দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৩ ফেব্রুয়ারি: প্রার্থী ঘোষণার ঠিক কয়েক ঘণ্টা আগেই বিড়ম্বনায় পড়তে হল জেলা তৃণমূল কংগ্রেসকে! মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলার অন্তর্ভুক্ত খড়্গপুর পৌরসভায় ‘নীল সাদা’ কাগজে দলের ‘সম্ভাব্য প্রার্থী’র বিরুদ্ধে পোস্টার দিলেন ওয়ার্ডের বাসিন্দারা! পোস্টারে লেখা- “ভবানীপুরে নিজের ওয়ার্ডের লোককেই চাই- সৌজন্যে এলাকার অধিবাসীবৃন্দ।” বৃহস্পতিবার এই পোস্টারে খড়্গপুর পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ড ছয়লাপ হয়েছে। পোস্টার নিয়ে ধোঁয়াশা! জানা গেছে, নিজের গড় ২০ নং ওয়ার্ড এবার মহিলা সংরক্ষিত হওয়ায়, ৬ নং ওয়ার্ড থেকে এবার লড়াই করতে পারেন প্রাক্তন চেয়ারম্যান তথা বর্তমান পৌরপ্রশাসক মণ্ডলীর চেয়ারপারসন প্রদীপ সরকারের। সূত্রের খবর অনুযায়ী, সেটা অনুমান করেই বেশ কয়েক মাস আগে থেকে এই ওয়ার্ডের নানা কাজ কর্মে নিজেকে নিযুক্ত করেছিলেন প্রদীপ! কিন্তু, তা না পসন্দ এই এলাকার বিদায়ী কাউন্সিলর ও তাঁর অনুগামীদের। তাই, ওয়ার্ডের স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ জানাচ্ছেন, পরোক্ষে প্রদীপ-কে উদ্দেশ্য করে এই পোস্টার দিয়েছেন বিদায়ী কাউন্সিলর বাবু কুন্ডুর অনুগামীরাই। যা নিয়ে রীতিমতো চাপে প্রদীপ অনুগামীরা! তবে, শহর তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক অসিত বসাক জানান, “এই নোংরা রাজনীতি বিজেপি করছে।” বিজেপির অভিযোগ, “নীল সাদা কাগজে পোস্টার দেওয়া হয়েছে। আসলে প্রদীপ সরকার অন্য ওয়ার্ডের বাসিন্দা হয়ে, এই ওয়ার্ডে দাঁড়াতে চাইছেন, তাই তাঁর বিরুদ্ধে বিদায়ী কাউন্সিলর এর অনুগামীরা পোস্টার দিয়েছেন।” তবে, জেলা তৃণমূলের সভাপতি সুজয় হাজরা জানিয়েছেন, “প্রথমত তৃণমূল কংগ্রেসের এখনও প্রার্থী তালিকা ঘোষণাই হয়নি, কাজেই কার বিরুদ্ধে পোস্টার বা কার স্বপক্ষে পোস্টার সেটাই বোঝা গেলনা! তবে, অন্য ওয়ার্ডের বাসিন্দার কথা যদি বলা হয়, তাহলে তো বিজেপি বিধায়ক হিরন্ময় চট্টোপাধ্যায় কলকাতায় থাকেন; তিনি তো খড়্গপুরে এসে দিব্যি বিধায়ক হয়েছেন! বোঝাই যাচ্ছে, কারা এসব কাজ করিয়েছে।”

thebengalpost.net
খড়্গপুরের পোস্টার :

এদিকে, মেদিনীপুর শহরের ২ নং ওয়ার্ডেও এক তৃণমূল নেত্রীকে প্রার্থী উল্লেখ করে পোস্টার দিলেন কেউ বা কারা! যে নেত্রীর নামে এই পোস্টার পড়েছে তাঁর নাম মান্তু আহমেদ। প্রাক্তন এই প্রদেশ কংগ্রেস নেত্রী বিধানসভা নির্বাচনের পর তৃণমূল বিধায়ক জুন মালিয়া’র হাত ধরে তৃণমূলে যোগদান করেছেন। তিনি ওই ২ নং ওয়ার্ডেরই বাসিন্দা। তাঁর নাম দিয়ে বৃহস্পতিবার সকালে এলাকায় দেখা গেছে বেশ কিছু পোস্টার, যেখানে লেখা- “তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী মান্তু আহমেদ-কে এই চিহ্নে (জোড়াফুলের ছবি) ভোট দিন।” তবে, এ নিয়ে মান্তু আহমেদকে জিজ্ঞেস করা হলে, তিনি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, “আমিও জানিনা কে বা কারা এই পোস্টার দিয়েছে! আমি দলীয় নেতৃত্বকে বিষয়টি জানিয়েছি।” তবে, একে গুরুত্ব দিতে রাজি নয় তৃণমূলের শহর বা জেলা নেতৃত্ব। শহর সভাপতি বিশ্বনাথ পান্ডব জানিয়েছেন, “আসলে নির্বাচন সামনে। একদিনের মধ্যে প্রার্থী তালিকাও ঘোষণা করা হবে। তার আগে বিচ্ছিন্ন এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে। রাজ্য নেতৃত্ব পরিষ্কার জানিয়েছে, এই ধরনের বিষয়গুলো উপেক্ষা করতে।” তবে, তৃণমূল নেতৃত্ব যাই বলুন না কেন, ওই ওয়ার্ডে প্রভাব আছে বিদায়ী কাউন্সিলর নির্মাল্য চক্রবর্তীর। তবে, মহিলা সংরক্ষিত হওয়ায় তিনি ওই ওয়ার্ডে দাঁড়াতে পারবেন না! তাঁর স্ত্রী’র ওই ওয়ার্ডে দাঁড়ানো নিয়ে জল্পনা আছে, আর তার মধ্যেই বিশেষ এই পোস্টারে কি ইঙ্গিত দেওয়া হচ্ছে, তা বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে না সচেতন রাজনৈতিক মহলের। এ নিয়ে জেলা তৃণমূলের সভাপতি সুজয় হাজরা যদিও জানিয়েছেন, “এই ধরনের কাজ তৃণমূল কর্মীদের হতে পারে না। কারণ, তাঁরা জানেন, এগুলি দলীয় শৃংখলার বাইরে। তাই, বিভ্রান্তি ছড়াতে বিরোধীরাই এইসব কাজকর্ম করছেন।”

thebengalpost.net
মেদিনীপুরের পোস্টার :