দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৫ জুন:’এক ব্যক্তি এক পদ’ নীতি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হল দলের প্রার্থী তালিকায়। বিধায়ক হয়েও টিকিট পেলেন। দলের একাধিক পদে থেকেও পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রার্থী। এটাই কি তবে নতুন তৃণমূল? প্রশ্ন তুলছেন আপামর তৃণমূল কর্মীরা। বুধবার বিকেলে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা তৃণমূলের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই ক্ষোভে ফুঁসছেন দলের একাংশ নেতা-কর্মী। বিধায়ক (পিংলা) এবং দলের জেলা কো-অর্ডিনেটর হওয়া সত্ত্বেও অজিত মাইতিকে ফের জেলা পরিষদ আসনে (খড়্গপুর-২) প্রার্থী করেছে তৃণমূল। তিনি জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি’র পদ সামলেছেন এতদিন। অন্যদিকে, গড়বেতার বিধায়ক উত্তরা সিংহ হাজরাকেও ফের (গড়বেতা থেকে) প্রার্থী করেছে দল। তিনি জেলা পরিষদের সভাধিপতি ছিলেন। এবারও ফের সভাধিপতির দৌড়ে আছেন। অথচ, গত বছর মেদিনীপুর শহরের এক প্রশাসনিক সভায় ‘গাছ কাটা’ সংক্রান্ত একটি অভিযোগে তাঁকে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তীব্র ভর্ৎসনা করে বলেছিলেন, “উত্তরা আমি তোমাকে এক মাস সময় দিচ্ছি….।”

thebengalpost.net
মনোনয়ন জমা কণিকা মান্ডির :

অন্যদিকে, দল প্রার্থী না করায় নির্দল হিসেবেই বুধবার মনোনয়ন জমা দিয়েছেন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের খাদ্য কর্মাধ্যক্ষ কণিকা মান্ডি। তিনি দলের সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ এবং হতাশ। ডেবরা থেকে দল এবার প্রার্থী করেছে প্রাক্তন দুই বিধায়ক সেলিমা খাতুন ও রাধাকান্ত মাইতিকে। কণিকা যে আসন থেকে দাঁড়াবেন ভেবেছিলেন, ডেবরার সেই ৩১নং আসন থেকে দল এবার প্রার্থী করেছে শান্তি টুডুকে। কণিকার দাবি এলাকাবাসী তাঁকেই চেয়েছিলেন। তাই, নির্দল হিসেবেই তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে জানিয়েছেন। কণিকা ছাড়াও জেলা পরিষদের কর্মদক্ষদের মধ্যে এবার টিকিট পাননি শৈবাল গিরি, জারিনা ইয়াসমিন এবং নেপাল সিংহ। তবে, নেপাল শালবনী পঞ্চায়েত সমিতি থেকে প্রার্থী হয়েছেন। এবার তিনি শালবনী পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি হতে পারেন বলে দলের একটি সূত্রে খবর। তাঁর ছেলে সন্দীপ সিংহ দলের মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলা যুব তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি। তিনি শালবনী পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষও ছিলেন। দল এবারও তাঁকে জেলা পরিষদ আসনে চেয়েছিল বলে তাঁর অনুগামীদের দাবি। তবে, দলীয় অনুশাসন মেনে সন্দীপ প্রথম থেকেই তাতে সায় দেননি! সন্দীপ অবশ্য জানান, “আমি সংগঠনের কাজ আরো মন দিয়ে করতে চাই।” বিভিন্ন কারণে দলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করায়, বিদ্যুৎ কর্মাধ্যক্ষ শৈবালের টিকিট মেলেনি বলে তাঁর অনুগামীদের দাবি।

কর্মাধ্যক্ষদের মধ্যে এবারও টিকিট পেয়েছেন দাসপুরের বর্ষীয়ান নেতা তথা জনস্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ শ্যামপদ পাত্র; পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ নির্মল ঘোষ, শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ মামনি মান্ডি, শিশু ও নারী উন্নয়ন কর্মাধ্যক্ষ প্রতিভা মাইতি এবং কৃষি কর্মাধ্যক্ষ চন্দন সাহা। খড়্গপুরের বাসিন্দা হলেও নির্মল ঘোষ এবার গড়বেতা-৩ নং ব্লক থেকে প্রার্থী হয়েছেন। শালবনীর বিধায়ক তথা প্রতিমন্ত্রী শ্রীকান্ত মাহাত’র স্ত্রী অঞ্জনা মাহাতও এবার গড়বেতা ৩ নম্বর ব্লক থেকে জেলা পরিষদ আসনের টিকিট পেয়েছেন। গতবার তিনি শালবনীর একটি আসন থেকে জয়ী হয়েছিলেন। শালবনীর তিনজন প্রার্থীই এবার নবীন। তাঁরা হলেন যথাক্রমে গৌতম মাহাতো, জ্যোতিপপ্রসাদ মাহাতো ও উষা কুন্ডু। গৌতম ৫ নম্বর অঞ্চল তৃণমূলের সভাপতি ছিলেন। একসময় ব্লক তৃণমূলের সহ-সভাপতি ছিলেন জ্যোতিপপ্রসাদ মাহাতো। ঊষা কুন্ডু পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ এবং ব্লক মহিলা তৃণমূলের সভানেত্রী ছিলেন। যদিও, বৃহস্পতিবার বিকেলের খবর অনুযায়ী, ঊষা কুন্ডু এসএসকে’র কর্মী হওয়ায় তাঁর প্রার্থীপদ বাতিল হতে পারে, এমন আশঙ্কা করে শালবনী ব্লক তৃণমূলের তরফে পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ নিবেদিতা ঘোষকেও নমিনেশন করানো হয়েছে জেলা পরিষদ আসনে। কেশিয়াড়ি থেকে প্রার্থী হয়েছেন দলের মহিলা তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদিকা কল্পনা সিট। গড়বেতার একটি আসন থেকে প্রার্থী হয়েছেন শিক্ষক নেতা শান্তনু দে। কেশপুর থেকে এবার জেলা পরিষদ আসনে প্রার্থী হয়েছেন একসময়ের পোড়খাওয়া তৃণমূল নেতা মহম্মদ রফিক। কেশপুরের অন্য একটি জেলা পরিষদ আসনে শ্যামল আচার্যকে প্রার্থী করা হয়েছে। দলের ঘাটাল সাংগঠনিক জেলা তৃণমূলের সভাপতি আশিস হুদাইত-ও এবার জেলা পরিষদের প্রার্থী হয়েছেন। অপরদিকে, মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলা শ্রমিক ইউনিয়নের (INTTUC) সভাপতি গোপাল খাটুয়া-কেও এবার প্রার্থী করেছে দল। ঘাটালের প্রাক্তন বিধায়ক শঙ্কর দলুই-কেও এবার জেলা পরিষদে টিকিট দিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস।

thebengalpost.net
উত্তরা-অজিতেই ফের ভরসা দলের: