মণিরাজ ঘোষ, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১১ নভেম্বর: ‘মন্দিরময় পাথরা’র প্রাণপুরুষ ইয়াসিন পাঠানের সুদীর্ঘ লড়াই সার্থকতা পেল। অবশেষে আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া(Archaeological Survey of India) বা ‘ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ’ পশ্চিম মেদিনীপুরের পাথরার জমিজটের নিরসন করল। অধিগৃহীত ২৫ বিঘা জমির মালিক বা কৃষকরা পাবেন ক্ষতিপূরণ। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রাক্তন রাজ্যসভার সংসদ তথা বর্তমানে রাজ্যের ক্যাবিনেট মন্ত্রী ডাঃ মানস রঞ্জন ভূঁইয়া এবং বহরমপুরের সাংসদ অধীর রঞ্জন চৌধুরী’র উদ্যোগ ও তৎপরতায় ভারতীয় সংস্কৃতি মন্ত্রকের অধীন ‘আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া’ (ASI) অর্থ বরাদ্দ করেছে এজন্য। এই বিষয়ে আলোচনার জন্য এএসআই (ASI) এর একটি প্রতিনিধিদল মেদিনীপুর শহরে আসছেন আগামী ১৬ নভেম্বর। পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসক ডঃ রশ্মি কমল এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তরের আধিকারিকদের সঙ্গে জমির ক্ষতিপূরণ ও সংস্কারের কাজ নিয়ে তাঁরা আলোচনা করবেন। উপস্থিত থাকবেন ‘মন্দিরময় পাথরার প্রাণপুরুষ’ ইয়াসিন পাঠান।
প্রসঙ্গত, প্রায় ১৮ বছর আগে, ২০০৩ সালের ১৬ জুলাই কেন্দ্রীয় সরকারের আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া (ASI) ‘মন্দিরময় পাথরা’র ২৫ বিঘা জমি অধিগ্রহণ করেছিল। কিন্তু, জমির মালিকরা জমির ক্ষতিপূরণ পাননি এতদিন ধরে! ফলে বন্ধ ছিল সংস্কারের কাজও। এই বিষয়ে ইয়াসিন পাঠান বিভিন্নভাবে তাঁর লড়াই চালিয়ে গেছেন। কখনও তিনি সাহায্য পেয়েছেন ‘মেদিনীপুরের ভূমিপুত্র’ ডাঃ মানস রঞ্জন ভূঁইয়ার কাছ থেকে, কখনও বা পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা কংগ্রেসের সহায়তায় লোকসভার সাংসদ অধীর রঞ্জন চৌধুরীর কাছ থেকে। সর্বোপরি, উদ্যোগ নিয়েছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ইয়াসিন পাঠান জানিয়েছেন, “২০১৮ সালে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রচেষ্টায় অধিগৃহীত জমির মূল্য নির্ধারিত হয় ১ কোটি ৭৮ লাখ ৭৮ হাজার ৯৬৫ টাকা। ২০২০ সালের ১১ ডিসেম্বর তৎকালীন রাজ্যসভার সাংসদ ডাঃ মানস রঞ্জন ভূঁইয়া রাজ্যসভার অধিবেশনে কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রী মাননীয় প্রহ্লাদ সিং পাটেলের নিকট এবং ২০২০ সালের ১৬ মার্চ লোকসভার বিরোধী দলনেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরী লোকসভার অধিবেশনে ঐতিহাসিক মন্দিরময় পাথরায় অধিগৃহীত জমির মূল্য প্রদানের বিষয়ে আবেদন করার পর সংশ্লিষ্ট দপ্তর টাকা মঞ্জুর করেন। জমির মূল্য দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করার জন্য আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া ( ASI)’র আধিকারিকরা আগামী ১৬ নভেম্বর বেলা বারোটায় জেলাশাসক ড. রশ্মি কমল (IAS) এর কার্যালয়ে আসছেন।”
এদিকে, পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা শহর মেদিনীপুর থেকে মাত্র ৮ কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থিত এই ‘মন্দিরময়’ ঐতিহাসিক স্থানটিকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে সচেষ্ট হয়েছে রাজ্য সরকার। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে ইতিমধ্যে বরাদ্দ করা হয়েছে ২ কোটি টাকা।পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রশাসনের নেতৃত্বে চলছে কটেজ ও বাগান তৈরীর কাজ। ৩৪ টি সুপ্রাচীন মন্দির ও এলাকার নানা সৌন্দর্যায়নের কাজও শুরু হবে। সবমিলিয়ে খুশির হাওয়া পাথরা তথা মেদিনীপুর জুড়ে। তবে, পাথরার-পাঠান হিসেবে খ্যাত ইয়াসিন বাবু এনিয়ে এএসআই এর কাছে একটি আবেদন রাখতে চলেছেন আগামী ১৬ নভেম্বর। বেঙ্গল পোস্ট-কে তিনি জানিয়েছেন, “ঐতিহাসিক পর্যটনস্থল হিসেবে গড়ে উঠতে মেদিনীপুরের পাথরা। আমাদের সকলের কাছে গর্বের, আনন্দের। তবে, এখানে ভিডিও স্যুট করার বিষয়ে এএসআই এর যে কড়াকড়ি আছে, তা নিয়ে অনেকেই অখুশি। এই বিষয়টা এএসআইয়ের বিবেচনা করা উচিত। আগামী ১৬ নভেম্বর আমিও সেই আবেদন তুলে ধরব।”