দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, কলকাতা, ১৬ জুন: মাত্র ২৪ ঘন্টার মধ্যেই কিছুটা হলেও পরিস্থিতির পট পরিবর্তন ঘটল! সৌজন্যে অবশ্যই রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা প্রাক্তন সিবিআই অধিকর্তা উপেন্দ্রনাথ বিশ্বাস। বুধবার ভরা এজলাসে তাঁর আশ্বাস-বাণীতেই কিছুটা হলেও অন্ধকার শেষে ‘আলো’র আভাস পেলেন রাজ্যের হাজার হাজার বঞ্চিত শিক্ষক পদপ্রার্থীদের একমাত্র ‘ভরসা’ বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় (Justice Abhijit Gangopadhyay)। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, সোমবার প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে ২৬৯ জনের চাকরি বাতিলের নির্দেশ দেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। একইসঙ্গে, প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের তদন্তভার তুলে দেন সিবিআইয়ের হাতে। জিজ্ঞাসাবাদ করার নির্দেশ দেন, প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি (প্রেসিডেন্ট) মানিক ভট্টাচার্য এবং সচিব (সেক্রেটারি) রত্না বাগচীকে। সেই মতো সবকিছু ঠিকঠাকই চলছিল। এরপর, সোমবার রাতে হঠাৎ করেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পৌঁছে যান কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির বাংলো-তে! তারপরই, মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় সিবিআই তদন্ত নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন এবং সিবিআই-এর হাত থেকে তদন্তভার তুলে নেওয়ার ইঙ্গিত দেন। মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিও আস্থা রাখেন! মঙ্গলবারের এই ঘটনায় ভেঙে পড়েছিলেন রাজ্যের কয়েক লক্ষ বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থী। তবে, বুধবার বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে পৌঁছে হতাশ হয়ে পড়া বিচারপতি-কে পুনরায় যেন উজ্জীবিত করলেন প্রাক্তন সিবিআই জয়েন্ট ডিরেক্টর উপেন বিশ্বাস! প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের ‘বেনজির’ দুর্নীতি প্রসঙ্গে তিনি জানালেন, “মাই লর্ড (ধর্মাবতার) ভেঙে পড়বেন না। এই লড়াই অনেক বড়। আমি তদন্তে সম্পূর্ণ রূপে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেব।” তিনি এও স্বীকার করেন, “সৎ রঞ্জন-ই (বাগদা রঞ্জন) আসলে চন্দন মন্ডল। আর, এই দুর্নীতিতে রঞ্জন একটামাত্র ডট! এরকম অনেক অনেক ডট লুকিয়ে আছে।”

thebengalpost.net
উপেন্দ্রনাথ বিশ্বাস :

ভরা এজলাসে রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা প্রাক্তন সিবিআই জয়েন্ট ডিরেক্টর উপেন বিশ্বাস বলেন, “মাকড়সার জালে রঞ্জন একটা বিন্দু (ডট)। মাকড়সার জালের এমন অনেক রঞ্জন তাদের খুঁজে বার করতে হবে। বাগদা রঞ্জন আসলে সুসংগঠিত একটি অপরাধ। এই অপরাধ একার পক্ষে করা সম্ভব নয়। অনেকেই যুক্ত এই অপরাধে। ধরুন ৪০০ কোটির দুর্নীতি। এই দুর্নীতির অঙ্কের টাকা গুনতেও যেমন অনেক লোক লাগে। ঠিক তেমনই সংগঠিত অপরাধ ঘটানো একা রঞ্জনের কম্য নয়। একটা ডট মাত্র রঞ্জন। রঞ্জন ভুলে যান, আজ থেকে আমি বলছি রঞ্জন আসলে চন্দন মণ্ডল। মাকড়সার জালে রঞ্জন একটা বিন্দু। মাকড়সার জালের এমন অনেক রঞ্জন তাদের খুঁজে বার করতে হবে।” তিনি-ই বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়-কে পরামর্শ দেন, সিবিআই এর মধ্য থেকেই ১৫-২০ জন অফিসার নিয়ে সিট (SIT- Special Investigation Team) গঠন করতে হবে। তাঁদের যাতে কেউই বদলি করতে না পারে, সেজন্য আদালতকে উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এরপরই, আশার আলো খুঁজে পান বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। বিচারপতি স্মরণ করেন, বিহারের পশুখাদ্য কেলেঙ্কারিতে বিহারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী লালুপ্রসাদ যাদব-কে যিনি গ্রেপ্তার করেন, তিনিই এই উপেন্দ্রনাথ বিশ্বাস! তাই, তাঁকে এই তদন্তে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার আবেদন জানান। রাজি হন প্রাক্তন সিবিআই জয়েন্ট ডিরেক্টর বিশ্বাস।

thebengalpost.net
কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় :

এরপরই, উজ্জীবিত বিচারপতি অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় সিবিআই-এর আইনজীবী-কে বলেন, তদন্ত কতদূর এগিয়েছে? সিবিআইয়ের আইনজীবী বিল্বদল চট্টোপাধ্যায় বলেন, “আমরা অনেক দূর এগিয়েছি। আপনাকে সেই রিপোর্ট দিতে পারি। আগামী সপ্তাহে দায়িত্ব নিতে চলেছেন আরেকজন অ্যাডিশনাল জয়েন্ট ডিরেক্টর। আমি আপনাকে নিশ্চিত করছি, আগামী সপ্তাহের মধ্যেই সিবিআই-এর তদন্ত সম্পর্কে আপনার ধারণা সম্পূর্ণ বদলে যাবে!” বাধা দিতে যান প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের আইনজীবী। কিন্তু, বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের আইনজীবী লক্ষ্মী গুপ্ত-কে উদ্দেশ্য করে বলেন, “যোগ্য অথচ বঞ্চিতদের চাকরির ব্যবস্থা করে দেওয়াই আমার লক্ষ্য। এই মামলায় হাজারো অবৈধ শিক্ষকের চাকরি বাতিল হলে আপনি অবাক হবেন না!” আর, এই ঘটনাতেই, এই মুহূর্তে আতঙ্কের মধ্যে বিনিদ্র রজনী কাটাচ্ছেন রাজ্যের হাজার হাজার অবৈধ প্রাথমিক শিক্ষক। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, ইতিমধ্যে, ২৬৯ জনের চাকরি বাতিলের ঘটনাতেই তোলপাড় পড়ে গিয়েছি রাজ্যে। কোথাও বিয়ে ভাঙছে, কোথাও শাসকদলের পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির দুই মেয়ের চাকরি বাতিল হয়েছে, কোথাও আবার বাম নেতার পরিবারে চাকরি বাতিল হয়েছে, কোথাও আবার চাকরি-দালালের বাড়িতে হামলা করছেন সাধারণ মানুষ!