দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৩ আগস্ট: শুক্রবার প্রকাশিত রাজ্য জয়েন্টের মেধাতালিকায় জায়গা করে নিলেন পশ্চিম মেদিনীপুরের দুই কৃতী। ষষ্ঠ স্থানে আছেন মেদিনীপুর শহরের সাগ্নিক পাত্র এবং অষ্টম স্থান অধিকার করেছেন খড়্গপুর গ্রামীণের অর্চিষ্মান নন্দী। দুজনই JEE Advance-এ সফল হয়ে বর্তমানে আইআইটি খড়্গপুরে পড়ছেন। সাগ্নিক কম্পিউটার সায়েন্স, অর্চিষ্মান কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে পড়ছেন। অন্যদিকে, রাজ্য জয়েন্টের প্রথম স্থানাধিকারী তথা কলকাতা শহরের বাসিন্দা অনিরুদ্ধ চক্রবর্তীও বর্তমানে পশ্চিম মেদিনীপুরের আইআইটি খড়্গপুরে পাঠরত। জেইই অ্যাডভান্সে সফল হয়ে অনিরুদ্ধ কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে ভর্তি হয়েছেন খড়্গপুর আইআইটি-তে। মেধাবী এই তিন ছাত্রই আইআইটি খড়্গপুরে সুযোগ পেয়ে নিজেদের ‘গর্বিত’ বলেই মনে করেছেন। আইআইটি কর্তৃপক্ষের তরফেও মেধাবী এই তিন ছাত্রকে অভিনন্দিত করা হয়েছে। ডিরেক্টর সুমন চক্রবর্তী বলেন, “শুনে ভালো লাগছে, তিনজনেরই স্বপ্নের ডেস্টিনেশন ছিলো আইআইটি খড়্গপুর। আশি করছি, ভবিষ্যতে তিনজনই সারা দেশকে গর্বিত করবে।”

thebengalpost.net
অনিরুদ্ধ চক্রবর্তী:

thebengalpost.net
বিজ্ঞাপন (Advertisement):

অনিরুদ্ধ পার্ক সার্কাসের ডন বস্কো স্কুলের ছাত্র ছিলেন। JEE Advance- এ সফল হয়ে অনিরুদ্ধ বর্তমানে আইআইটি খড়্গপুরে কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে বি.টেক কোর্সে ভর্তি হয়েছেন। অনিরুদ্ধ’র বাবা অম্লান চক্রবর্তী কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। মা সাউথ পয়েন্ট হাইস্কুলের পদার্থবিদ্যা বিষয়ের শিক্ষিকা। দাদা কানপুর আইআইটি-তে পড়ছেন। অনিরুদ্ধ বর্তমানে আইআইটি খড়্গপুরেই আছেন। শুক্রবার বিকেলে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে অনিরুদ্ধ বলেন, “বাবা-মা’ই ফোন করে জানালেন। খুব ভালো লাগছে। জানতাম ভালো ফল হবে। তবে, একেবারে প্রথম হব, আশা করিনি!” আনসার কি (Answer Key) অনুযায়ী তাঁর মোট নম্বর ১৯৩.৭ হয়েছে বলেও জানান অনিরুদ্ধ। দীর্ঘ আইনি জটিলতা কাটিয়ে শেষমেষ ফলাফল প্রকাশিত হওয়াতেও খুশি অনিরুদ্ধ। পরবর্তী লক্ষ্য কি? অনিরুদ্ধ বলেন, “কম্পিউটার সায়েন্সটাই ভালোভাবে পড়তে চাই। তারপর যেটা ভালো লাগবে, সেইভাবেই এগোব।”

thebengalpost.net
সাগ্নিক পাত্র:

