Recruitment

SSC: চাকরি পেয়েছিলেন সৎভাবে, মামলা-মোকদ্দমায় জড়াতে চাননি কখনও! চাকরি ‘ফেরাতে’ কাগজপত্র নিয়ে মেদিনীপুর থেকে ছুটলেন শহিদ মিনারের উদ্দেশ্যে

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর ও কলকাতা, ২৩ এপ্রিল: গতকাল (২২ এপ্রিল)-ই কলকাতা হাইকোর্টের ‘বিশেষ’ ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশে একলপ্তে চাকরি হারিয়েছেন রাজ্যের প্রায় ২৩ হাজার শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী। ২০১৬ সালের SSC নিয়োগ ‘পুরোপুরি বাতিল’ করে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার ১৫ দিনের মধ্যে সম্পূর্ণ নতুনভাবে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করার নির্দেশও দিয়েছেন বিচারপতি দেবাংশু বসাক ও মহম্মদ সব্বার রশিদির ডিভিশন বেঞ্চ। আর এতেই যেন মাথায় বাজ ভেঙে পড়ে পশ্চিম মেদিনীপুর সহ বিভিন্ন জেলার হাজার হাজার ‘যোগ্য’ শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং শিক্ষাকর্মীদের! SSC-র মতোই তাঁদের দাবি, মাত্র ৫ হাজার শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল। কিন্তু, তাঁরা (প্রায় ১৮-১৯ হাজার) তো সৎভাবে, নিজেদের যোগ্যতার নিরিখে চাকরি পেয়েছিলেন! কেন তাঁদের চাকরি কেড়ে নেওয়া হল? অগ্যতা সমাজমাধ্যমে সোমবার (২২ এপ্রিল) সন্ধ্যা থেকে ঐক্যবদ্ধ হতে শুরু করেন রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের ‘যোগ্য’ শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীরা। মঙ্গলবার সাত সকালেই মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া থেকে তাঁরা ছুটে যান কলকাতার শহিদ মিনারের উদ্দেশ্যে। শহিদ মিনারের পাদদেশেই জমায়েত করেন তাঁরা। বিচারপতি দেবাংশু বসাকের ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করার সিদ্ধান্ত নেন এক ধাক্কায় চাকরি হারানো কয়েক হাজার শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং শিক্ষাকর্মীরা। বলাই বাহুল্য, এঁদের মধ্যে অনেকেই কখনও মামলা-মোকদ্দমায় জড়ানোর কথা স্বপ্নেও ভাবেননি!

শহিদ মিনারের তলায় জমায়েত:

এর মধ্যেই, মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) বিকেল নাগাদ চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষিকারা জানতে পারেন, OMR- এর পুনর্মূল্যায়ণ বা রি-ইভ্যালুয়েশেন নয়; সম্পূর্ণ নতুনভাবে চাকরির পরীক্ষা দিতে হবে। রায়ের ব্যাখ্যায় মঙ্গলবার এমনটাই জানিয়েছেন কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবীরা। আর তারপরই যেন লড়াইয়ের জেদটা আরো বেড়ে যায় সততা-র সঙ্গে চাকরি পাওয়া মেদিনীপুরের অতনু, বিপ্লব, মৌমিতা, প্রিয়াঙ্কা থেকে বর্ধমানের সুপ্রিয়া, সৌরভ, সুশান্তদের (সমস্ত নামই পরিবর্তিত)! প্রসঙ্গত, ২০১১ সালের বিজ্ঞপ্তিতে (12th RLST) প্রায় ৩০ হাজার শিক্ষক নিয়োগ হয়েছিল ২০১৩-‘১৪ সালে। ফের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয় ২০১৬ সালে (1st SLST)। নবম-দশম ও একাদশ-দ্বাদশের শূন্যপদ ছিল যথাক্রমে ১১,৬১০ এবং ৫৫৯৬। বেশ কয়েক বছর পর এরকম সুযোগ আসায়, জান-প্রাণ লড়িয়ে বা কঠোর পরিশ্রম করে (পড়াশোনা করে) ২০১৮-১৯ সালে চাকরি পেয়েছিলেন পশ্চিম মেদিনীপুরের অতনু, বিপ্লব, মৌমিতা, সৌমিলি, কল্যাণ, অভিজিৎ (নাম পরিবর্তিত)-রা।

বিচারপতিদের নির্দেশ নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত শিক্ষিত সমাজ:

