দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, ঝাড়গ্রাম, ৩ আগস্ট: ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধা দীর্ঘদিন ধরে চোখের সমস্যায় ভুগছিলেন। সুচিকিৎসার আশায় গিয়েছিলেন ঝাড়গ্রাম মেডিক্যাল কলেজ তথা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে। বৃদ্ধার চক্ষু পরীক্ষা করে তাঁর হাতে কিছু ড্রপ দেওয়া হয়। বেশ কয়েকদিন সেই ‘ড্রপ’ লাগানোর পরই বৃদ্ধার চোখ আরও খারাপ হতে শুরু করে। সঙ্গে অসহ্য যন্ত্রণা! এই পরিস্থিতিতে ফের তিনি মেডিক্যাল কলেজে যান। সঙ্গে নিয়ে যান ওই আই-ড্রপগুলিও। সেগুলি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখে চিকিৎসকেরা এবার নতুন কয়েকটি ড্রপ লিখে দেন। আর বলেন ‘এগুলি আর লাগাবেন না!’ এরপর, বৃদ্ধা বাইরে ওষুধের দোকানে গিয়ে প্রেসক্রিপশন এবং হাসপাতাল থেকে দেওয়া সেই ‘আই-ড্রপ’ গুলি দেখানোর পরই জানতে পারেন, সেগুলি আসলে ছিল বাচ্চাদের পেটখারাপের ওষুধ!
অরণ্য শহর ঝাড়গ্রামের ১ নম্বর ওয়ার্ডের কদমকাননের শিরীষচক এলাকার বাসিন্দা, ষাটোর্ধ্ব হাসি দাস ঠিক এমনই অভিযোগ হুবহ তুলে ধরেছেন ঝাড়গ্রামের জেলাশাসকের কাছে। অভিযোগপত্রে তিনি এও উল্লেখ করেছেন, ” ভুল ওষুধ লাগানোর ফলে আমি প্রায় অন্ধ হয়ে যেতে বসেছি এবং শারীরিক ও মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছি।” তাঁর আবেদন, “ঝাড়গ্রাম মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের এই গাফিলতিতে আমার যে ক্ষতি হয়েছে, আমি যেন তার সুবিচার পাই এবং যাতে আমার চোখের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা হয়; সেই সুব্যবস্থা করবেন।” যদিও, জেলাশাসকের কাছে অভিযোগপত্র জমা দেওয়ার আগে একাধিকবার ঝাড়গ্রাম মেডিক্যাল কলেজ তথা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে দরবার করেছেন হাসি। কিন্তু, তাঁর কোন কথা না শুনেই, তাঁকে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ হাসি দাসের। গত জুন মাসের এই ঘটনায় শেষ পর্যন্ত জুলাই মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ নাগাদ ঝাড়গ্রামের জেলাশাসকের কাছে লিখিত আকারে অভিযোগ জমা করেন তিনি। আর, তারপরই নড়েচড়ে বসে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। শুক্রবার (২ আগস্ট) হাসপাতালের সুপার (MSVP) অনুরূপ পাখিরা বলেন, “একটা অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কার ভুল, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে, দোষী প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” একই সঙ্গে তাঁর সংযোজন, “ওই বৃদ্ধার সঙ্গে কথা হয়েছে। উনি চোখে দেখতে পাচ্ছেন।” যদিও, বৃদ্ধার দাবি, “তাঁর দৃষ্টিশক্তি আগের তুলনায় ক্ষীণ হয়ে যাচ্ছে!” চিকিৎসক না স্বাস্থ্যকর্মী, কার ভুলে এত বড় ‘ভুল’ হল; তা জানতে ইতিমধ্যে তদন্ত শুরু করেছে অনুসন্ধান কমিটি।