অন্যদিকে, উচ্চ মাধ্যমিকে দশম স্থান অধিকার করার পর, রাজ্য জয়েন্টে ষষ্ঠ স্থান অধিকার করলেন মেদিনীপুর শহরের সাগ্নিক পাত্র। শহরের ধর্মা সংলগ্ন বিবেকানন্দ নগর এলাকার বাসিন্দা সাগ্নিক অবশ্য ইতিমধ্যেই JEE Advance-এ ৩৭৩ র‌্যাঙ্ক (AIR-373) করে IIT খড়্গপুরে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে সদ্য ভর্তি হয়েছেন। JEE মেইনসে সাগ্নিকের র‌্যাঙ্ক ছিল ১৪৫। শৈশব থেকেই মেধাবী সাগ্নিক মাধ্যমিকেও ভালো ফল করেছিলেন। পেয়েছিলেন ৬৭৭। সাগ্নিক পঞ্চম শ্রেণি থেকেই মেদিনীপুর কলেজিয়েট স্কুলের ছাত্র। তাঁর এই সাফল্যে উচ্ছ্বসিত ঐতিহ্যবাহী এই স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা হিমানী পড়িয়া। সাগ্নিকের বাবা প্রভাংশু পাত্র চিঁচিড়া হাইস্কুলের করনিক (ক্লার্ক)। মা মিতা পাত্র গৃহবধূ। উচ্চ মাধ্যমিকে দশম স্থান অধিকার করলেও সাগ্নিকের একমাত্র লক্ষ্য ছিল JEE Advance-এ সফল হয়ে আইআইটি খড়্গপুর থেকে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়া। মেধাবী সাগ্নিক সেই লক্ষ্য পূরণ করেছেন। তা সত্ত্বেও রাজ্য জয়েন্টে ছেলের এই সাফল্যের খুশি বাবা-মা। মা মিতা পাত্র বলেন, “ও তো আইআইটি খড়্গপুরেই আছে। কথা হয়েছে। আমরা খুব খুশি।” সাগ্নিকও জানিয়েছেন, তাঁর পরীক্ষা ভালো হয়েছিল। ফলাফলে খুশি।

thebengalpost.net
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে পড়ছেন অর্চিষ্মান নন্দী:

এছাড়াও, শুক্রবার প্রকাশিত রাজ্য জয়েন্টে অষ্টম স্থান অধিকার করেছেন পশ্চিম মেদিনীপুরের খড়্গপুরের বাসিন্দা অর্চিষ্মান নন্দী। এর আগে সর্বভারতীয় জয়েন্টে (JEE Mains) ‘টপার’ হয়েছিলেন তিনি। রাজ্য থেকে দেবদত্তা মাঝির সাথেই অর্চিষ্মানও প্রথম স্থান দখল করেছিলেন। যদিও, তারপর জেইই অ্যাডভান্সে (JEE Advance) সফল হয়ে (AIR-477) নিজের স্বপ্নের প্রতিষ্ঠান আইআইটি খড়্গপুরে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI/Artificial Intelligence) নিয়ে ভর্তি হয়েছেন অর্চিষ্মান। খড়্গপুর গ্রামীণের চাঙ্গুয়াল গ্রাম পঞ্চায়েতের বারবেটিয়ার বাসিন্দা অর্চিষ্মান CBSE-র দ্বাদশ শ্রেণীর সর্বভারতীয় মেধাতালিকাতেও (দশম) জায়গা করে নিয়েছিলেন। দশমে অর্থাৎ আইসিএসই (ICSE)-তে সর্বভারতীয় স্তরে পঞ্চম স্থান অধিকার করেছিলেন তিনি। অর্চিষ্মানের বাবা মিঠুন নন্দী একটি ওষুধ প্রস্তকারক সংস্থার পদস্থ কর্মী। মা অনিন্দিতা মাইতি (নন্দী) বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের টেকনিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট। অর্চিষ্মানের মামাতো দাদু বঙ্কিমবিহারী মাইতি ছিলেন আইআইটি খড়্গপুরের ১৯৭০ সালের প্রাক্তনী। মূলত তাঁর দেখানো পথ ধরেই চলেছেন অর্চিষ্মান। অর্চিষ্মানের বাবা-মা জানান, “উনি (বঙ্কিম বাবু) খাকুড়দার বড়মোহনপুর হাইস্কুলের রসায়নের শিক্ষক ছিলেন। ছেলের বিজ্ঞান শিক্ষার ভিত গড়ে দিয়েছিলেন দাদুই। অর্চিষ্মানের লক্ষ্যই ছিল দাদুর মতো আইআইটি খড়্গপুরে পড়া। ওর দাদুও নাতিকে সেই নির্দেশই দিয়েছিলেন। শুধু নিজের নয়, দাদুর স্বপ্নও যে ছেলে (অর্চিষ্মান) পূরণ করতে পেরেছে, এটাই আমাদের কাছে গর্বের।”

thebengalpost.net
দাদুর সাথে অর্চিষ্মান: