দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৮ সেপ্টেম্বর: “বঙ্গে বিজেপির শেষের শুরু”! তৃণমূলের এই কথাটাই কি আক্ষরিক অর্থে ফলে যেতে চলেছে? সাম্প্রতিক রাজনীতির গতি-প্রকৃতি অন্তত সেরকমই কিছু ইঙ্গিত করছে। বিজেপির জনপ্রিয় সাংসদ ও প্রাক্তন মন্ত্রী আজই তৃণমূলে যোগদান করেছেন। ৩১ জুলাই বলেছিলেন ‘রাজনীতি’ ছাড়ছেন, বাস্তবে তিনি ‘বিজেপি’ ছাড়লেন। বাংলায় ‘কাজ করার জন্য’ যোগ দিলেন শাসকদলে! তাঁকে সসম্মানে বরণ করে নেওয়াই শুধু নয়, আগামীদিনে বাংলায় ‘বড় দায়িত্ব’ দিতে চলেছে তৃণমূল! আর, এদিনই বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের ‘গড়’ হিসেবে পরিচিত রেলশহর খড়্গপুরে দাঁড়িয়ে প্রকারান্তরে তাঁর বিরোধিতা করলেন খড়্গপুর সদরের জনপ্রিয় বিধায়ক হিরন্ময় চট্টোপাধ্যায় (হিরণ)। অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, রেলের ইঞ্জিনিয়ার ও ঠিকাদারদের কাজের সমালোচনা করে “মানুষের পাশে থাকার” ইঙ্গিতপূর্ণ বার্তা দিলেন! বললেন, “ভারতীয় রেলের আমি সমালোচনা করবনা। দেশের সর্ববৃহৎ প্রতিষ্ঠান। রেলমন্ত্রীও অত্যন্ত সজ্জন ও ভালো মানুষ। তিনি আমাকে বলছেন, বাংলার জন্য ভালো কাজ করতে চান। কিন্তু, রেলের যে অফিসাররা এখানে ফুট ওভার ব্রিজের কাজ করাচ্ছেন শ্রমিকদের ন্যূনতম নিরাপত্তার ব্যবস্থা না করে, গরিব মানুষদের উচ্ছেদ করে, তার বিরোধিতা না করে পারছিনা! এখানে, রেলের বড় কাজ চলছে, অথচ কোন অফিসার বা ইঞ্জিনিয়ারদের দেখা নেই। শ্রমিকদের মাথায় হেলমেট নেই। অথচ প্রতিদিন নানা দুর্ঘটনা ঘটে চলেছে! কিছু দোকানদারদের উচ্ছেদ করা হয়েছে, কিছুদের রেখে দেওয়া হয়েছে! এইভাবে কি উন্নয়নের কাজ হয়? আমি খড়্গপুরের সকল মানুষের বিধায়ক। তাই, সকল মানুষের পাশে থাকা আমার কর্তব্য। মানুষের পাশে যারা থাকবে না, আগামী দিনে মানুষও তাদের পাশে থাকবে না!”

thebengalpost.net
শ্রমিকদের সঙ্গে বিজেপি বিধায়ক হিরন্ময় চট্টোপাধ্যায় :

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, দিন কয়েক আগেই রেলের কাজের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে গিয়েছিলেন মেদিনীপুরের সাংসদ দিলীপ ঘোষ। খড়্গপুর শহরে রেলের পক্ষ থেকে যে তিনটি ওভারব্রিজ করা হচ্ছে, তা পুজোর আগেই উদ্বোধন করার ইঙ্গিতও দিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। খড়্গপুর শাখার ডি এর এম’এর কাজে খুশি হয়ে তাঁর প্রশংসা করেছিলেন। শনিবার তাঁর ঠিক উল্টো সুরেই রেলের আধিকারিক ও ইঞ্জিনিয়ারদের কাজের সমালোচনা করে “সাধারণ মানুষের পাশে থাকার” বার্তা দিলেন বিজেপি বিধায়ক হিরণ্ময় চট্টোপাধ্যায়! তবে কি, সুকৌশলে রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের ‘বিরোধিতা’ করে তিনিও কোনো ইঙ্গিত দিতে চাইলেন, জল্পনা শুরু রাজনৈতিক মহলে! এ নিয়ে হিরণের প্রশংসা করে, বিজেপি-কে বিঁধতে ছাড়লেন না তৃণমূলের মেদিনীপুর জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা। তিনি বললেন, “হিরণ চট্টোপাধ্যায়ের কথা শুনে ভালো লাগলো। সত্যি কথা বলেছেন, মানুষের পাশে থাকার কথা বলেছেন! আর, তাঁর এই মানসিকতার সঙ্গে বিজেপি দল বা তাদের রাজ্য সভাপতির মিল হবেনা কোনও দিনই। সেজন্যই রেলের অন্যায় আর দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিয়ে চলেছেন মেদিনীপুরের সাংসদ। যাক ভালো লাগলো তাঁর দলেরই বিধায়ক অন্তত সত্যটা বুঝতে পারলেন এবং জনসমক্ষে তুলে ধরলেন। প্রাক্তন মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়র তৃণমূলে যোগদানের দিনই, খড়্গপুর সদরের বিধায়ক হিরন্ময় চট্টোপাধ্যায়ের এই মন্তব্য প্রমাণ করছে, আগামীদিনে ‌বাংলায় বিজেপির অস্তিত্ব বলে কিছু থাকবেনা!”