দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১২ ফেব্রুয়ারি: পাড়ার আপাত শান্ত, ভদ্র হাসিখুশি, পরোপকারী মেয়েটাই যে প্রতারণার এমন নিপুণ ‘শিল্প’ আয়ত্ত করে ফেলেছিল, তা ঘুণাক্ষরেও টের পাননি এলাকাবাসী! চাকরিস্থল থেকে বিয়ে- সবটাই ‘ভুয়ো’? এখনও মাথা চুলকোচ্ছেন পাড়ার কাকিমা, জ্যাঠিমা, দাদা, বৌদিরা! রবিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) প্রতারণার দায়ে মাত্র ২৫ বছর বয়সী শিক্ষিত তরুণী অঙ্কিতা সাহু-কে পুলিশ গ্রেফতার করার পর থেকে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার দাঁতন থানার গোপালবাড় গ্রামের এমাথা থেকে ওমাথা শুধু এই আলোচনাটাই চলছে। আর, এর পুরো গল্প অবশ্য ছোটোখাটো গোয়েন্দা সিনেমাকেও হার মানাবে! গ্রামের সাধারণ কৃষক পরিবারেই জন্ম অঙ্কিতার। পড়াশোনার সাথে সাথে, অতিমারীর সময় থেকে সমাজকর্মী হিসেবেও নাম কুড়িয়েছিল সে। তবে, গত কয়েক বছর ধরেই তার জীবন-যাপনে অস্বাভাবিক পরিবর্তন লক্ষ্য করতে থাকেন বাসিন্দারা। যদিও, তাতেও বিন্দুমাত্র সন্দেহের অবকাশ ছিল না! কারণ, নিজেকে পূর্ত দপ্তরের উচ্চপদস্থ ইঞ্জিনিয়ার হিসেবেই পরিচয় দিত অঙ্কিতা সাহু। এমনকী তার পরিবারের সদস্যরাও প্রতিবেশীদের সেকথাই বলত। রবিবার সেই অঙ্কিতাকেই দাঁতন থানার বাই পাটনা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

thebengalpost.net
অঙ্কিতা সাহু (ছবি- সংগৃহীত):

প্রসঙ্গত, বছর খানেক আগে অঙ্কিতার বিরুদ্ধে প্রথম অভিযোগ জমা পড়ে দাঁতন থানায়। পূর্ত দপ্তরে চাকরি দেওয়ার নাম করে পাঁচ লক্ষ টাকা আর্থিক প্রতারণার অভিযোগ করেন দাঁতনেরই বাসিন্দা অভিজিৎ জানা। অভিজিৎ বলেন, “অঙ্কিতা আমাদের পূর্ব পরিচিত ছিল। আমরা সবাই জানতাম ও পূর্ত দপ্তরে চাকরি করে। পাঁচ লক্ষ টাকা দিলে আমাকে আর আমার বোনকে পূর্ত দপ্তরে চাকরি করে দেবে বলে প্রতিশ্রুতি দেয়। সেই মতো টাকা দিই। কিন্তু যখন দেখি চাকরি হচ্ছে না, তখন আমি টাকা ফেরত চাই। যদিও সে অস্বীকার করতে থাকে। ঘুরিয়ে আমাদের হুমকি দেয়। আমরা পুলিশের দ্বারস্থ হই।” এরপরই ঘটনার তদন্তে নামে পুলিশ। দেখা যায়, এভাবে একাধিক প্রতারণার ঘটনায় জড়িত ওই যুবতী। নিজেকে কখনও পূর্ত দপ্তরের কর্মী, কখনও উচ্চপদস্থ পুলিশ আধিকারিকের স্ত্রী পরিচয় দিয়ে পশ্চিম মেদিনীপুরের বেলদা, কেশিয়াড়ি, সবং এলাকার বহু মানুষকে প্রতারিত করেছে অঙ্কিতা। প্রতারিতদের মধ্যে অন্যতম সবংয়ের বাসিন্দা প্রিয়াঙ্কা মণ্ডল। তিনি বলেন, “কয়েক বছর আগে আমার সঙ্গে ফেসবুকে আলাপ হয় অঙ্কিতার। তারপর থেকেই আমাদের বন্ধুত্ব গাঢ় হয়। নিজেকে পুলিস অফিসারের স্ত্রী বলেই পরিচয় দিত অঙ্কিতা। এরপর হঠাৎ একদিন ফোন করে কান্নাকাটি শুরু করে সে। স্বামীর হাতে গুলি লেগেছে, অপারেশন করতে হবে ধাপে ধাপে ২লক্ষ ৭৮ হাজার টাকা নেয় সে। যদিও পরে জানতে পারি আমি প্রতারণার স্বীকার হয়েছি।” একই অভিযোগ গৃহবধূ সুচিত্রা বিশিরও। তাঁর থেকেও পুলিশ অফিসারের স্ত্রী পরিচয় দিয়ে চাকরি দেওয়ার নাম করে টাকা নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ।

আর যে পুলিশ আধিকারিকের স্ত্রী বলে নিজেকে পরিচয় দিত অঙ্কিতা, বর্তমানে তিনি পুরুলিয়ায় কর্মরত। কোভিড (বা, অতিমারী) আসার আগে থেকে মোটামুটি ২০২২ সালের শেষ অবধি পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পুলিশের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন তিনি। অঙ্কিতার গ্রেফতারির পর রবিবার ফোনে তিনি জানান, “২০২২ সালের শেষের দিকে আমি যখন ট্রান্সফার হই, তখন জানতে পারি যে আমার নাম ভাঙিয়ে এক যুবতী এই প্রতারণার কাজ করছে। মেয়েটি ধরা পড়েছে। ঘটনার সঠিক তদন্ত হবে আশা করছি।” এলাকাবাসী থেকে থানায় অভিযোগকারীরা জানাচ্ছেন, অঙ্কিতা বলে বেড়াতো ২০২২ সালের জুলাই মাসে নাকি ওই পুলিশ অফিসারের সঙ্গে তার বিয়েও হয়ে গেছে। আর তা হাতেনাতে ‘প্রমাণ’ করার জন্য বিয়ের আমন্ত্রণ কার্ড থেকে শুরু করে রেজিস্ট্রি ম্যারেজ সার্টিফিকেটও ছাপিয়েছিল সে। বলাই বাহুল্য সবটাই ভুয়ো! ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে দাঁতন থানা তথা জেলা পুলিশ। রবিবার অঙ্কিত সাহু-কে আদালতে তুলে ৭ দিনের হেফাজতেও নিয়েছে পুলিশ। তবে সূত্রের খবর, এটা অঙ্কিতার একার কাজ নয়। এর পিছনে নিশ্চয়ই কোনও বড় চক্র রয়েছে! আপাতত তারই হদিস পেতে চাইছে পুলিশ।

thebengalpost.net
পুলিশের হেফাজতে অঙ্কিতা :