দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৩১ মার্চ: আগের তুলনায় অনেকটাই ভালো আছেন নাসরিন খাতুন। খুশির ঈদে এটুকুই স্বস্তি পরিবারে। তবে, মনখারাপও আছে। প্রায় তিন মাস হতে চললো, নাসরিন এখনও ছাড়া পেলেন না কলকাতার এসএসকেএম (পিজি) হাসপাতাল থেকে। জন্মের পর থেকে মায়ের কোল কিংবা বুকের দুধ কিছুই পায়নি তাঁর সদ্যজাত শিশুকন্যা। পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশপুরের বাসিন্দা স্বামী সেলিম খান সহ পরিবারের সদস্যরা খুব আশা করেছিলেন, অন্তত ইদের আগে সুস্থ হয়ে ঘরে ফিরবে নাসরিন। সেই আশা পূরণ হওয়ার পরিবর্তে, মাসখানেক আগেও চরম দুশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছিল পরিবার। হঠাৎ করেই ফের শারীরিক অবস্থার অবনতি হয় নাসরিনের! তবে, প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়েছেন এসএসকেএম হাসপাতালের চিকিৎসকেরা। আর তাতেই কিছুটা সুস্থ হয়ে উঠেছে নাসরিন। দিনদশেক হল জেনারেল বেডে দেওয়া হয়েছে তাঁকে। সব ধরনের খাবারও দেওয়া হচ্ছে। তবে, চলছে ফিজিওথেরাপি এবং প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র।

সেলিমের জামাইবাবু ইনসান আলি সোমবার সকালে জানান, “আমি আর ওর (নাসরিনের) স্বামী সেলিম শনিবারই কলকাতা থেকে ফিরেছি। এখন অনেকটাই দুশ্চিন্তামুক্ত আমরা। কথা বলছে। হাঁটতেও পারছে। আগে বাইরের খাবার খেলে বমি হয়ে যেত। সপ্তাহখানেক হল সব ধরনের খাবারই ওকে দেওয়া হচ্ছে।” প্রসঙ্গত, গত ৮ জানুয়ারি (বুধবার) মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের ‘মাতৃমা’ বিভাগে সিজারের পরই অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন পাঁচ প্রসূতি। ১০ জানুয়ারি (শুক্রবার) ভোরে মৃত্যু হয় গড়বেতার মামনি রুইদাসের। কেশপুরের নাসরিন খাতুন ও মিনারা বিবি এবং শালবনীর মাম্পি সিং-কে ১২ জানুয়ারি (রবিবার) রাতে ‘গ্রিন করিডর’ করে কলকাতার এসএসকেএমে স্থানান্তরিত করা হয়। একে একে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছে মিনারা ও মাম্পি। স্যালাইন কাণ্ডে সব থেকে সংকটজনক অবস্থায় থাকা নাসরিনের লড়াই জারি ছিল। অবশষে প্রায় আড়াই মাস পর কিছুটা সুস্থ হয়ে উঠেছে কেশপুর ব্লকের ন্যাড়াদেউলের গৃহবধূ নাসরিন খাতুন। ইদের আনন্দে এটুকুই স্বস্তির ছোঁয়া পরিবারে।
সোমবার সকালে ইদের নামাজপাঠ শেষে তাঁর স্বামী সেলিম বলেন, “বাড়িতে আমাদের সদ্যজাত কন্যা লড়াই করেই বড় হচ্ছে। মাঝখানে আমার বাবা (আনোয়ার খান)-ও খুব অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। তাঁকেও মেদিনীপুর মেডিক্যাল থেকে এসএসকেএমে নিয়ে যাই। আর সেই সময়ই নাসরিনের শারীরিক অবস্থার হঠাৎ করেই অবনতি হয়। সবমিলিয়ে সে যে কি পরিস্থিতি গেল ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত! অবশেষে গত ৭-৮ দিন হলো ভালো আছে নাসরিন। আল্লাহ ওকে সুস্থ করে আমার মেয়ের কাছে তাড়াতাড়ি নিয়ে এসো! এটুকুই দোয়া করছি।” সেলিমের এক দিদি আছেন রবিনা ইয়াসমিন। রবিনার স্বামী, পেশায় ব্যবসায়ী ইনসান আলি বলেন, “বছর দেড়েক হল ওদের বিয়ে হয়েছে। গত বছর ইদের সময় নাসরিন আর সেলিমকে নিয়ে আমরা দীঘা গিয়েছিলাম। খুব আনন্দ করেছিলাম। এবার শুধু সেই দিনগুলোর কথাই মনে পড়ছে! আশা করছি আর এক-দু’সপ্তাহের মধ্যেই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরবে নাসরিন। আল্লাহর কাছে আজও তো সেই দোয়াই করলাম!”