দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৭ নভেম্বর: “সব অফিসারকে বরখাস্ত করে দেব। সিআইএসএফ দিয়ে কমিশনের দপ্তর সার্চ করাবো…আর একটা ব্যাপম কেলেঙ্কারি হতে দেবনা”! বুধবার প্রথমার্ধে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এমনই বেনোজির ভর্ৎসনার মুখে পড়তে হয় স্কুল সার্ভিস কমিশনের সচিবকে। এরপর, দুপুর ৩ টার মধ্যে ২৫ জন চাকরিপ্রার্থীর সমস্ত নথি নিয়ে ফের হাজির হতে বলা হয়েছিল স্কুল সার্ভিস কমিশনের সচিবকে। সেখানেই স্কুল সার্ভিস কমিশনের আইনজীবী সরাসরি নিজেদের ‘ভুল’ (পরোক্ষে বেআইনি নিয়োগের কথা) স্বীকার করে নেন! তবে, স্কুল সার্ভিস কমিশনের আইনজীবী বলেন, এই ২৫ জনকে সেন্ট্রাল এসএসসি বা রিজিওনাল এসএসসি নিয়োগপত্র দেয়নি। বিচারপতি তখনই বলেন, “তাহলে কোন দালাল টাকার বিনিময়ে এই নিয়োগপত্র দিয়েছে? এবং কত টাকার লেনদেন হয়েছে তা খুঁজে বের করতে হবে! আপনারা যে নিয়োগপত্র দেননি, তা হলফনামা আকারে আদালতকে জানাতে হবে”। এসএসসির আইনজীবী ‘বেগতিক’ বুঝতে পেরেই বলেন, সিবিআই তদন্ত না দিয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেওয়ার জন্য। তবে, বিচারপতি বলেন, “আগে হলফনামা দিন বৃহস্পতিবার।” এ নিয়ে মামলাকারীদের আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য আদালতকে জানান, “আমরা মাত্র ২৫ জনের তথ্য দিয়েছি। আরও ৫০০ জনের তথ্য ইতিমধ্যে আমাদের হাতে পৌঁছে গেছে। আরও আসছে।” বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় আপাতত এই ২৫ জনের বেতন বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, রাজ্যের সরকার পোষিত স্কুলে চতুর্থ শ্রেণির কর্মী নিয়োগে বেনজির অনিয়মে গতকালই (মঙ্গলবার) ‘বিস্মিত’ হয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট। প্যানেলের মেয়াদ সম্পূর্ণ হয়ে যাওয়ার পরও ২৫ জন চাকরিপ্রার্থী’কে নিয়মবহির্ভূতভাবে নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল স্কুল সার্ভিস কমিশনের নর্দান রিজিওনাল অফিসের বিরুদ্ধে। বুধবার মামলা উঠতেই প্রথমার্ধে স্কুল সার্ভিস কমিশনকে বেনজির ভর্ৎসনা করে আদালত। সিবিআই ও সিআইএসএফ তদন্তের হুমকি দেন। এরপরই, দ্বিতীয়ার্ধে কার্যত সমস্ত অভিযোগ স্বীকার করে নেন এসএসসির আইনজীবী। এরপরই, আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) তাদের হলফনামা আকারে সমস্ত কিছু জানানোর নির্দেশ দেন বিচারপতি। আগামীকাল দুপুর ২ টোয় এই মামলাটি পুনরায় উঠবে আদালতে। তবে, সাম্প্রতিক কালে এর আগে এ ধরনের ঘটনা বেনোজির বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক ও শিক্ষা মহল। বিরোধীরা রাজ্য সরকারকে তুলোধোনা করেছেন। আর, চাকরি প্রার্থীরা বলছেন, “সাম্প্রতিক অতীতে স্কুল সার্ভিস কমিশন যতগুলি নিয়োগ সম্পন্ন করেছে বা নিয়োগ চালাচ্ছে, সবকটিতেই এরকমই ‘দুর্নীতি’ হয়েছে! সেজন্যই বারবার নিয়োগ প্রক্রিয়া আদালতের জটে আটকে যাচ্ছে।”