দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, খড়্গপুর, ৫ এপ্রিল: এশিয়ার ‘প্রথম একশো’ বা ‘সেরা একশো’ বিজ্ঞানীর তালিকায় জায়গা করে নিলেন আইআইটি খড়্গপুরের (IIT Kharagpur) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ‘প্রফেসর’ সুমন চক্রবর্তী (Professor Suman Chakraborty)। সদ্য প্রকাশিত ‘এশিয়ান সায়েন্টিস্ট ম্যাগাজিন’ এর অষ্টম সংস্করণে ভারতের ১৭ জন বিজ্ঞানী জায়গা করে নিয়েছেন। তালিকায় বাংলা থেকে মাত্র দু’জন বিজ্ঞানী ‘সেরা একশো’-র তালিকায় আছেন, যথাক্রমে- অধ্যাপক সুমন চক্রবর্তী এবং অধ্যাপক সঙ্ঘমিত্রা বন্দ্যোপাধ্যায়। সঙ্ঘমিত্রা কলকাতার ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানী। তিনি আগেই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে ‘পদ্মশ্রী‘ সম্মান পেয়েছেন। অপরদিকে, গত বছর শিক্ষক দিবসে ‘জাতীয় শিক্ষক’ সম্মানে ভূষিত হয়েছেন আইআইটির অধ্যাপক-গবেষক সুমন চক্রবর্তী। তাঁর ‘ফ্লুইড মেকানিকস অ্যান্ড থার্মাল সায়েন্স’ নিয়ে গবেষণার জন্য দেশে বিজ্ঞানের সর্বোচ্চ ‘শান্তিস্বরূপ ভাটনগর সম্মান’ও পেয়েছেন। পেয়েছেন ‘ইনফোসিস পুরস্কার-২০২২’। এছাড়াও, আন্তর্জাতিক সংস্থা রিসার্চ.কম (Research.com)-এর ডি-ইনডেক্স (D-Index) অনুযায়ী ভারতের সেরা গবেষকের তকমাও পেয়েছেন তিনি। এবার এশিয়ার ‘সেরা একশো’ বিজ্ঞানীর তালিকাতেও জায়গা করে নিলেন তিনি।

thebengalpost.net
বিজ্ঞানী সঙ্ঘমিত্রা বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিজ্ঞানী সুমন চক্রবর্তী:

প্রসঙ্গত, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের (Jadavpur University) প্রাক্তনী সুমন ২০০২ সালে খড়্গপুর আইআইটিতে অধ্যাপক হয়ে আসেন। মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক সুমনের মূল বিষয় ‘ফ্লুইড মেকানিকস অ্যান্ড থার্মাল সায়েন্স’। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এই বিষয়ে নানা গবেষণা করে চলেছেন তিনি। ফ্লুইড মেকানিকস নিয়ে তাঁর গবেষণা এবং স্বাস্থ্য পরিষেবায় স্বল্প খরচে নানা রোগ নির্ণয়ে সুমনের আবিষ্কৃত প্রযুক্তি নজর কেড়েছে এই পত্রিকার প্রকাশকদের। সুমন জানিয়েছেন, “আমি ধারাবাহিকভাবে নানা গবেষণায় যুক্ত। গত কয়েক বছরে যে সম্মান পেয়েছি তাতে আরও অনুপ্রেরণা পেয়েছি। দেশের প্রান্তিক মানুষের কথা ভেবে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত নির্ভুল পরীক্ষায় নানা প্রযুক্তির আবিষ্কার করেছি ও করছি। সে সব বিভিন্ন সায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। মনে হয় নানা সমীক্ষার পরেই এশিয়ার এই সায়েন্টিস্ট ম্যাগাজিন আমাকে বেছে নিয়েছে। এই সম্মান নিঃসন্দেহে কাজে আরও উৎসাহ জোগাবে।”

কলকাতার বাসিন্দা তথা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী অধ্যাপক চক্রবর্তী ফ্লুইড মেকানিক্স, ইন্টারফেসিয়াল ফেনোমেনা এবং মাইক্রো ও ন্যানো স্কেলে ইলেক্ট্রোমেকানিক্সের ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রেখেছেন। পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে তিনি সেন্সিং, ডায়াগনস্টিকস এবং থেরাপিউটিকসের ক্ষেত্রে স্বল্পমূল্যের একাধিক চিকিৎসা ডিভাইস তৈরি করেছেন। ২০২০ সালে কোভিডের সময়ে স্কুল অফ বায়োসায়েন্সের ভাইরোলজিস্ট অরিন্দম মণ্ডল-কে সঙ্গে নিয়ে তৈরি করেছিলেন ‘র‍্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট’ কিট ‘কোভির‌্যাপ’। এছাড়াও, সম্প্রতি তাঁর আবিষ্কার ‘হিমো অ্যাপ’ (Hemo App)। এই অ্যাপ স্মার্টফোনে থাকলেই, রক্তাল্পতা বা অ্যানিমিয়া নির্ণয় করা যাবে। এজন্য মাত্র ১ টাকা বা ২ টাকা দিয়ে কিনতে হবে শুধু একটি ফিল্টার পেপার। এছাড়াও, মহিলারা যাতে গোপনীয়তা বজায় রেখে যোনিপথের সংক্রমণের পরীক্ষা বাড়িতেই স্বল্প খরচে করতে পারেন, সেই গবেষণাতেও সাফল্য পেয়েছেন আইআইটি খড়্গপুরের (IIT Kharagpur) স্বনামধন্য অধ্যাপক তথা বিজ্ঞানী সুমন চক্রবর্তী।

thebengalpost.net
আইআইটি খড়গপুরের অধ্যাপক সুমন চক্রবর্তী: