দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৯ ফেব্রুয়ারি: সোমবার (১০ জানুয়ারি)-ই ছিল মাধ্যমিকের প্রথম পরীক্ষা। তার মাত্র দু’দিন আগে (শনিবার) মেধাবী ছাত্রীর অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়ায় পশ্চিম মেদিনীপুরে। শোকস্তব্ধ পরিবার-পরিজন থেকে স্কুলের শিক্ষিকারা! মৃত ছাত্রীর নাম অনন্যা দাস (১৬)। বাড়ি পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ডেবরা ব্লকের ভোগপুর এলাকায়। অনন্যা বালিচক গার্লস হাইস্কুলের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী বলে জানা গেছে। পড়াশোনায় সে অত্যন্ত ভালো ছিল বলে জানিয়েছেন স্কুলের শিক্ষিকারা। শুধু পড়াশোনাই নয়, অনন্যার আরও অনেক গুণ ছিল বলে জানান তাঁরা। প্রধান শিক্ষিকা ইলোরা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ও আমাদের খুব প্রিয় ছাত্রী ছিল। খুব ভালো নাচ করত। পড়াশোনায় তো ভালো ছিলোই। যদিও, সেটাই আমার কাছে একমাত্র বিচার্য বিষয় নয়! একটা ভালো মেয়েকে আমরা হারালাম…!”

thebengalpost.net
মর্মান্তিক ঘটনা ডেবরা থানা এলাকায়:

thebengalpost.net
বিজ্ঞাপন (Advertisement):

এরপরই গলা ধরে আসে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বালিচক গার্লস হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষিকার। হবে নাই বা কেন! সন্তামসম প্রিয় ছাত্রীকে যে এভাবে হারাতে হবে, তা ঘুনাক্ষরেও ভাবেননি তাঁরা। জানা যায়, শনিবার সকালেও ভাইয়ের সাথে বাজারে গিয়েছিল অনন্যা। দুপুরের দিকে বাড়ির তিন তলার একটি রুমে দিদিকে ঝুলন্ত অবস্থায় প্রথম দেখতে পায় ভাই (সপ্তম শ্রেণির ছাত্র)-ই। এরপরই সে বাড়ির লোকজনদের জানালে তাঁরা দ্রুত দেহ উদ্ধার করে স্থানীয় ডেবরা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা মৃত বলে ঘোষণা করেন। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, আজ, রবিবার দেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হবে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে। পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, মানসিক আবসাদের কারণে আত্মহত্যা করেছে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী অনন্যা। জেলা পুলিশের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, “একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে ঘটনার তদন্ত শুরু করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট হাতে পেলে আত্মহত্যার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে।”

অন্যদিকে, অনন্যার পরিবার সূত্রে জানা গেছে, মাসখানেক আগে অনন্যার অ্যাপেন্ডিক্স অস্ত্রপচার হয়। এর ফলে পড়াশোনার অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে বলে মনে করতে শুরু করে! আশানুরূপ ফলাফল নাও হতে পারে, এমনটা আশঙ্কা করেই অনন্যা এই কাণ্ড ঘটিয়েছে বলে তার এক আত্মীয় শনিবার দুপুরে জানিয়েছেন। টেস্ট পরীক্ষায় অনন্যা ৮০ শতাংশের বেশি নম্বরও পায়। গ্রামবাসীদের মধ্যে কেউ কেউ জানিয়েছেন, “ও অত্যন্ত শান্ত ও মিষ্টি স্বভাবের মেয়ে ছিল। নিশ্চয়ই কোনও কারণে মনে খুব আঘাত পেয়েছে!” বালিচক গার্লস হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষিকা ইলোরা বন্দোপাধ্যায় কান্না ভেজা কন্ঠে বলেন, “এখন মনে হচ্ছে আমরাও তো ব্যর্থ! কি শিক্ষা দিলাম ওকে! এতবড় একটা জীবন। এইটুকু বয়সে এই ভাবনাচিন্তা এলো কি করে, ফুলের মতো মিষ্টি মেয়েটার! কোন পথে যাচ্ছে আমাদের এই সমাজ? এই দায় তো আমাদের সকলের!”

thebengalpost.net
ভেঙে পড়েছেন স্কুলের শিক্ষিকারা: