দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, ঝাড়গ্রাম, ৫ জুলাই: গত শনিবার (২৯ জুন) ঝাড়গ্রামের গোপীবল্লভপুর থানার ভুলনপুর গ্রামে মাটি খুঁড়তে গিয়ে বেলনাকৃতির একটি বস্তু উদ্ধার হয়েছিল। খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন প্রশাসনিক আধিকারিকেরা। ঘিরে ফেলা হয়েছিল ওই এলাকা। খবর পেয়ে পৌঁছেছিল বম্ব স্কোয়াডও। তাঁরা অনুমান করেছিলেন, এটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের (১৯৩৯-‘৪৫) সময়কার একটি বোমা বা বোমার সেল। যদিও সেটি নিষ্ক্রিয় অবস্থায় ছিল, তা সত্ত্বেও কড়া নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে বস্তুটিকে রাখা হয়েছিল। অবশেষে শুক্রবার (৫ জুলাই) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্যবহৃত সেই বোমা সফলভাবে নিষ্ক্রিয় করা হয় ভুলনপুরের নদী তীরবর্তী এলাকায়। শুক্রবার নিজের এক্স হ্যান্ডলে এ কথা জানিয়েছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, প্রায় এক দশক আগেও এই ভুলনপুরেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ের একটি বোমা পাওয়া গিয়েছিল। তা থেকেই প্রশাসনিক আধিকারিক ও স্থানীয় বাসিন্দারা অনুমান করেছিলেন, সদ্য উদ্ধার হওয়া বস্তুটিও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বোমা বা বোমার শেল হতে পারে। এর পর শুক্রবার মুখমন্ত্রীই নিশ্চিত করেন, উদ্ধার হওয়া বোমাটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার ছিল। তবে, উদ্ধার হওয়ার সময় সেটি সক্রিয় ছিল না। শুক্রবার রাজ্য প্রশাসনের বম্ব স্কোয়াড ও বায়ুসেনা (এয়ার ফোর্স) যৌথ ভাবে বোমাটি নিষ্ক্রিয় করে। তার আগে গ্রামবাসীদের নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে খবর, বোমাটি ফাটার সময় বিকট শব্দে কেঁপে ওঠে এলাকা। ফাটার পর জমিতে দু’ফুট গর্ত তৈরি হয়ে যায়! গোপীবল্লভপুরের এসডিপিও পারভেজ সরফরাজ বলেন, “বস্তুটি উদ্ধারের পর থেকেই ঘিরে রাখা হয়েছিল ছিল। প্রোটোকল মেনে দূরত্ব বজায় রেখে নদীর ধারে একটি জমিতে নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে। তার নমুনা সংগ্রহ করে নিয়ে গিয়েছে বায়ুসেনা।”
প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালে নেতাজি সুভাষ ডকে রুটিনমাফিক খননকার্য চালানোর সময় উদ্ধার হয়েছিল এক হাজার পাউন্ড ওজনের একটি বোমা। যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সময়কালের বলে মনে করা হয়েছিল। কারণ, হুগলি নদীর পূর্ব পারে অবস্থিত এই নেতাজি সুভাষ ডকটি ব্যবহৃত হয়েছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়। আমেরিকার নৌসেনা সে সময় এই ডকটি ব্যবহার করেছিল। অন্যদিকে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু একবার ঝাড়গ্রাম এসেছিলেন বলে জানা যায়। ১৯৪০ সালের ১২ মে সকালে মেদিনীপুর থেকে ধেড়ুয়া হয়ে মোটরগাড়িতে নাড়াজোল রাজ পরিবারের সন্তান দেবেন্দ্রলাল খানের সঙ্গে ঝাড়গ্রামে এসেছিলেন তিনি। ওই সময়ের আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, সে দিন ঝাড়গ্রামে ব্যবসায়ী নলিনবিহারী মল্লিকের বাড়িতে আতিথ্য গ্রহণ করে একটি টালির বাড়িতে বিশ্রাম নেন সুভাষচন্দ্র। বাড়িটি এখন শহরের বাছুরডোবা পেট্রল পাম্পের অফিস। দুপুরে বার-লাইব্রেরিতে আইনজীবীদের সঙ্গেও দেখা করেন তিনি। পুরনো সেই বার ভবনটি সংস্কার হয়ে এখন হয়েছে ‘প্লিডার্স বার অ্যাসোসিয়েশন, ঝাড়গ্রাম’-এর ভবন। ওই দিন বিকেলে ঝাড়গ্রাম শহরের লালগড় মাঠে জনসভাও করেছিলেন সুভাষচন্দ্র। তবে সেই মাঠের অবশ্য এখন অস্তিত্ব নেই। এলাকাটি দুর্গা ময়দান নামে পরিচিত। ঝাড়গ্রামে সভা সেরে সুভাষচন্দ্র সে দিনই ট্রেনে কলকাতায় ফিরে গিয়েছিলেন বলে জানা যায়।