Culture and Society

Folklore: হারিয়ে যাচ্ছে টুসু গান! গ্রামবাংলার ‘লোকসংস্কৃতি’ বাঁচিয়ে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা পশ্চিম মেদিনীপুরে

দ্য বেঙ্গল পোস্ট বিশেষ প্রতিবেদন, তনুপ ঘোষ, ৯ জানুয়ারি: পৌষ সংক্রান্তির কয়েকদিন আগে থেকেই শোনা যেত টুসু গান। গ্রামে-গঞ্জে ঘুরে বেড়িয়ে গান গেয়ে যা কিছু উপার্জন হত, তাই দিয়েই মেয়েরা টুসু পুজো করত। রাতে কিংবা ভোরের দিকেও চলত টুসু গানের মহড়া। প্রাচীন বাংলার এক অবিচ্ছেদ্য লোকসংস্কৃতি এই টুসু গান। কিন্তু, এসব তো এখন অতীত! নতুন প্রজন্মের কোনো আগ্রহ নেই টুসু গান নিয়ে। তার মধ্যেও, জঙ্গলমহল পশ্চিম মেদিনীপুরের কিছু এলাকায় এখনও বেঁচে আছে টুসু গান ও টুসু পুজোর রীতি-ঐতিহ্য। চন্দ্রকোনার খিড়কি বাজারের গীতা, ছবিতা, মিতা-রা গত ৪০ বছর ধরে চালিয়ে যাচ্ছে এই পুজো।

টুসু নিয়ে :

প্রসঙ্গত, বাংলার প্রায় তিন শতাধিক প্রাচীন লোকসংস্কৃতি এই টুসু গান ও টুসু পুজো। মূলত, অন্তজ শ্রেণীর মহিলারা পৌষ সংক্রান্তি উপলক্ষে টুসু গান ও টুসু পুজো নিয়ে মেতে থাকতো। সন্ধ্যে হলেই গ্রাম বাংলার বিভিন্ন জায়গা থেকে মহিলারা একসাথে মিলে টুসু গান গাইত। পৌষ মাস পড়লেই গ্রাম বাংলার পথে প্রান্তরে টুসু গানের সুর ভেসে আসত মানুষের কানে। কথিত যে, টুসুর আদি জন্মস্থান পুরুলিয়া জেলায়। পুরুলিয়ার এক আদিবাসী ঘরে পুণ্যবতী, রূপবতী টুসুর জন্ম। এই পুণ্যবতী রমণীর সাহায্যে মুর্শিদাবাদের নবাব পুত্রের রোগ মুক্তি লাভ হয়েছিল। তাই বাংলার নবাব এই পুণ্যবতী রমণীকে মুর্শিদাবাদে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। যদিও, সহজ-সরল আদিবাসীরা একত্রিত হয়ে সেই চক্রান্ত রুখে দিয়েছিলেন। কিন্তু, যেহেতু নবাবের নজর ছিল, তাই এই গুণবতী, পুণ্যবতী রমণী টুসু পৌষ সংক্রান্তিতে নদীতে নিজের জীবন বিসর্জন দিয়েছিল। তারপর থেকেই অন্ত্যজ শ্রেণীর কাছে টুসু দেবী রূপে পূজিত হয়ে আসছেন।

লোকসংস্কৃতি বাঁচিয়ে রাখার প্রাণপণ লড়াই :

