দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, কলকাতা, ৭ আগস্ট: নিজেদের ‘অপরাধ’ স্বীকার করেছিলেন তাঁরা। তাই, সিবিআই (CBI) তাঁদের সাক্ষী হিসেবে চার্জশিটে উল্লেখ করেছিলেন। কিন্তু, এতেই ক্ষুব্ধ হন আলিপুর নগরদায়রা আদালতের বিচারক অর্পণ চট্টোপাধ্যায়। চার্জশিটে কেন সাক্ষী হিসেবে নাম ? প্রশ্ন তোলেন বিচারক। তারপরই চার ‘অযোগ্য’ শিক্ষক, যথাক্রমে- জাহিরউদ্দিন শেখ, সাইগর হোসেন, সিমর হোসেন ও সৌগত মণ্ডল-কে গ্রেফতারের নির্দেশ দেন বিচারক। তাঁদের জামিনের আবেদন সম্পূর্ণভাবে খারিজ করে, ১৪ দিনের জেল হেফাজতে পাঠান বিচারক। উল্লেখ্য যে, নিয়োগ দুর্নীতিতে এই প্রথম গ্রেফতার করা হল অযোগ্য শিক্ষকদের। ঘটনা ঘিরে নতুন করে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে রাজ্যের শিক্ষামহেলে। অন্যদিকে, আদালতের এই নির্দেশে খুশি প্রাথমিকের বঞ্চিত বা নট-ইনক্লুডেড চাকরি প্রার্থীরা।

thebengalpost.net
বৃষ্টিস্নাত কলকাতায়:

এদিন, সওয়াল-জবাব শেষ চার জনের জেল হেফাজতের (বা, বিচারবিভাগীয় হেফাজতের) নির্দেশ দেন বিচারক। ২১ অগস্ট পর্যন্ত তাঁদের প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগারে রাখা হবে। ওই দিনই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে। এদিন, মুর্শিদাবাদের বাসিন্দা ওই চার অভিযুক্ত শিক্ষক হাজিরা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের আইনজীবীরা আগাম জামিনের আবেদন করেন। কিন্তু, বিচারক তা খারিজ করে দেন। তিনি বলেন, “কেন এঁদের জামিন দেওয়া হবে? এঁদের জন্যই এত কিছু। পার্থ-কুন্তলরা তো এদের কাছে টাকা চাইতে যায়নি, এরাই আগবাড়িয়ে টাকা দিতে গিয়েছিল।” বিচারকের সংযোজন, “সিবিআই তো ক্লিনচিট দিয়েই দিয়েছিল। আমি ডেকে এনেছি। পর্যাপ্ত মেটেরিয়ালের (তথ্যপ্রমাণের) ভিত্তিতে ওঁদের ডাকা হয়েছে।” তিনি ওই প্রাথমিক শিক্ষকদের প্রশ্ন ছুঁড়ে বলেন, “আপনাদেরই বলতে হবে যে কেন আপনাদের জামিন দেওয়া হবে?” বিচারক এ-ও বলেন, “আপনাদের কাছে কেউ নিশ্চয়ই টাকা চাইতে যায়নি। আপনারা টাকা নিয়ে গিয়েছেন।” গ্রেফতার হওয়া ৪ শিক্ষকই মুর্শিদাবাদের (Murshidabad) নবগ্রামের বাসিন্দা। তাঁদের পাঠানো হয়েছে প্রেসিডেন্সি জেলে। প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালের প্রাথমিক টেটের পর তাপস মণ্ডলের মাধ্যমে টাকা দিয়ে চাকরি পেয়েছিলেন বলে সিবিআইয়ের কাছে স্বীকার করে নিয়েছিলেন চার ‘অযোগ্য’ শিক্ষক। অপরদিকে, এদিনের এই ঘটনার পর রাজ্যজুড়ে হাজার হাজার শিক্ষক ও শিক্ষা কর্মীরাও যে নতুন এক আশঙ্কার মধ্যে পড়ে গেলেন, তা বলাই বাহুল্য!

অন্যদিকে, ‘অপসারিত’ প্রাথমিক পর্ষদ সভাপতি মানিক ভট্টাচার্যের স্ত্রী শতরূপা ভট্টাচার্যের জামিন এদিন মঞ্জুর করেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ। এদিন, মানিক-পত্নীকে ১ লক্ষ টাকার বন্ডে জামিন দেন হাইকোর্টের বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ। ইডি বিশেষ আদালতে পাসপোর্ট জমা রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে আবেদনকারীকে। হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ, “জামিন খারিজের হলফনামায় মামলাকারী যে পালিয়ে যেতে পারেন বা তথ্য-প্রমাণ নষ্ট করতে পারেন, এমন কোনও আশঙ্কা প্রমাণ করেনি ইডি। তাছাড়াও, উনি সরাসরি প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। তাঁর বিরুদ্ধে সরাসরি টাকা নেওয়ার প্রমাণও দেখাতে পারেনি ইডি।” এদিকে হাইকোর্টের নির্দেশ নিয়ে সরাসরি কোনও মন্তব্য করতে চাননি শতরূপা ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, “গ্রেফতারির সময়ে এমনভাবে কালিমালিপ্ত করা হচ্ছে যে, সাধারণ মানুষ ভাবছে কত খারাপ। কেন্দ্রীয় তদন্তকারীর সংস্থা যা বলছে, তা ধ্রুব সত্য নয়।” এ প্রসঙ্গে এও উল্লেখ্য যে, নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় এই প্রথম কেউ জামিন পেলেন!

thebengalpost.net
ধৃত শিক্ষকরা :