দ্য বেঙ্গল পোস্ট বিশেষ প্রতিবেদন, ২৭ সেপ্টেম্বর: পূর্বাভাস ছিল মধ্যরাতে আছড়ে পড়বে ‘গুলাব’ (Gulab)! কিন্তু, রবিবার সন্ধ্যাতেই ওড়িশা-অন্ধ্র উপকূলের মাঝামাঝি কলিঙ্গপত্তনমে আছড়ে পড়ল ঘূর্ণিঝড় “গুলাব” (Gulab)। যার জেরে শুরু হয়েছে প্রবল বৃষ্টি। ৭০-৮০ কিলোমিটার বেগে বইছে ঝোড়ো হাওয়া। সমুদ্রে গিয়ে নিখোঁজ শ্রীকাকুলামের ৬ মৎস্যজীবী। ইতিমধ্যে ২ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানা গেছে সরকারি সূত্রে। এদিকে, সরাসরি প্রভাব না বাংলায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ছে গুলাব-জল! উত্তাল হয়েছে দীঘার সমুদ্র। সকাল থেকে রোদ ঝলমলে আবহাওয়া থাকলেও, জোয়ার আর গুলাবের প্রভাবে ভয়ঙ্কর সুন্দর রূপ নেয় দীঘা‌। রাতের দিকে শুরু হয়েছে। বইছে ৪০-৫০ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হাওয়া। সকাল থেকেই চলেছে মাইকিং। সমুদ্রে নামতে দেওয়া হয়নি পর্যটকদের। বিকেলের পর পর্যটক শূণ্য করা হয়েছে হোটেলগুলি। জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজি নিজে তদারকি করছেন প্রতিটি বিষয়। এদিকে, পশ্চিম মেদিনীপুর সহ দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন এলাকাতেই বিক্ষিপ্তভাবে শুরু হয়েছে বৃষ্টিপাত।

thebengalpost.net
রবিবারের দীঘা:

thebengalpost.net
দেওয়া হচ্ছে চরম সতর্কবার্তা :

অন্যদিকে, প্রশাসনের নির্দেশ অমান্য করে সমুদ্র স্নান করতে গিয়ে তলিয়ে গেল দুই পর্যটক। দীঘার কাছেই তালসারির সমুদ্রে স্নান করতে নেমে এই দুর্ঘটনার কবলে পড়েন উত্তর ২৪ পরগনার পর্যটকরা! জানা গিয়েছে, রবিবার উত্তর ২৪ পরগনার মধ্যমগ্রাম থেকে আট পর্যটকের একটি দল ওল্ড দীঘার একটি হোটেলে এসে ওঠে। কিন্তু, দীঘায় প্রশাসনের কড়াকড়ি থাকায়, তারা নিউ দীঘা পেরিয়ে উদয়পুর-তালসারির সমুদ্র সৈকতে স্নান করতে নামে। জানা গেছে, সেখানে পুলিশের কড়াকড়ি ততটা ছিল না! স্নানের পর ৬ জন উঠে এলেও, বাকি ২ জনের খোঁজ পাওয়া যায়নি। পুলিশের প্রাথমিক অনুমান নিখোঁজ দুই যুবক মদ্যপ অবস্থায় ছিল! তার জেরেই এই ঘটনা ঘটে। সূত্রের খবর, নিখোঁজ দুই পর্যটকের নাম অভ্রদীপ বাগড়িয়া ও দেবর্ষি সিংহ। এখনও তাঁদের খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ। নামানো হয়েছে পুলিশ বোটও। জেলাশাসক পূর্ণেন্দু কুমার মাজি শনিবার দীঘায় বিভিন্ন দপ্তরের আধিকারিকদের সাথে বৈঠক করেন। তিনি জানান, “নিচু এলাকা থেকে লোকজন সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে পর্যাপ্ত ত্রাণ ও জলের পাউচ। বিভিন্ন দপ্তরের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম। NDRF, SDRF এবং পুলিশ প্রশাসন প্রস্তুত রয়েছে যে কোন ধরনের পরিস্থিতির মোকাবিলায়।” এদিকে, তালছিটকিনিতে সেচ দপ্তরের উদ্যোগে ভেঙে যাওয়া কেলেঘাইয়ের বাঁধ মেরামতি শুরু হয়েছে যুদ্ধকালীন তৎপরতায়। যাতে আগে থেকে জলমগ্ন এলাকার অবনতি না হয়। সেচমন্ত্রী ড. সৌমেন মহাপাত্র তালছিটকিনি গিয়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন। তিনি জানান, “জলের গতি তীব্র হওয়ায় বাঁধের কাজ শুরু করতে দেরি হচ্ছে। তবে, মঙ্গলবারের আগে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কাজ করা হচ্ছে।”

thebengalpost.net
গুলাবের গতিপথ :

প্রসঙ্গত, সোমবার হলুদ ও মঙ্গলবার কমলা সতর্কতা জারি করা হয়েছে দুই মেদিনীপুর সহ দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায়। আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড় ‘গুলাব’ এর জেরে পশ্চিমবঙ্গের উপকূলবর্তী এলাকায় ৪০ থেকে ৫০ কিলোমিটার বেগে হাওয়া বইবে। যার গতিবেগ ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে। সমুদ্র অত্যন্ত উত্তাল থাকবে। তাই মৎস্যজীবীদের মাছ ধরেত যেতে নিষেধ করা হয়েছে। সোমবার দক্ষিণবঙ্গে ঝড় ও বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। একটু বেশি বৃষ্টি হবে দুটি জেলা পূর্ব মেদিনীপুর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনায়। জারি করা হয়েছে ‘হলুদ’ (Yellow Alert) সতর্কবার্তা। বৃষ্টি বাড়বে মঙ্গলবার অর্থাৎ ২৮ তারিখ। মঙ্গল এবং বুধবার ঝড়ো হাওয়া বইবে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের উপর দিয়ে। হবে ভারি বৃষ্টিপাত। মঙ্গলবার দক্ষিণবঙ্গের সমস্ত জেলাতেই বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা। তার মধ্যে ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে দুই মেদিনীপুর, দুই ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলি, কলকাতা, ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়া এবং পুরুলিয়ায়। জারি করা হয়েছে ‘কমলা’ (Orange Alert) সতর্কতা। বুধবার, ফের মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া এবং পশ্চিম বর্ধমান জেলায়। জারি করা হয়েছে ‘হলুদ’ সতর্কতা।

thebengalpost.net
মঙ্গলবার ‘কমলা’ (Orange Alert) মেদিনীপুর, খড়্গপুর, ঝাড়গ্রাম, কাঁথি :