দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৪ ডিসেম্বর: বিকেল ৩টা নাগাদ পরিচালন সমিতির সভাপতি (প্রেসিডেন্ট) স্কুলে পৌঁছনোর পরই ‘তড়িঘড়ি’ নিজের কক্ষে (অফিস রুমে) তালা লাগিয়ে স্কুল ছাড়লেন প্রধান শিক্ষক! তার পর পরই একে একে অন্যান্য শিক্ষক-শিক্ষিকারাও বাড়ির পথ ধরেন বলে অভিযোগ। বিকেল ৩টা ১৫ মিনিটে নাগাদ স্কুল চত্বর যখন কার্যত খাঁ খাঁ করছে, সেই সময়ই একাদশ শ্রেণীর এক ছাত্রের অভিভাবিকা প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে এসেছিলেন বিদ্যালয়ে। তাঁর অভিযোগ, সাড়ে ৩টাও বাজেনি স্কুল প্রায় ফাঁকা! প্রায় ৪০ জন শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীর মধ্যে তিনি মাত্র ১০-১২ জন শিক্ষক-শিক্ষিকার দেখা পেয়েছিলেন বলে দাবি। আর ছাত্রছাত্রী? স্কুল পরিচালন সমিতির সভাপতি থেকে একাংশ শিক্ষক-শিক্ষিকাদেরই দাবি, পড়ুয়ার সংখ্যা তো দিন দিন কমছেই, সেই সঙ্গে উপস্থিতির হারও প্রায় তলানিতে পৌঁছেছে! ঠিক এভাবেই নাকি চলছে জেলা শহর মেদিনীপুরের প্রাণকেন্দ্র কেরানীটোলাতে অবস্থিত সুপ্রাচীন উচ্চ বিদ্যালয় ‘শ্রী শ্রী মোহনানন্দ বিদ্যামন্দির’।

thebengalpost.net
বিকেল ৩টা, তালা প্রধান শিক্ষকের কক্ষে:

thebengalpost.net
বিজ্ঞাপন (Advertisement):

শহরবাসীর দাবি, একসময় মেদিনীপুর শহরের প্রথম তিন-চারটি বয়েজ (বালক) স্কুলের নাম নিলেই উঠে আসত শ্রী শ্রী মোহনানন্দ বিদ্যামন্দিরের নাম। মাধ্যমিকে রীতিমত ভালো নম্বর না পেলে, একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি হওয়ার সুযোগই মিলতো না। সেই স্কুলের হালই নাকি গত কয়েক বছরে কার্যত ‘বেহাল’ হয়েছে! পঞ্চম থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত এই স্কুলে বেশিরভাগ দিনই নাকি গড়ে ৭০-৮০ জন ছাত্রকেও টিফিনের পরে আর খুঁজে পাওয়া যায়না! গড় উপস্থিতির হারও অত্যন্ত খারাপ। এই করুণ দশার বিবরণ বাইরের কেউ দেন নি; বিদ্যালয়েরই একাংশ শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী থেকে পরিচালন সমিতির সভাপতি সহ শিক্ষানুরাগী সদস্যদের মুখ থেকেই উঠে এসেছে!

thebengalpost.net
বিকেল ৩টা ১৫ মিনিট, স্টাফ রুম প্রায় ফাঁকা:

মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) বিদ্যালয়ের তহবিল এবং ব্যয়-বরাদ্দ সংক্রান্ত বিষয়ে প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে বৈঠক করার জন্য বিকেল ৩টা নাগাদ স্কুলে পৌঁছেছিলেন বিদ্যালয় পরিচালন সমিতির সভাপতি নূপুর ঘোষ (বিদ্যাসাগর বিদ্যাপীঠ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষিকা), পরিচালন সমিতির শিক্ষানুরাগী সদস্য (পিআইই মেম্বার) রণজিৎ দাস (প্রাক্তন সহকারী বিদ্যালয় পরিদর্শক) প্রমুখ। তাঁরা পৌঁছনোর সাথে সাথেই নাকি নিজের কক্ষে তালা লাগিয়ে বিদায় নেন প্রধান শিক্ষক সুমিত ঘোষ। তহবিলের ‘হিসেব’ দেবেন না বলে, প্রায় বছরখানেক ধরেই প্রধান শিক্ষক নাকি এভাবেই ‘লুকোচুরি’ খেলে বেড়াচ্ছেন! প্রায় একবছর শিক্ষক-অভিভাবক বৈঠক ডাকেন নি বলেও অভিযোগ। পরিচালন সমিতির বৈঠকও হয়নি প্রায় এক বছর। জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (ডিআই) সহ মধ্যশিক্ষা পর্ষদ- সর্বত্রই ‘অভিযোগ’ জানানো হয়েছে বলে দাবি করেছেন পরিচালন সমিতির সভাপতি নূপুর ঘোষ এবং পিআইই মেম্বার রণজিৎ দাস। বিদ্যালয় তহবিলের হিসেবে ‘গরমিল’ থাকার অভিযোগে প্রধান শিক্ষকের তিনটি ইনক্রিমেন্ট বন্ধ করা হয়েছে বলেও দাবি করেছেন তাঁরা। তা সত্ত্বেও বিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা বা মানোন্নয়নের ক্ষেত্রে প্রধান শিক্ষক উদাসীন বলে দাবি প্রেসিডেন্ট নূপুর ঘোষ এবং পিআইই মেম্বার রণজিৎ দাস সহ একাংশ শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের। এই বিষয়ে মঙ্গলবার বিকেলেও ডিআই স্বপন কুমার সামন্তের সাথে যোগাযোগ করে পরিচালন সমিতির সদস্যরা অভিযোগ জানিয়েছেন বলে দাবি। বার বার ফোন করলেও ফোন ধরেন নি প্রধান শিক্ষক সুমিত ঘোষ। ‘স্কুল বাঁচাতে’ মেদিনীপুরের নবনির্বাচিত বিধায়ক সুজয় হাজরার দ্বারস্থও হবেন বলে জানিয়েছেন স্কুল পরিচালন সমিতির সভাপতি নূপুর ঘোষ। মঙ্গলবার রাতে ফোনে বিধায়ক সুজয় হাজরা বলেন, “বিধানসভার শীতকালীন অধিবেশন শেষ হলেই প্রধান শিক্ষক, পরিচালন সমিতির সভাপতি সহ সদস্যবৃন্দ, স্থানীয় কাউন্সিলর (মোজাম্মেল হোসেন)- সকলকে নিয়ে একটি বৈঠকের মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করব। মেদিনীপুর শহরের এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের যথেষ্ট সুনাম রয়েছে। তা যাতে নষ্ট না হয়, সেই চেষ্টাই করব।”

thebengalpost.net
শ্রী শ্রী মোহনানন্দ বিদ্যামন্দির:

thebengalpost.net
আবেদন: