দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১১ জুলাই: ইচ্ছে করলেই বাড়িতে আড়ম্বরের সাথে, হইহুল্লোড় করে ছেলে-মেয়ের জন্মদিন পালন করতে পারতেন। তবে, শিক্ষক হিসেবে সমাজের প্রতি একটা বার্তা দিতে চেয়েছিলেন। সেই সঙ্গে ছেলেমেয়েদেরও এখন থেকেই পরিবেশপ্রেম এবং মানবধর্ম পালনের বিষয়ে সচেতন করা উচিত বলেও মনে করেছিলেন। আর সেজন্যই জঙ্গলমহল পশ্চিম মেদিনীপুরের গড়বেতার বাসিন্দা, পেশায় শিক্ষক শান্তনু দে নিজের ছেলেমেয়ের জন্মদিন পালন করার জন্য বেছে নিয়েছিলেন একটি প্রতিবন্ধী স্কুলকে (বা, বিশেষভাবে সক্ষমদের একটি স্কুলকে)। বুধবার (১১ জুলাই) তাই গড়বেতার উপকন্ঠে সরকার অনুমোদিত এবং বেসরকারি উদ্যোগে পরিচালিত ‘মা সর্বমঙ্গলা প্রতিবন্ধী পুনর্বাসন কেন্দ্রে’ গিয়ে ছেলে অরণ্য এবং মেয়ে অঙ্কিতার জন্মদিন উদযাপন করেন তিনি। দৃষ্টি ও শ্রবণ প্রতিবন্ধকতার শিকার ২০ জন ছাত্র-ছাত্রীর সঙ্গে ছেলে অরণ্যের দশম এবং মেয়ে অঙ্কিতার ১৬-তম জন্মদিন পালন করেন শিক্ষক শান্তনু দে সহ তাঁর পরিবারের সদস্যরা। কেকে কেটে, বিশেষভাবে সক্ষম ছেলেমেয়েদের হাতে উপহার তুলে দিয়ে এবং তাদের দুপুরের খাবার খাইয়ে জন্মদিনের আনন্দ ভাগ করে নেন ‘দে পরিবার’-র সদস্যরা।

thebengalpost.net
প্রতিবন্ধী স্কুলে:

শুধু তাই নয়, বিশ্ব উষ্ণায়নের কথা মাথায় রেখে এবং সবুজায়নের বার্তা দিতে পুনর্বাসন কেন্দ্রের সুবিশাল ক্যাম্পাসের আশেপাশে চারাগাছ রোপনও করা হয়। এছাড়াও, ঠিক পাশেই অবস্থিত সিলভার জুবিলি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসেও বৃক্ষজাতীয় ১০টি চারাগাছ রোপন করা হয়। শুধু গাছ লাগানোই নয়, প্রতিটি গাছের দেখভাল করার দায়িত্বও নেন শান্তনু ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা। শান্তনু বলেন, “গত ৭ জুলাই ছিল আমার ছেলে অরণ্যর ১০ম জন্মদিন। আর বুধবার (১০ জুলাই) ছিল মেয়ে অঙ্কিতার ১৬-তম জন্মদিন। পরিবেশ ও সমাজের প্রতি ছোট থেকেই ওদের সচেতন করে তুলতে এবং মানুষ হয়ে মানুষের পাশে থাকার শিক্ষা দিতেই ওদের জন্মদিন এভাবে পালন করার উদ্যোগ নিই। জন্ম থেকেই যারা প্রতিবন্ধকতার সঙ্গে লড়াই করে বড় হচ্ছে, তাদের উদ্দেশ্যে একটু ভালোবাসার হাত বাড়িয়ে দিতেই আমরা বেছে নিয়েছিলাম বিশেষভাবে সক্ষমদের জন্য প্রতিষ্ঠিত এই স্কুলটিকে।” ওই স্কুলের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা তথা প্রধান শিক্ষক বিশ্বজিৎ মাইতি বলেন, “এই ধরনের উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাতেই হয়। একইসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আমাদের আবেদন, তাঁর উদ্যোগেই ২০১৪ সালে এই স্কুল অনুমোদন লাভ করে। কিন্তু, সুবিশাল ক্যাম্পাস থাকা সত্ত্বেও, শুধুমাত্র সরকারি উদ্যোগ বা সাহায্যের অভাবে একপ্রকার ধুঁকছে,আবাসিক এই স্কুল। শিক্ষকরা স্বেচ্ছাশ্রম দিয়ে চলেছেন বছরের পর বছর ধরে। যদি, জেলা প্রশাসনের তরফে একটু দায়িত্ব নেওয়া হয়, তাহলে এই স্কুল ফুলে-ফলে বিকশিত হতে পারে!”

thebengalpost.net
বৃক্ষরোপণ:

অপরদিকে, সবুজায়ন ছাড়া যে আগামীদিনে মানবসভ্যতার বুকে আরো ভয়ংকর দিন নেমে আসতে চলেছে, তা নিয়ে পরিবেশবিদ থেকে বিজ্ঞানীরা একমত। আর তাই অল্প বয়স থেকেই নিজের সন্তানদের সবুজর গুরুত্ব বোঝাতে চারা গাছ রোপনের উদ্যোগও নেন পেশায় শিক্ষক এবং পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের অন্যতম সদস্য শান্তনু দে। বুধবার (১০ জুলাই) শান্তনু বলেন, “ছেলে অরণ্য-কে অরণ্যের গুরুত্ব বোঝাতেই ওর জন্মদিনে (৭ জুলাই), ওর হাত দিয়েই সিলভার জুবলি প্রাথমিক বিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ১০টি চারা গাছ রোপন করার উদ্যোগ নিই। আমাদের বাড়ি যেহেতু এই স্কুলের ঠিক পেছেনেই। এই গাছগুলির যত্ন ও দেখাশোনার দায়িত্বও ওকেই নিতে বলেছি। রবিবার (৭ জুলাই) বিকেল থেকেই দেখছি ওর দিদিদের সঙ্গে নিয়ে গাছে জল দিতে চলে আসছে! স্বাভাবিকভাবেই আমাদেরও খুব ভাল লাগছে।” অনেকেই মনে করিয়ে দেন, ২০২৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে গড়বেতা থেকে জেলা পরিষদ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা শান্তনু অঙ্গীকার করেছিলেন, “যত ভোটে জিতব, এলাকায় ততগুলি গাছ লাগাব।” শিক্ষক নেতা শান্তনু প্রায় ১৭ হাজার ভোটে জয়ী হওয়ার পর গড়বেতা জুড়ে চারাগাছ রোপনের কাজ শুরুও করে দিয়েছেন গত বছর (২০২৩) জুলাই মাস থেকে। ইতিমধ্যেই প্রায় ৪-৫ হাজার চারাগাছ রোপন করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। আগামী সপ্তাহে অর্থাৎ অরণ্য সপ্তাহ বা বনমহোৎসবকে সামনে রেখে আরও কয়েক হাজার চারা গাছ তিনি রোপন করবেন বলেও জানিয়েছেন শিক্ষক, রাজনীতিবিদ ও সমাজকর্মী শান্তনু।

thebengalpost.net
অঙ্কিতার জন্মদিন পালন: