দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, খড়্গপুর ও কলকাতা, ২০ জানুয়ারি: “র্যাগিং (Ragging)-এর মতো ঘটনা এত হালকা ভাবে নিচ্ছেন কেন? এই প্রতিষ্ঠানের (IIT Kharagpur) পড়ুয়ারা দেশ তথা বিশ্বে ছড়িয়ে রয়েছেন। এমন ঘটনা হলে পড়ুয়াদের মানসিক অসুস্থতা তৈরি হতে পারে। শুধু এই একটি ছাত্রের ঘটনা বলে নয়, আদালত চায় এই বিষয়ে (র্যাগিংয়ের বিষয়ে) সব ছাত্রের জন্য ডিরেক্টর (Director, IIT Kharagpur) অতি সক্রিয় হয়ে পদক্ষেপ করুন।” শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা ভরা এজলাসে আইআইটি খড়্গপুরের (IIT Kharagpur) অধিকর্তা (Director) অধ্যাপক ভি.কে. তেওয়ারি’কে উদ্দেশ্য করে ঠিক এই মন্তব্যই করেছেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, গত ১৪ অক্টোবর (২০২২) খড়গপুর আইআইটি (IIT Kharagpur)’র মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর মেধাবী ছাত্র ফাইজান আহমেদ (Faizan Ahmed) এর দেহ উদ্ধার হয়েছিল লালা লাজপত রায় হস্টেল থেকে। অসমের গুয়াহাটি (Guwahati) থেকে পড়তে আসা এই ছাত্রের ‘রহস্য মৃত্যু’র ঘটনায় উত্তাল হয় গোটা দেশ!
তাঁদের ছেলেকে ‘খুন’ করা হয়েছে এই অভিযোগ তুলে খড়্গপুর টাউন থানায় FIR দায়ের করার পর, কলকাতা হাই কোর্টেও (Kolkata High Court) সঠিক তদন্তের দাবিতে মামলা রুজু করে বছর ২৩-এর ফাইজানের পরিবার। সেই ঘটনার তদন্তে আইআইটি খড়্গপুর (IIT Kharagpur) কর্তৃপক্ষের অসহযোগিতা বা অবহেলা নিয়েই শুক্রবার অসন্তোষ প্রকাশ করলেন বিচারপতি রাজশেখর মান্থা। ডিরেক্টরকে তিনি বললেন, “আপনার প্রতিষ্ঠানের ছাত্র আপনার নিজের সন্তানের মতোই। তাঁর মৃত্যু নিয়ে অবহেলা করবেন না! আপনার পুত্রের ক্ষেত্রে ঘটলে কী করতেন?” প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার (১৯ জানুয়ারি) উচ্চ আদালতের শুনানিতে হাজির ছিলেন না আইআইটি খড়্গপুরের ডিরেক্টর ভি.কে. তেওয়ারি (Virendra Kumar Tewari)। তবে, ছিলেন তাঁর আইনজীবী অনিন্দ্য মিত্র। তাঁকেই আদালত কড়া নির্দেশ দেয় যে, আজ অর্থাৎ শুক্রবার (২০ জানুয়ারি) আইআইটি খড়্গপুরের অধিকর্তাকে (Director IIT Kharagpur) সশরীরে কলকাতা হাইকোর্টে হাজিরা দিতে হবে। উল্লেখ্য যে, আদালতের নির্দেশ মতো আগামী ২৪ জানুয়ারি খড়্গপুর আইআইটির ডিরেক্টরের আদালতে হাজিরা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু, ওই দিন তিনি টোকিও (Tokyo) যাবেন বলে হাজিরা দিতে পারবেন না বলে জানান তাঁর আইনজীবী অনিন্দ্য মিত্র। শুক্রবার অবশ্য সঠিক সময়েই খড়্গপুর থেকে রওনা দিয়ে কলকাতা হাই কোর্টে হাজিরা দেন ডিরেক্টর ভি.কে তেওয়ারি (Director of IIT Kharagpur V.K. Tewari)।
শুক্রবার ডাইরেক্টরকে উদ্দেশ্য করে বিচারপতি মান্থার পর্যবেক্ষণ ছিল, “আদালতের নির্দেশের পরও তাঁরা (আইআইটি কর্তৃপক্ষ) উদাসীন। এটা উচিত নয়।” এর পরই বিচারপতির প্রশ্ন, “খড়্গপুর আইআইটি-র ডিরেক্টর কি আদালতের ভাষা বোঝেন না? তাঁর সন্তানের সঙ্গে হলেও কি এমনই আচরণ করতেন?” তাঁর সংযোজন, “যাঁরা সন্তান হারিয়েছেন, তাঁদের কথা ভাবুন। বুঝবেন, ওই বাবা-মায়ের কষ্ট। যাঁরা পয়সার অভাবে গুয়াহাটি থেকে আসতে পারছেন না। আর আপনি কোর্টের তলব এড়িয়ে টোকিয়ো (Tokyo) যেতে চাইছেন! ওই বাবা-মায়ের কাছে কোনটা জরুরি?” এ প্রসঙ্গে এও উল্লেখ্য যে, শুক্রবার ডিরেক্টর (Director IIT Kharagpur ( যে রিপোর্ট জমা দেন, তার ভিত্তিতে নিজেদের বক্তব্য জানাতে মৃত ছাত্রের পরিবারকে সুযোগ দেয় আদালত। ডাইরেক্টরের পেশ করা রিপোর্ট খতিয়ে দেখে মামলাকারীর আইনজীবীর কোনও আপত্তি থাকলে সেটা লিখিতভাবে জানাতে হবে। অপরদিকে, ১০ ফেব্রুয়ারি আইআইটির বোর্ড অফ গভর্নর মিটিং। ওই দিন আইআইটি কী ব্যবস্থা নিল সেটা ১৩ ফেব্রুয়ারি শুনানির দিন জানাতে হবে। এই মামলায় পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পুলিশকে বিচারপতি মান্থার নির্দেশ, “আপনাদের রিপোর্ট দিতে কত দেরি হবে? ১৫-২০ দিন সময় দেওয়া যাবে না, অনেক দেরি হয়ে যাবে। দয়া করে কোনও পক্ষ নেবেন না। আগামী দিনে কেস ডায়েরি নিয়ে আসবেন। আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি এই মামলার পরবর্তী শুনানি।” আদালত জানিয়েছে, তাঁরা আশা করে, আগামী দিনে এমন কোনও ঘটনা যাতে না ঘটে তার জন্য পদক্ষেপ করবে আইআইটি। প্রয়োজনে পড়ুয়াদের কাউন্সেলিং করাতে হবে। যাবতীয় ব্যাপারে দায়িত্ব ডিরেক্টরের। এরপর পুলিশকে দ্রুত তদন্তের পরামর্শ দেন বিচারপতি মান্থা। তিনি বলেন, আগামী দিনে (৬ ফেব্রুয়ারি) কেস ডায়েরি হাজির করতে হবে।