দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, খড়্গপুর ও মেদিনীপুর, ২৩ জুন: “এই বিষয়ে আর কিছু বলার নেই (বা, অভিযোগ নেই)। দ্য ম্যাটার ইজ ক্লোজড!” শুক্রবার বেলা ১২টা নাগাদ মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পৌঁছে ঠিক এভাবেই প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া দেন তামিলনাড়ুর তিরুপুরের বাসিন্দা তথা কেরালার তিরুবন্তপুরম IISER (IISER Thiruvanthapuram)-এর গবেষক সূর্য দীপেনের (Suriya Deepan G.S) বাবা সুন্দর (Sundar)। আইআইটি খড়্গপুরের (IIT Kharagpur) রসায়ন বিভাগের ২২ বছর বয়সী ইন্টার্ন সূর্য দীপেনের দেহ মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজে ময়নাতদন্তের পর দেহ নিয়ে বেলা সাড়ে তিনটা নাগাদ বেরিয়ে যাওয়ার আগে অবধি ছেলের মৃত্যু নিয়ে আর একটা শব্দও খরচ করেননি তাঁর বাবা। সঙ্গে ছিলেন সূর্য দীপেনের এক দাদাও। এই বিষয়ে সাংবাদিকদের সাথে কোন কথা না বললেও, তাঁরা বারবার উপস্থিত পুলিশকর্মীদের সাথে কথা বলেছেন। কথা বলেছেন আইআইটি খড়্গপুরের তরফে উপস্থিত প্রতিনিধিদের সঙ্গেও। বলাই যায়, এক্ষেত্রে অসমের গুয়াহাটির বাসিন্দা তথা মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের তৃতীয় বর্ষের মেধাবী পড়ুয়া ফাইজান আহমেদের মতো ঘটনা ঘটেনি! অর্থাৎ, পরিবারের তরফে খুন, র‌্যাগিং বা অস্বাভাবিক মৃত্যুর অভিযোগ করা হয়নি। সূর্য দীপেনের পরিবার হাসপাতালের তথ্য এবং পুলিশি রিপোর্টের উপরই ভরসা রাখতে চেয়েছেন। বাবা সুন্দর সহ পরিবারের সদস্যরা একপ্রকার মেনে নিয়েছেন, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে বা হরিযন্ত্র বিকল (হার্ট অ্যাটাক) হয়ে তাঁদের ছেলের মৃত্যু হয়েছে!

thebengalpost.net
হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েই আইআইটি খড়্গপুরের ইন্টার্নের মৃত্যু :

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বুধবার গভীর রাতে (রাত্রি সাড়ে ১১টা নাগাদ) আইআইটি খড়্গপুরের আর.কে হলে (রাধাকৃষ্ণন হলে) নিজের ৩০৮ নম্বর রুমে অসুস্থতা অনুভব করেন আইআইটি’র সামার ইন্টার্নশিপের পড়ুয়া সূর্য। তাঁর রুমমেটদের সহযোগিতায় সূর্য দীপেন-কে আইআইটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে, চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েই (হার্ট অ্যাটাক) বছর ২২’র মেধাবী ওই পড়ুয়ার মৃত্যু হয়েছে বলে চিকিৎসকেরা প্রাথমিকভাবে জানিয়েছিলেন। যদিও, দেহ হাসপাতালে পৌঁছনোর আগেই মৃত্যু হওয়ায়, ময়নাতদন্তের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় হাসপাতালের চিকিৎসক ও পুলিশের তরফে। বৃহস্পতিবার সকালে খড়্গপুর টাউন থানার তরফে প্রাথমিক তদন্তের পর, বিকেল সাড়ে ৩টা নাগাদ পুলিশি নজরদারিতে মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজের মর্গে পৌঁছয় তাঁর দেহ। শুক্রবার পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে তাঁর দেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। পুলিশ কিংবা হাসপাতালের প্রাথমিক রিপোর্টে তিরুবন্তপুরম IISER- এর গবেষক সূর্য দীপেনের মৃত্যুতে কোনরকম অস্বাভাবিকতা খুঁজে পাওয়া যায়নি। ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টেও সন্দেহজনক কিছু নেই বলেই জানা যায়। অভিযোগ নেই পরিবারের তরফেও। বেলা সাড়ে তিনটা নাগাদ তারঁ দেহ নিয়ে কলকাতা বিমানবন্দরের উদ্দেশ্যে রওনা দেন পরিবারের সদস্যরা। জানা যায়, বিমানে করেই দেহ তামিলনাড়ুতে (তিরুপুরের বাড়িতে) নিয়ে যাবেন তাঁরা।

উল্লেখ্য যে, মাধ্যমিক (২০১৭) ও উচ্চমাধ্যমিকে (২০১৯) যথাক্রমে ৯৩ ও ৮৫ শতাংশ নম্বর পাওয়া সূর্য দীপেন তামিলনাড়ুর একটি বিশ্ববিদ্যালয় (Bharathiar University) থেকে রসায়নে (Chemistry) স্নাতক পাস (২০২২) করেন। ওই বছরই সর্বভারতীয় প্রবেশিকা আইআইটি জ্যাম (IIT JAM)- এ উত্তীর্ণ হন এবং কেরালার তিরুবন্তপুরম IISER এ স্নাতকোত্তরের (M.Sc) জন্য ভর্তি হন। এর মাঝেই, আইআইটি খড়্গপুরের গ্রীষ্মকালীন বা সামার ইন্টার্নশিপে সুযোগ পেয়ে মে মাসের শেষ সপ্তাহে খড়্গপুরে আসেন দীপেন। ছিলেন রাধাকৃষ্ণন হলের (বা, হস্টেলের) ৩০৮ নম্বর রুমে। সেখানেই বুধবার গভীর রাতে শারীরিক অসুস্থতা অনুভব করেন এবং অল্প বয়সেই মৃত্যুবরণ করেন এই মেধাবী পড়ুয়া।

thebengalpost.net
মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজের মর্গের সামনে সূর্য দীপেনের বাবা ও দাদা :