অপরদিকে, চাকরি না পেয়ে তথা প্যানেলে নানা অসঙ্গতির অভিযোগ তুলে ২০১৯-‘২০ সাল থেকেই আন্দোলন, ধরনা থেকে আদালতের দরজায় কড়া নাড়তে শুরু করেন ওয়েটিং লিস্টে থাকা তাঁদেরই অনেক বন্ধুবান্ধবরা। এরপরই, ২০২২ সালের শুরুর দিকে SSC নিয়োগে ব্যাপক দুর্নীতির গন্ধ পেয়ে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেন কলকাতা হাইকোর্টের তৎকালীন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। পরবর্তী সময়ে, তাঁর এবং বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু’র একাধিক নির্দেশে পরেশ অধিকারীর কন্যা অঙ্কিতা অধিকারী সহ অনেকেই চাকরি হারাতে শুরু করেন। আদালতের নির্দেশে চাকরিও পান অনেকেই। এদিকে, গাজিয়াবাদ থেকে উদ্ধার হওয়া OMR এর সঙ্গে SSC-র সার্ভারের নম্বরের অসঙ্গতি দেখা যায় প্রায় ৫ হাজার শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীর! বিচারপতিদের নির্দেশে এই সমস্ত ফাঁকা ওএমআর এবং কারচুপি করা ওএমআর স্কুল সার্ভিস কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। চাকরি চলে যায় ‘বিতর্কিত’ এই শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের। কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চও বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় এবং বিচারপতি বসু’র রায় বহাল রাখায়, সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন বিতর্কিত বা অবৈধ উপায়ে চাকরি পাওয়া শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীরা। সুপ্রিম কোর্টের ‘সদ্য প্রাক্তন’ বিচারপতি অনিরুদ্ধ বসু এবং বিচারপতি বেলা এম. ত্রিবেদীর ডিভিশন বেঞ্চে কয়েক মাস শুনানির পর, মামলা ফেরত পাঠানো হয় কলকাতা হাইকোর্টে। তারপরই, বিচারপতি দেবাংশু বসাকের ডিভিশন বেঞ্চে শুনানি শুরু হয় ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে। শেষমেশ ‘প্রাক্তন’ বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় এবং বিচারপতি বসু’র নির্দেশের থেকেও আরও ‘কঠোর’ রায় দান করেন বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং বিচারপতি মহম্মদ সব্বার রশিদির ডিভিশন বেঞ্চ। নবম-দশম, একাদশ-দ্বাদশ, গ্রুপ-সি ও গ্রুপ-ডি’র প্যানেল সহ সম্পূর্ণ পরীক্ষাই বাতিল করে দেন তাঁরা। সম্পূর্ণ নতুনভাবে পরীক্ষা নেওয়ার নির্দেশ দেন দুই বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ! কিন্তু, এর ফলে প্রকৃত ‘যোগ্য” শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীরা যে চরম ক্ষতিগ্রস্ত হলেন তথা বিনা দোষে শাস্তি পেলেন, তা বলাই বাহুল্য! আর তাই, জীবনে কখনও যাঁরা মামলায় জড়ানোর কথা স্বপ্নেও ভাবেননি, তাঁরাই এখন নিজেদের যোগ্যতার সমস্ত নথি বা কাগজপত্র নিয়ে কলকাতার শহিদ মিনারের উদ্দেশ্যে ছুটছেন মামলায় নাম ‘নথিভুক্ত’ করতে!

জাজমেন্ট কপিতে বেআইনি চাকরির হিসেব:

News Desk

Recent Posts

Vidyasagar University: আবহাওয়ার নিখুঁত খবর জানতে ISRO-র সহযোগিতায় আকাশে যন্ত্র লাগানো বেলুন পাঠাল বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৩ জুন: রবিবার (২২ জুন) দুপুর ঠিক ২টো ১…

20 hours ago

Midnapore: “১৯৭৮-এর পর এমন ভয়াবহ বন্যা দেখেনি গড়বেতা!” আসরে NDRF-SDRF; প্লাবন পরিস্থিতি চন্দ্রকোনাতেও

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২০ জুন: ১৯৭৮ সালের পর এমন ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতির…

4 days ago

Midnapore: মিয়াজাকি, ব্ল্যাকস্টোন থেকে আম্রপালি, হিমসাগর; মেদিনীপুরে জমজমাট ‘আম উৎসব’

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৮ জুন: ৩০ টাকা প্রতি কেজি থেকে ৩ লক্ষ…

6 days ago

Kharagpur: খড়্গপুরের কারখানায় ভয়াবহ বিস্ফোরণ! মৃত্যু এক শ্রমিকের

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, খড়্গপুর, ১৭ জুন: গ্লিসারিন কারখানায় ওয়েল্ডিং- এর কাজ চলাকালীন ভয়াবহ বিস্ফোরণ!…

1 week ago

Midnapore: প্রায় দু’দশক পরে পশ্চিম মেদিনীপুরে শুরু হয়েছিল প্রাথমিকে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া; থমকে গেল আদালতের নির্দেশে

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৬ জুন: ২০০৮ এর পর ২০২৫। দীর্ঘ প্রায় দুই…

1 week ago

Elephant: হাতির পালকে তাক করে ছোঁড়া হচ্ছে একের পর এক জ্বলন্ত হুলা; নেটমাধ্যমে ছবি ছড়িয়ে পড়তেই নিন্দার ঢল

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, খড়্গপুর, ১৩ জুন: হাতির পালকে তাক করে ছোঁড়া হচ্ছে একের পর…

2 weeks ago