দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, খড়্গপুর, ৪ ডিসেম্বর: বদলেছে সময়। পরিস্থিতিরও ‘পরিবর্তন’ হয়েছে। দলীয়-ভান্ডারের দশা কার্যত ‘ভাঁড়ে মা ভবানী’! তার মধ্যেই আয়োজন করতে হবে ২৫তম জেলা সম্মেলন। দু’দিন ব্যাপী (১২ ও ১৩ জানুয়ারি) পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্মেলন সফল করতে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন। আর, ভান্ডার ভরাতে সিপিআইএমের ভরসা এবার ভাঁড়! কৌটো ছেড়ে এবার তাঁরা পার্টি-কর্মীদের লক্ষ্মীর ভান্ডারের উপরই ভরসা রাখতে চাইছেন। আগামী ১২ ও ১৩ জানুয়ারি, খড়্গপুর শহরের নিউ সেটেলমেন্ট এলাকার অন্ধ্র হাই স্কুলে অনুষ্ঠিত হবে সিপিআইএমের ২৫তম জেলা সম্মেলন। তার আগে খড়্গপুর শহর ও গ্রামীণ এলাকার প্রায় ৬ হাজার পার্টি কর্মী ও সক্রিয় সমর্থকদের বাড়িতে বাড়িতে পৌঁছে যাচ্ছে প্লাস্টিকের ভাঁড়।
নিন্দুকেরা বলছেন, এমনিতেই ‘রেল শহর’ খড়গপুরে সিপিআইএম বরাবরই দুর্বল। বাম জমানার মধ্য গগনেও এখানে সিপিআইএম কোনোদিন জিততে পারে নি। তাই এই ‘ভাঁড়ে মা ভবানী’-র দশা থেকে বেরিয়ে, জেলা সম্মেলন আয়োজনের জন্য ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’-র উপরই ভরসা করতে চাইছেন রেল শহরের কমরেডরা। রেলশহর খড়গপুরের প্রায় ৪ হাজার এবং গ্ৰামীণ এলাকার প্রায় ২ হাজার পার্টি কর্মী ও সক্রিয় সমর্থকদের বাড়িতে বাড়িতে তাই প্লাস্টিকের ভাঁড় পৌঁছে দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে ইতিমধ্যেই। নভেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে ভাঁড় পৌঁছে দেওয়ার কাজ শুরু করেছেন পার্টি কমরেডরা। সেই কাজ প্রায় শেষের পথে! দলীয় নেতৃত্বের তরফে জানানো হয়েছে, ক্ষমতা অনুযায়ী পার্টি কর্মী-সমর্থকেরা জানুয়ারি মাসের ১০ তারিখ অবধি কিছু কিছু অর্থ সঞ্চয় করবেন ওই ভাঁড়ে। আগামী ১২ ও ১৩ জানুয়ারি নিউ সেটেলমেন্ট এলাকার অন্ধ্র হাই স্কুলে অনুষ্ঠিত হবে জেলা সম্মেলন। তার আগে পার্টি কর্মী ও সমর্থকদের বাড়ি থেকে ওই ভাঁড়গুলি সংগ্রহ করা হবে।
সিপিআইএম খড়্গপুর শহর দক্ষিণ এরিয়া কমিটির সম্পাদক অমিতাভ দাস বলেন, “সিপিআইএম দরিদ্র, শ্রমিক, মেহনতী মানুষের দল। আমাদের পার্টি বরাবরই সদস্য-সমর্থকদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহের মধ্য দিয়েই যেকোন কর্মসূচি সফল করে থাকে। এবারও, আমরা কৌটো নিয়ে গণ অর্থ সংগ্রহ করছি। তবে, একটি জেলা সম্মেলন করতে অনেক অর্থের প্রয়োজন হয়। তাই আমাদের দলের যাঁরা সক্রিয় কর্মী সমর্থক তথা বিপদ-আপদের সঙ্গী তাঁদের বাড়িতে আমরা একটি করে প্লাস্টিকের ভাঁড়ে পৌঁছে দিয়েছি। আগামী ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত তাঁরা যেমন পারবেন, নিজেদের ক্ষমতা অনুযায়ী অর্থ সঞ্চয় করে রাখবেন। আমরা ১০ জানুয়ারি তাঁদের কাছ থেকে সেই অর্থ সংগ্রহ করব।” যদিও, বিষয়টিকে কটাক্ষ করতে ছাড়েন তৃণমূল, বিজেপি! খড়্গপুর শহর মহিলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভানেত্রী তথা পৌরপ্রধান কল্যাণী ঘোষ বলেন, “জেলা সম্মেলন সফল করতে শেষ পর্যন্ত দিদির লক্ষ্মীর ভান্ডারের উপরই ভরসা রাখতে হল সিপিআইএম-কে!” আর জেলা বিজেপি-র মুখপাত্র অরূপ দাসের কটাক্ষ, “আগে কৌটো নেড়ে লুট করত; আর এখন লুটের অস্ত্র হয়েছে লক্ষ্মীর ভান্ডার! ঠিক যেভাবে সাধারণ মানুষকে বোকা বানিয়ে তৃণমূল এই রাজ্যটাকে লুট করছে; সিপিআইএমও তাঁদের নিজস্ব কোটি কোটি টাকার কোষাগার ধ্বংস না করে, সাধারণ কর্মী-সমর্থকদের বাড়িতে ভাঁড় পাঠিয়ে তাঁদের সঞ্চিত ‘লক্ষ্মী’ লুট করতে চাইছে।”