দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৩ মার্চ: ভরদুপুরে হঠাৎই অ্যাম্বুলেন্সের সাইরেনে কেঁপে উঠল এলাকা! বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতই, বিনা ঝড়ে উল্টে গেল একের পর এক বড় বড় গাছ। পড়ে আছেন রক্তাক্ত সব লোকজন। বড় বড় সব ইলেকট্রিক ট্রি-কাটার (গাছ কাটার মেশিন) নিয়ে হাজির হচ্ছেন এনডিআরএফ (NDRF) আর এসডিআরএফ (SDRF) এর কর্মীরা। উদ্ধার করে লোকজনদের তুলে দিচ্ছেন অ্যম্বুলেন্সে। খাঁকি পোশাক পরে হাজির দমকল কর্মীরাও। আছেন সিভিল ডিফেন্স থেকে বিভিন্ন দপ্তরের সব লোকজন। ছোটাছুটি করছেন তাঁরা। অন্যদিকে আবার অ্যাম্বুলেন্স থেকে আহত ও রক্তাক্ত লোকজনদের নামাতে তৎপর স্বাস্থ্যকর্মীরা। একের পর এক স্ট্রেচার নিয়ে হাজির হচ্ছেন তাঁরা। ছুটে আসছেন ডাক্তারদের দল। প্রথমটায় বুক ধড়ফড় করে উঠলে, একটু পরে মাথায় হাত দিয়ে ভাবতে লাগলেন, ‘হচ্ছেটা কী?” জানা গেল, ঘূর্ণিঝড় থেকে শুরু করে কালবৈশাখীর মোকাবিলা করতে, মকড্রিলে নেমেছেন প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মীরা। বৃহস্পতিবার পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার সবং এবং মোহনপুর ব্লকে অনুষ্ঠিত হলো এই মকড্রিল বা মহড়া।
বড়সড় দুর্যোগ আসার আগেই এই আয়োজন বলে বৃহস্পতিবার দুই ব্লকের বিডিও (BDO)-রা জানিয়েছেন। সবংয়ে বিডিও অফিসের সামনে এবং মোহনপুরে মোহনপুর বাজার সংলগ্ন একটি মাঠে এদিনের মকড্রিল (Mock drill) বা মহড়ার আয়োজন করা হয়। প্রসঙ্গত, মার্চ এপ্রিল তথা চৈত্র বৈশাখ জ্যৈষ্ঠ মাস থেকেই বাংলার আকাশে প্রায়ই দুর্যোগের ঘনঘটা দেখা যায়। পুজোর আগে অর্থাৎ সেপ্টেম্বর-অক্টোবর পর্যন্ত লেগে থাকে নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ। কখনো কালবৈশাখী, কখনও সাইক্লোন আবার কখনও বন্যার মোকাবিলা করতে হয় প্রশাসনের বিভিন্ন জরুরি দপ্তরের কর্মী-আধিকারিক থেকে বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তরের কর্মীদের। তাঁদের সহযোগিতা করতে নামতে হয় প্রত্যেক জেলায় থাকা কেন্দ্রীয় বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তর অর্থাৎ এনডিআরএফ এর টিমকেও। রাজ্য সরকারের এসডিআরএফ টিম থেকে শুরু করে পুলিশ, দমকল, বিদ্যুৎ, খাদ্য, স্বাস্থ্য প্রভৃতি দপ্তরের কর্মী ও আধিকারিকদেরও বিপর্যয় মোকাবিলায় সরাসরি নামতে হয় নানাভাবে। তাই, ঝড় আসার আগেই ‘ঝড় মোকাবিলা’ করার জন্য বৃহস্পতিবার খড়্গপুর মহকুমার এই দুই ব্লকে মকড্রিল বা মহড়ার আয়োজন করে, বিভিন্ন দপ্তরের কর্মী ও আধিকারিকরা নিজেদের প্রস্তুতি খতিয়ে দেখলেন।
দুই ব্লকের বিডিও (BDO) যথাক্রমে রাজীব দত্ত চৌধুরী এবং তুহিন শুভ্র মহান্তি এদিন জানালেন, আম্ফান, ইয়সের মতো ঘূর্ণিঝড় থেকে শুরু করে কালবৈশাখী ও বন্যার মোকাবিলা করতে হয় প্রশাসনের বিভিন্ন বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তর, স্বাস্থ্য দপ্তর সহ বিভিন্ন জরুরী পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত দপ্তর গুলিকে। কখনও ঝড়ে বিদ্যুতের খুঁটি পড়ে যায়, কখনও গাছ। নানাভাবে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটে। বিপদগ্রস্ত মানুষকে দ্রুততার সঙ্গে উদ্ধার করে হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়াই লক্ষ্য থাকে। সেই বিষয়ে এদিন NDRF ও SDRF যৌথভাবে যে মহড়া করে, তাতে জরুরী পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত সমস্ত বিভাগগুলিই এদিন অংশগ্রহণ করে। এদিনের মকড্রিল বা মহড়া সফল হয় বলেও জানিয়েছেন তিনি।