মণিরাজ ঘোষ, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৯ মে: “আমি প্রাইমারি টেট পাস করেছিলাম। কিন্তু, ডিএলএড ট্রেনিং নিইনি বা বেসরকারি স্কুলেও চাকরির চেষ্টা করিনি, শুধু ছেলের জন্য। ওর বাবা বারবার বলতো, তুমি ছেলেকেই সময় দাও।” এরপরই কেঁদে ফেললেন সোমা দেবী! বললেন, “আজ ও আমাদের সমস্ত কষ্ট সার্থক করেছে! আরও বড় হোক এটাই চাইব।” জেলা শহর মেদিনীপুরের উপকন্ঠে আবাস সংলগ্ন যমুনাবালীতে অবস্থিত সারদা বিদ্যামন্দির উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র তথা মাধ্যমিকের মেধাতালিকায় পঞ্চম স্থানাধিকারী (৬৮৮) সুপ্রভ আদকের মা সোমা আদক শুক্রবার দুপুরে ঠিক এমনটাই জানিয়েছেন সাংবাদিকদের। বাবা তাপস কুমার বাগ অঙ্কের শিক্ষক। আবাস সংলগ্ন সাহা মাঠে তাঁদের বাড়ি। তাপস বাবুও বললেন, “ছেলে নিজের মতো করেই পড়াশোনা করেছে। ও মা শুধু খেয়াল রাখত। আর, ওর এই রেজাল্টের পেছনে স্কুলের আচার্য, আচার্যা-দের অবদান সবথেকে বেশি। তবে, গৃহ শিক্ষকদের অবদানও অতুলনীয়।” সোমা দেবী স্মরণ করিয়ে দিলেন, “ওর ইংরেজি ও পদার্থ বিজ্ঞানের শিক্ষক আমাদের খুব কাছের। তাঁদের অবদানের কথা আলাদা করে বলতেই হবে।”

সুপ্রভ চায় পদার্থবিদ্যা নিয়ে গবেষণা করতে। বাকিদের মধ্যে বেশিরভাগই যখন নিট (NEET)- এর প্রস্তুতি নিয়ে ডাক্তার হতে চাইছে, সেখানেই সুপ্রভ তার স্বতন্ত্র ইচ্ছের কথা তুলে ধরল। তার কথায়, “পদার্থবিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা করতে চাই। তারপর গবেষণা করার ইচ্ছে আছে।” সুপ্রভ বলে, “আমার বিদ্যালয়ের আচার্য-আচার্যা, গৃহশিক্ষক এবং বাবা-মা সকলেরই অবদান আছে এই রেজাল্টের জন্য।” তবে, বাবা-মা’কেই তার সাফল্য উৎসর্গ করতে চায় সুপ্রভ। ৭০০’র মধ্যে ৬৮৮ পেয়েছে সুপ্রভ। অঙ্ক ও পদার্থ বিজ্ঞানে পেয়েছে একশোয় ১০০। অন্যদিকে, সারদা বিদ্যামন্দিরের আরও দুই কৃতী পড়ুয়া, যথাক্রমে- দেবশঙ্কর সাঁতরা এবং শিবেন্দু বেরা ৬৮৬ নম্বর পেয়ে মেধাতালিকায় সপ্তম স্থান অধিকার করেছে। দু’জনই চায় ডাক্তার হতে। দেবশঙ্কর-দের আদি বাড়ি পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার শালবনী ব্লকের বেঁউচা-তে হলেও, বর্তমানে মেদিনীপুর শহরের দেশবন্ধু নগরে বাড়ি করেছেন বাবা দুর্গাশঙ্কর সাঁতরা। দুর্গাশঙ্কর বাবু মেদিনীপুর হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজের চিকিৎসক। মা গৃহবধূ। শিবেন্দু’র বাড়ি জেলা শহরের নজরগঞ্জে। বাবা সুখরঞ্জন বেরা একজন ব্যাঙ্ককর্মী। মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান শিবেন্দু’র ইচ্ছে ডাক্তার হয়ে মানুষের পাশে থাকার। মেধাতালিকায় জায়গা করে নেওয়া সারদা বিদ্যামন্দিরের (সংঘ পরিচালিত এই স্কুলের ৪ জন ছাত্র এবার মেধাতালিকায় জায়গা করে নিয়েছে) অপর ছাত্র ময়ূখ পাত্র ৬৮৩ নম্বর পেয়েছে। মেধাতালিকায় দশম স্থান অধিকার করেছে মেদিনীপুর শহরের দেশবন্ধু নগরেরই বাসিন্দা ময়ূখ।
অন্যদিকে, মেদিনীপুর রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যাভবনের তিন ছাত্র মেধাতালিকায় জায়গা করে নিয়েছে। তিন জনই ৬৮৩ নম্বর পেয়ে মেধাতালিকায় দশম স্থান অধিকার করেছে। মেদিনীপুর সদর ব্লকের শিরোমণি (ধরমপুর) এলাকার বীরেশ ঘোষ, ঘাটালের (নিশ্চিন্দিপুর) বাসিন্দা (বর্তমানে যদিও মেদিনীপুর শহরেই থাকে) বর্ণময় বারিক এবং মেদিনীপুর শহরের গান্ধীঘাট এলাকার বাসিন্দা সাগ্নিক রায় এবার রামকৃষ্ণ মিশন তথা পশ্চিম মেদিনীপুর জেলাকে গর্বিত করেছে। দাঁতন হাই স্কুলের ছাত্র তথা দাঁতনের সরাইবাজারের বাসিন্দা সমুদ্র দত্ত ৬৮৪ নম্বর পেয়ে মেধাতালিকায় নবম স্থান অধিকার করেছে। বাবা কালীপদ দত্ত পঞ্চায়েত দপ্তরের কর্মী। সমুদ্র’র লক্ষ্য নিট এর জন্য প্রস্তুতি নিয়ে, ডাক্তারি পরীক্ষায় সফল হওয়া! এছাড়াও, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বৈতা মহেন্দ্রনাথ উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী সংহিতা দাস-ও মেধা তালিকায় দশম স্থান (৬৮৪) অধিকার করেছে।