উল্লেখ্য, বাংলায় অনেক লোকসংস্কৃতি আছে যা হারিয়ে যেতে বসেছে। টুসু গান আজ হারিয়ে যেতে বসেছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা থেকেও। এতসব কিছুর মধ্যেও, এই সংস্কৃতিকে যাঁরা বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করছেন কোনোমতে, সেখানেও কাঁটা হয়ে উপস্থিত করোনা! বিগত দু’বছরের মতো চলতি বছরেও করোনা বাধা সৃষ্টি করছে। গীতা ,ছবিতা, মিতা জানায়, পৌষ সংক্রান্তি আসার কয়েক দিন আগে থেকে তাঁরা গ্রামগঞ্জে ঘুরে বেড়াতেন। গান গেয়ে যা-কিছু উপার্জন হত তাই দিয়ে পৌষ সংক্রান্তিতে তাঁরা টুসুকে নিয়ে আনন্দে মাতোয়ারা হতেন। গত দুই বছর করোনা’র কারণে তারা গ্রামগঞ্জে টুসু ঠাকুর নিয়ে বের হতে পারেননি। ফের এই বছর হঠাৎ করেই করোনাসুর দাপট দেখানো শুরু করায়, তাঁরা পুনরায় বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন। চন্দ্রকোনার বিশিষ্ট সাহিত্যিক তারাপদ বিশুই বলেন, “চন্দ্রকোনা তথা ঘাটাল মহকুমা একসময় লোকসংস্কৃতির ভাঁড়ার ছিল। সব যেন হারিয়ে যাচ্ছে! এর মূল কারণ আমরা প্রত্যেকেই ছেলেমেয়েদের ইঁদুর দৌড়ে দাঁড় করিয়ে দিচ্ছি। তাদেরকে উপার্জনের যন্ত্র তৈরি করছি। যৌথ পরিবার বর্তমানে প্রায় নেই বললেই চলে! লোকসংস্কৃতি বাংলার ধারক-বাহক। সামাজিকভাবে এর গুরুত্ব সমাজে অপরিসীম। সেই সংস্কৃতি এখন হারিয়ে যাচ্ছে। টুসু গান, ঢেঁকিতে চাল কুটানো সব যেন হারিয়ে যাচ্ছে!” তবে, এখনও যারা এসব বাঁচিয়ে রাখতে তৎপর, তাঁদের কুর্নিশ জানাচ্ছেন গ্রামবাংলার নারী-পুরুষরাই।

News Desk

Recent Posts

Vidyasagar University: আবহাওয়ার নিখুঁত খবর জানতে ISRO-র সহযোগিতায় আকাশে যন্ত্র লাগানো বেলুন পাঠাল বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৩ জুন: রবিবার (২২ জুন) দুপুর ঠিক ২টো ১…

21 hours ago

Midnapore: “১৯৭৮-এর পর এমন ভয়াবহ বন্যা দেখেনি গড়বেতা!” আসরে NDRF-SDRF; প্লাবন পরিস্থিতি চন্দ্রকোনাতেও

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২০ জুন: ১৯৭৮ সালের পর এমন ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতির…

4 days ago

Midnapore: মিয়াজাকি, ব্ল্যাকস্টোন থেকে আম্রপালি, হিমসাগর; মেদিনীপুরে জমজমাট ‘আম উৎসব’

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৮ জুন: ৩০ টাকা প্রতি কেজি থেকে ৩ লক্ষ…

6 days ago

Kharagpur: খড়্গপুরের কারখানায় ভয়াবহ বিস্ফোরণ! মৃত্যু এক শ্রমিকের

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, খড়্গপুর, ১৭ জুন: গ্লিসারিন কারখানায় ওয়েল্ডিং- এর কাজ চলাকালীন ভয়াবহ বিস্ফোরণ!…

1 week ago

Midnapore: প্রায় দু’দশক পরে পশ্চিম মেদিনীপুরে শুরু হয়েছিল প্রাথমিকে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া; থমকে গেল আদালতের নির্দেশে

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৬ জুন: ২০০৮ এর পর ২০২৫। দীর্ঘ প্রায় দুই…

1 week ago

Elephant: হাতির পালকে তাক করে ছোঁড়া হচ্ছে একের পর এক জ্বলন্ত হুলা; নেটমাধ্যমে ছবি ছড়িয়ে পড়তেই নিন্দার ঢল

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, খড়্গপুর, ১৩ জুন: হাতির পালকে তাক করে ছোঁড়া হচ্ছে একের পর…

2 weeks ago