ সিভিল সার্ভিস স্টাডি সেন্টার থেকে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত ৭ জন তালিকায় জায়গা পেয়েছেন। তাঁরা হলেন, অঙ্কিত আগরওয়াল (২৫৭), ভারতী দত্ত (৩৪৬), গৌতম ঠাকুরি (৩৯১), অনুষ্কা সরকার (৪২৬), রিমিতা সাহা (৫৬৬), পারমিতা মালাকার (৮১২), মহঃ বুরহান জামান (৮২২)। অন্যদিকে, তালিকায় উজ্জ্বল দার্জিলিং জেলার তিন কৃতী। মেধাতালিকায় ৫২ নম্বর জায়গা করে নিয়েছেন দার্জিলিং শহরের সেভেন রবার্টসন রোডের বাসিন্দা জয়শ্রী প্রধান। জয়শ্রীর সাফল্যে খুশির হাওয়া শৈলশহরে! ৩৯১ র‌্যাঙ্ক করে নজর কেড়েছেন বাগডোগরার (Bagdogra) মমতানগরের বাসিন্দা গৌতম ঠাকুরি। অপরদিকে, মেধাতালিকায় ৪৯৪ নম্বর স্থান দখল করেছেন এমএম তরাইয়ের অজয় মোক্তান। কৃষক পরিবারের ছেলে অজয় তরুণদের কাছে যেন আজ ‘আইকন’।

জয়শ্রী প্রধান:

প্রসঙ্গত, লরেটো কনভেন্টের প্রাক্তনী জয়শ্রী। পরবর্তী সময়ে আইন নিয়ে পড়াশোনার জন্য তিনি বেঙ্গালুরুতে চলে গিয়েছিলেন। তবে, UPSC-র প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য দার্জিলিংয়ে ফিরে আসেন জয়শ্রী। কোথাও কোচিং না নিয়ে ইন্টারনেটের সাহায্য ও সোশ্যাল মিডিয়ায় বিশেষজ্ঞদের দেখানো পথেই সাফল্য এসেছে বলে জানান জয়শ্রী। সিভিল সার্ভিসে দ্বিতীয়বারের প্রচেষ্টাতে সফল হলেন তিনি। বাগডোগরার গৌতম ঠাকুরি ছোটবেলাতেই বাবাকে হারিয়েছেন। বাবা কৃষ্ণাবাহাদুর ঠাকুরি সেনাবাহিনীতে কর্মরত ছিলেন। গৌতমের পড়াশোনা বেঙ্গালুরুর রাষ্ট্রীয় মিলিটারি স্কুলে। পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নিয়ে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর। বর্তমানে তিনি জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে উত্তর-পূর্ব ভারত নিয়ে গবেষণা করছেন। দিল্লিতে বসেই গৌতম বলেন, “২০২১ সাল থেকে UPSC-র জন্য প্রস্তুতি শুরু করেছিলাম। বাবার পেনশনের টাকাতেই সংসার চলছিল। কিছুদিন পর বাড়ি ফিরব।” ছেলের সাফল্যে খুশি গৌতমের মা সীতা ঠাকুরি। তিনি বর্তমানে বাগডোগরায় রয়েছেন।

জয়শ্রী সহ দার্জিলিঙের সফল তিন:

এ প্রসঙ্গে এও উল্লেখ্য যে, ২০২৩-এ UPSC পরীক্ষায় পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর সিভিল সার্ভিসেস স্টাডি সেন্টার থেকে মোট ৭ জন উত্তীর্ণ হয়েছেন। তার মধ্যে রয়েছেন পারমিতা মালাকার। পারমিতা বর্তমানে কল্যাণীর মহকুমা তথ্য ও সংস্কৃতি আধিকারিক হিসেবে কর্মরত। সর্বভারতীয় স্তরে ৮১২ র‍্যাঙ্ক করেছেন পারমিতা। তাঁর বাড়ি উত্তর ২৪ পরগনার খড়দায়। পদার্থবিদ্যায় স্নাতক তিনি। পড়াশোনা শেষ করেই একটি নামকরা আই.টি কোম্পানিতে যোগ দেন। তখনও সিভিল সার্ভেন্ট হওয়ার ইচ্ছেটা ততটা জোরাল হয়নি তাঁর। সে কথা মানছেন পারমিতা নিজেই। সাত বছর সেখানে কাজ করে পরে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের চাকরিতে যোগ দেন পারমিতা। তবে, এর কিছু আগে থেকেই তাঁর মধ্যে সিভিল সার্ভেন্ট হয়ে কাজ করার ইচ্ছে জন্মায়। ২০১৯ সাল থেকে শুরু করেন UPSC-তে বসা। এর মধ্যেই মহকুমা তথ্য ও সংস্কৃতি আধিকারিক হিসেবে কাজে যোগ দেন। এদিকে, পর পর ৪ বছর প্রিলিমিনারিতেই অকৃতকার্য হন! ৫ বারের বেলাতেও ৪ নম্বরের জন্য সফল হননি পারমিতা। এরপর আরও জেদ চাপে তাঁর। ২০২৩ সালের পরীক্ষায় বসেন এবং সফল হন। পারমিতা জানিয়েছেন, এই গোটা পর্বে বহুবার হতাশ হয়েছেন, কিন্তু চেষ্টা থামাননি। খুঁজে নেননি, পরীক্ষায় না বসার জন্য কোনও কারণ, বলা ভালো, অজুহাত! এতেই সাফল্য আসে তাঁর।

