দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম, ২ জুলাই: “কেউ কথা রাখেনি”র যুগে তাঁরা ব্যতিক্রমী হয়ে উঠলেন! জঙ্গলমহলের দুই ‘ভূমিপুত্র’ ও ‘ভূমিকন্যা’। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ডেবরার বিধায়ক তথা কারিগরী উন্নয়ন দপ্তরের স্বাধীন প্রতিমন্ত্রী হুমায়ূন কবীর এবং ঝাড়গ্রামের বিধায়ক তথা বনদপ্তরের প্রতিমন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদা। কথা রাখলেন। এলাকাবাসীর মনের মণিকোঠায় স্থান করে নিলেন। গত কয়েক দশক ধরে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ডেবরা ও সংলগ্ন এলাকার প্রায় ৫ লক্ষ বাসিন্দার দাবি ছিল, লোয়াদা ব্রিজ। বৃহস্পতিবার জরুরি ভিত্তিতে সেই কংক্রিটের তৈরি লোয়াদা সেতু আপাততো খুলে দেওয়া হলো অ্যাম্বুলেন্স ও জরুরি পরিষেবার জন্য। মন্ত্রী হুমায়ূন নিজে উপস্থিত থেকে জানালেন, “সেপ্টেম্বরের প্রথম দুই সপ্তাহেই ব্রিজের কাজ সম্পূর্ণ হয়ে যাবে। তার আগে শুধুমাত্র মোটর সাইকেল সহ ছোট গাড়ি এবং শুধুমাত্র অ্যাম্বুলেন্স চলাচল করতে পারবে।” আপ্লুত এলাকাবাসী! অন্যদিকে, জঙ্গলমহলের ‘বনফুল’ বীরবাহা ক্রমেই তাঁর সৌরভ ছড়িয়ে চলেছেন। ক্যানসার আক্রান্ত কিশোরের চিকিৎসার ব্যবস্থা করে ফের একবার এলাকাবাসীর ‘নয়নের মণি’ হয়ে উঠলেন তিনি।

thebengalpost.in
খুলে গেলো লোয়াদা সেতু :

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে ডেবরা ব্লকের একটা বিশাল অংশের মানুষের দাবি ছিল, ডেবরা ব্লকের লোয়াদাতে কংসাবতী নদীর ওপর একটি কংক্রিটের সেতু নির্মাণের জন্য। প্রায় দুই দেড় দশক আগে (১৪ বছর প্রায়), বাম আমলে সেই সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হলেও, জায়গা সংক্রান্ত সমস্যার কারণে সংযোগকারী রাস্তা তৈরি করা সম্ভব হয়নি। ফলে, দীর্ঘদিন ধরেই সেই সেতু নির্মাণের কাজ বন্ধ ছিল! সম্প্রতি, ২০২১ এর বিধানসভা নির্বাচনের আগে, ডেবরা বিধায়ক তথা বর্তমান রাজ্যের মন্ত্রী এলাকার মানুষকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ভোটে জয়লাভ করার পর তিনি অগ্রাধিকারের (ফার্স্ট প্রায়োরিটি) ভিত্তিতে ‘লোয়াদা ব্রিজ’ সাধারণ মানুষের জন্য খুলে দেবেন। আশ্বাস মতো, বৃহস্পতিবার (১ লা জুলাই) সেতু খুলে দেওয়া হলো ছোটো গাড়ি, অ্যাম্বুল্যান্স সহ জরুরি পরিষেবার জন্য। হুমায়ূন জানালেন, “আমি মন্ত্রী হওয়ার পর কথা দিয়েছিলাম ১ লা জুলাইয়ের মধ্যেই জরুরী ভিত্তিতে সেতু ব্যবহারের ব্যবস্থা করা হবে। কারণ বর্ষার মধ্যে মানুষের দুর্ভোগ হয়। সেই কারণেই, আপাতত সাইকেল, মোটরসাইকেল এবং অ্যাম্বুল্যান্সের জন্য লোয়াদা সেতু ব্যবহার করা যাবে। তবে, কোনোভাবেই ভারি গাড়ি নয়। আমরা ইঞ্জিনিয়ারদের সাথে কথা বলে নিশ্চিত হয়েছি সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যেই কাজ সম্পূর্ণ হয়ে যাবে। তখন বড় করে উদ্বোধন করা হবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুমতি নিয়ে। তার আগে ফেরি ব্যবস্থাও চালু থাকবে।” এলাকাবাসী তাঁদের অন্তরের অন্তর্স্থল থেকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তাঁদের ঘরের ছেলে তথা মন্ত্রী হুমায়ূন’কে।

thebengalpost.in
মন্ত্রী হুমায়ূন কবীরের সক্রিয় উদ্যোগ :

অন্যদিকে, নিজের প্রতিশ্রুতি পালন করলেন ঝাড়গ্রামের বিধায়ক তথা রাজ্যের বন প্রতিমন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদা’ও। ঝাড়গ্রামের এক ক্যানসার আক্রান্ত কিশোরের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছিলেন তিনি। সেই কথা মতো তার চিকিৎসায় এগিয়ে এলেন বীরবাহা। বৃহস্পতিবার নিজের উদ্যোগেই ওই কিশোরকে ঝাড়গ্রাম থেকে কলকাতার চিত্তরঞ্জন হাসপাতালে ভর্তি করালেন তিনি। অভিযোগ ছিলো, লালগড়ের সিজুয়া গ্রামের বাসিন্দা ক্যানসার আক্রান্ত ১৭ বছরের সুশান্ত বেজের চিকিৎসার ব্যবস্থা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েও রাখতে পারেননি সাংসদ কুনার হেমব্রম। তারপরই, বীরবাহা উদ্যোগ নিয়ে তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক ও প্রাক্তন সাংসদ কুনাল ঘোষের সাহায্য নিয়ে চিত্তরঞ্জন ক্যান্সার হাসপাতালে ওই কিশোরের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছেন গতকাল (বৃহস্পতিবার)। উল্লেখ্য যে, ওই কিশোরের ক্যানসার ধরা পড়ে চলতি বছরের গোড়ায়। সুশান্তের এ বার মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল। তার বাবা রঞ্জিৎ বেজ পেশায় চাষি। স্বাভাবিক ভাবেই ছেলের ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার খবর জানতে পেরে রঞ্জিতের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ে। রঞ্জিতের কথায়, “ছেলের ডান হাঁটুতে ব্যথা হত। ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার খবর জানতে পেরে মেদিনীপুরে চিকিৎসাও করানো হয়েছিল। পরে বেঙ্গালুরুতে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা শুরু হলেও অর্থের অভাবে বাড়ি ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছিলাম।” রঞ্জিৎ জানিয়েছেন, ছেলের চিকিৎসার জন্য বিষয়টি ঝাড়গ্রামের সাংসদ কুণার হেমব্রমকে জানালে, তিনি প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদীর দফতরে আবেদন করেন। কিন্তু, তা অনুমোদন হয়নি এখনও। এর মধ্যেই এগিয়ে এলেন বীরবাহা। সুশান্ত’কে সুস্থ করার লড়াইতে ঝাঁপিয়ে পড়লেন তিনি।

thebengalpost.in
মন্ত্রী বীরবাহার মানবিক উদ্যোগ :