দ্য বেঙ্গল পোস্ট বিশেষ প্রতিবেদন, মেদিনীপুর, ১১ আগস্ট: কম্পিউটার, ল্যাপটপ আর স্মার্টফোনের যুগে সিনেমা হল বা প্রেক্ষাগৃহে’র প্রতি মানুষের আকর্ষণ অনেকটাই কমেছে! তবে, সিনেমা প্রিয় বাঙালি তথা শহরবাসীর একাংশ আজও স্বীকার করেন, “হলে গিয়ে ছবি (সিনেমা) দেখার মজাটাই আলাদা!” অস্বীকার করার কোনও জায়গাই নেই, এখনও কিছু কিছু ছবি অধিকাংশ মানুষ হলে গিয়ে দেখতেই ভিড় জমান। যদিও, অতিমারীর আগমণে, গত দেড় বছরে সেই চিত্রটা অনেকটাই বদলে গেছে। প্রথম ঢেউয়ের অন্তিম লগ্ন আর দ্বিতীয় ঢেউয়ের সূচনা লগ্নের মাঝামাঝি সময়ে মাত্র তিন-চার মাসের জন্য পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলেও, ফের তিন-চার মাসের ধাক্কা! সিনেমা-ব্যবসা বিপর্যস্ত। হল মালিক এবং এর সঙ্গে যুক্ত হাজার হাজার কর্মচারী ও ব্যবসায়ীদের অবস্থা শোচনীয়। ৩১ শে জুলাই (২০২১) থেকে ৫০ শতাংশ দর্শক নিয়ে সিনেমা হল খোলার অনুমতি দেওয়া হলেও, ‘চরম ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে’ বলেই খোলেনি অধিকাংশ সিনেমা হল! এদিকে, পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা শহর মেদিনীপুরে এমনিতেই সিনেমা হলের সংখ্যা কমতে কমতে, গত এক দশকের বেশি সময় ধরে একটি সিনেমা হল-ই অস্তিত্বের আলো জ্বালিয়ে রেখেছিল! শহরের বল্লভপুরে অবস্থিত হরি সিনেমা হল। অতিমারীর প্রকোপে সেখানেও আজ নেমেছে হতাশার নিকষ কালো অন্ধকার। প্রধান ফটকের তালায় ধরেছে মরিচা, চত্বর ভরে গেছে আগাছায়! আশেপাশের ব্যবসায়ী, দোকানিদের মুখচোখেও হতাশার প্রতিচ্ছবি। সবমিলিয়ে, হরি সিনেমা হল-কে কেন্দ্র করে শুধুই মনখারাপের করুণ সুর ধ্বনিত হচ্ছে এখন!

thebengalpost.in
হরি সিনেমা , মেদিনীপুর:

thebengalpost.in
৫০ শতাংশ দর্শক নিয়ে সিনেমা হল খোলার অনুমতি :

প্রসঙ্গত, ২০২০’র ২৪ শে মার্চ থেকে কেন্দ্রীয় সরকার যে লকডাউনের সূচনা করেছিল, লকডাউন উঠে গেলেও সেই রেশ যেন এখনও কাটেনি বিনোদন জগতে! মাঝখানে মাত্র ৩-৪ মাস পরিস্থিতি যখন স্বাভাবিক হয়ে উঠতে শুরু করেছিল, দ্বিতীয় ঢেউয়ের আগমনে ২০২১ এর ১ লা মে থেকে ফের রাজ্য সরকার লকডাউন বিধিনিষেধ জারি করে। লকডাউন বলা না হলেও, কার্যত লকডাউনে বেসামাল সিনেমা কিংবা বিনোদন ব্যবসা! ৩১ শে জুলাই থেকে ৫০ শতাংশ দর্শক নিয়ে হল খোলার অনুমতি দেওয়া হলেও, ঝুঁকি নিতে রাজি হননি হল মালিকরা। তাঁদের মতে, এমনিতেই গত দেড় বছরে তাঁরা অভাব-অনটনে জর্জরিত, তার উপর ৫০ শতাংশ দর্শক নিয়ে, প্রতিদিন স্যানিটাইজ করে হল খোলার ঝক্কি-ঝামেলা কে নেবে! কর্মচারীদের বেতন দেওয়ার টাকাই উঠবেনা। তাই খোলেনি, মেদিনীপুরের সবেধন নীলমণি হরি সিনেমা হল-ও। আগাছায় পূর্ণ হয়েছে এলাকা। একঝলক দেখলে হলখানা-কে ভুতুড়ে বাড়ি ছাড়া কিছুই মনে হবেনা! নেই কোনো সিনেমার পোস্টার, ফ্লেক্স বা ব্যস্ততা। জানা গেছে, এই সিনেমা হলের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যুক্ত প্রায় ১০০ টি পরিবার। শুধু কি আর সিনেমা হল, এর সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকা হলের বাইরের বারোভাজা, ফুচকা দোকান এবং সাইকেল স্ট্যান্ড-ও বন্ধ! খোঁজ নিয়ে জানা গেল, বর্তমানে তারা কেউ মড়া পোড়ানোর ডোমের কাজ করে, কেউ আবার পেপার বিক্রি করে, তো কেউ আবার টোটো চালিয়ে পরিবারের মুখে দু’বেলা-দু-মুঠো অন্ন জোটানোর লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁরা সকলেই চান, সরকারি নিয়ম মেনে সিনেমা হল-টি এবার খোলা হোক! বারোভাজা ব্যবসায়ী রোহিত দাস থেকে পান দোকানী সোমনাথ সিংহ সকলেই বলছেন, “এবার অন্তত খুলে যাক সিনেমা হল। প্রাণ ফিরে পাক, আমাদের প্রাণের হরি সিনেমা হল।” মন খারাপ স্থানীয় বাসিন্দাদেরও। প্রতাপ দোলই নামে এক ব্যক্তি বললেন, “প্রায় ২ বছর ধরে সব কেমন নিঃশব্দ , শুনশান। পাশ দিয়ে পেরোলে বুকের ভেতরটা ধড়াস করে ওঠে। সবকিছুই যখন সচল হচ্ছে, এবার এই সিনেমা হল-ও খুলে যাক। কত মানুষের জীবন-জীবিকা এর উপর নির্ভরশীল।” সিনেমা হলের এক কর্মচারী জানালেন, “উপর থেকে যেমন নির্দেশ আসবে, সেরকমই করতে হবে। মালিকপক্ষ এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি।” মনখারাপ মেদিনীপুর শহরের সিনেমা প্রেমী অনেক মানুষেরও! তাঁদের মতে, “হয়তো জীবনের আগে সিনেমা বা বিনোদন নয়, তবে জীবনের একটা পার্ট সিনেমা বা বিনোদন। কোভিড বিধি মেনে সবকিছু চললে, স্কুল-কলেজ কিংবা সিনেমা হল-ও খুলতে বাধা কোথায়! যদিও, মালিক পক্ষ বা ব্যবসায়ীরা অবশ্যই তাঁদের লাভ-ক্ষতির বিষয় চিন্তা করেই সিদ্ধান্ত নেবেন। তবে, আমরা চাই পরিস্থিতি আসতে আসতে স্বাভাবিক হয়ে যাক!”

thebengalpost.in
আগাছায় পূর্ণ হল প্রাঙ্গণ :