পারমিতা মালাকার:

অন্যদিকে, পশ্চিমবঙ্গের পড়শি রাজ্য ওড়িশা-র অনিমেষ প্রধানের সাফল্যের কাহিনী শুনলে চোখে জল আসতে বাধ্য! অনিমেষ প্রথম বার পরীক্ষায় বসেই দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছেন (প্রথম হয়েছেন উত্তর প্রদেশের লখনউয়ের আদিত্য শ্রীবাস্তব)। তবে, অনিমেষের এই সাফল্যের পথ কুসুমাস্তীর্ণ ছিলোনা মোটেই! অনিমেষের বাবা ছিলেন প্রিন্সিপাল। তিনি ২০১৫ সালে মারা গিয়েছিলেন। আর, এবার UPSC পরীক্ষার প্রস্তুতি চলার সময়ই তাঁর মা আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপরই মারা যান তিনি। তাই, পেশায় ইঞ্জিনিয়ার অনিমেষের এতবড় সাফল্যের পরও চোখে জল! কারণ, ছেলের এত বড় সাফল্যের খবর তাঁর বাবা-মা জেনে যেতে পারলেন না! উল্লেখ্য, রৌরকেল্লার ন্যাশানাল ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি থেকে গ্র্যাজুয়েট হয়েছিলেন অনিমেষ। তিনি ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশন লিমিটেডে কর্মরত। সেই অনিমেষই এবার UPSC-তে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছেন। তিনি সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, “আমি যখন খবরটা পেয়েছিলাম তখন কিছুটা আবেগবিহ্বল হয়ে যাই। আমি বাবাকে হারিয়েছি আগেই। মায়ের সঙ্গে এই খবরটা শেয়ার করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু, তিনিই তো নেই! আমার মা আমাকে সবথেকে বেশি উৎসাহ দিতেন। তিনিই আর নেই। কাকে বলব এই সাফল্যের কথা!”

অনিমেষ প্রধান:

আদিত্য শ্রীবাস্তব (প্রথম স্থানাধিকারী):

News Desk

Recent Posts

Midnapore: মেয়ের অন্নপ্রাশন শেষে জ্বর নিয়েই কাজে যোগ দিয়েছিলেন, ‘কফিনবন্দী’ হয়ে ডেবরায় ফিরলেন CRPF জওয়ান

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৩ নভেম্বর: শোকসংবাদটা পৌঁছেছিল শুক্রবারই। বুকে পাথর চেপে অপেক্ষা…

4 days ago

Medinipur: মামিমার সাথে ‘অভিসারে’ গিয়ে ফাঁসলেন যুবক? অপহরণ ও ধর্ষণের অভিযোগে কেশিয়াড়িতে গ্রেপ্তার ‘কলির কেষ্ট’

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৩ নভেম্বর: মামিমাকে অপহরণ ও ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেপ্তার যুবক।…

4 days ago

Medinipur: প্রায় ৬০ বছর পর রাজ্যের দাপুটে মন্ত্রীর গড়ে ‘পাকা’ হবে মাটির স্কুলবাড়ি, আনন্দে মিষ্টিমুখ পড়ুয়াদের

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২১ নভেম্বর: রাজ্যের দাপুটে মন্ত্রী মানসরঞ্জন ভুঁইয়ার 'খাসতালুক' সবংয়ে…

6 days ago

Kharagpur: ওড়িশার বেসরকারি কলেজে খড়্গপুরের ছাত্রের রহস্যমৃত্যু! খুনের অভিযোগ পরিবারের

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৯ নভেম্বর: ওড়িশার বেসরকারি কলেজে বাংলার ছাত্রের রহস্যমৃত্যু! খুনের…

1 week ago

Midnapore: জেলার স্বনামধন্য নৃত্যশিল্পী রাজীব খানের অকাল প্রয়াণে শোকস্তব্ধ মেদিনীপুর

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১০ নভেম্বর: হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হলো মেদিনীপুর শহর…

2 weeks ago

Midnapore: ‘আমার পক্ষে এতগুলো বাড়ি সামলানো সম্ভব নয়’, স্পষ্ট জানালেন মেদিনীপুরের BLO, এনুমারেশন ফর্ম নিয়ে ঘুরছেন তাঁর স্বামী

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৯ নভেম্বর: তৃণমূল কংগ্রেসের পঞ্চায়েত সদস্যকে সঙ্গে নিয়ে এনুমারেশন…

2 weeks ago