মণিরাজ ঘোষ, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৩১ জানুয়ারি: জামাই ‘পাগল’ হবে কিনা জানা নেই; তবে নামেই পাগল হচ্ছেন শহরবাসী! মেদিনীপুর পৌরসভার পিঠে পুলি উৎসবে ‘জামাই পাগল’ পিঠে নিয়ে হাজির শহর মেদিনীপুরেই বাসিন্দা মৌমিতা নন্দী। আবার, খাদ্য রসিকদের হৃদয় ‘হরণ’ করতে হাজির ‘হৃদয় হরণ’ পিঠেও। বানিয়েছেন শহরের মহতাবপুরের টিয়া বারিক আর শম্পা দাস। এছাড়াও, কদম পুলি, বাহারি পাটিসাপটা, মুগ সাওলি, দুধ পুলি প্রভৃতি তো আছেই! সবমিলিয়ে, কনকনে শীতের মরসুমে মেদিনীপুর পৌরসভার তিন দিনের (৩০ জানুয়ারি -১ ফেব্রুয়ারি) ‘পিঠে পুলি উৎসব’ বেশ জমে গেছে শহরের বিদ্যাসাগর স্মৃতি মন্দির প্রাঙ্গণে। বিক্রিও হচ্ছে বেশ ভালোই। শুধু পিঠে নয়, মাশরুম পাকোড়া থেকে ভেছিটেবল চপ- মুখরোচক অনেক কিছুই মিলছে এই পিঠে পুলি উৎসবের ২০-টি স্টল থেকে।
তবে, আকর্ষণের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দুতে যে ‘জামাই পাগল’ আর ‘হৃদয় হরণ’-ই তা বলাই বাহুল্য! মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি) বিকেলে অতিরিক্ত জেলাশাসক (পঞ্চায়েত) মৌমিতা সাহা, মহকুমাশাসক মধুমিতা মুখার্জি, চেয়ারম্যান সৌমেন খানের হাত ধরে এই ‘পিঠে পুলি উৎসব’-র উদ্বোধন হয়েছে। প্রথম দিন থেকেই ‘জামাই পাগল’-র চাহিদা যে আশাতীত, মানছেন মৌমিতা। বুধবার (৩১ জানুয়ারি) পড়ন্ত বিকেলে ‘স্বয়ংসিদ্ধা’-র অন্যতম সদস্যা তথা ‘জামাই পাগল’ পিঠের প্রস্তুতকারক মৌমিতা-র অকপট স্বীকারোক্তি, “নাম আর বানানোর পদ্ধতির কিছুটা ধার করেছি youtube থেকে। তবে, তার সঙ্গে নিজের ভাবনা বা আইডিয়া মিশিয়ে বানিয়েছি এই জামাই পাগল পিঠে।” ‘অভিনব’ নামের এই পিঠে কেন? মৌমিতা রাখঢাক না করেই জানান, “মানুষ এখন নতুনত্ব খোঁজে! তাই এই অভিনব নামের পিঠে।” কি কি দিয়ে বানিয়েছেন? মৌমিতা বলেন, “ডিম, ময়দা, দুধ, ঘি প্রভৃতি দিয়ে তৈরি করেছি।” মৌমিতা শোনান, “বিক্রি বেশ ভালোই হচ্ছে। মনে হচ্ছে পিঠে-প্রেমীদের,ভালোই লেগেছে। দামও বেশি রাখিনি, মাত্র ১৫-টাকা। পিঠে ভাজার সঙ্গে সঙ্গেই সব বিক্রি হয়ে যাচ্ছে!”
অন্যদিকে, ‘হৃদয় হরণ’-র স্রষ্টা টিয়া বারিক বলেন, “আমিই এই পিঠে তৈরীর উদ্যোগ নিই। জানি নামেই মুগ্ধ হবেন পিঠে প্রেমীরা!” তবে কি ‘ঘ্রাণেন অর্ধ ভোজনং’ এর মতো? টিয়া বলেন, “না, তা ঠিক নয়। এই পিঠে খেতেও বেশ ভালো। ময়দা, দুধ, চিনি, এলাচ প্রভৃতি দিয়ে যত্ন সহকারে তৈরী করেছি। খাদ্য রসিকদের মন জয় করবেই। দামও খুব কম, মাত্র ১০ টাকা।” এই পিঠে দেখতেও তো হৃদয় বা হার্ট সাইজের (আকারের)? টিয়া, শম্পা মনে করিয়ে দেন, “বুঝতেই তো পারছেন, এখনকার দিনে খদ্দের বা ক্রেতা টানতে হলে নতুনত্ব ব্যাপারটা আনতেই হবে। তাই, আকর্ষণীয় নাম আর রূপেও মুগ্ধ করার চেষ্টা করেছি আমরা।” স্বনির্ভর গোষ্ঠীর অন্যতম সদস্যা টিয়া, শম্পা-র অবশ্য আক্ষেপ, “বেশ ভালোই বিক্রি হচ্ছে। তবে, আগামীকাল অর্থাৎ বৃহস্পতিবারই (১ ফেব্রুয়ারি) মেলা শেষ হয়ে যাবে। আর ক’দিন হলে ভাল হতো!” চেয়ারম্যান সৌমেন খান বলেন, “স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের আরো স্বাবলম্বী করতেই পৌরসভার এই উদ্যোগ। আমরা স্টল তৈরি থেকে প্রচার, সাজসজ্জা সহ সমস্ত পরিকাঠামো তৈরী করে দিয়েছি। পিঠে তৈরী করছেন ওঁরা। যা বেচাকেনা হবে, তার সবটাই ওঁদের।” আর, পৌরসভার এই উদ্যোগে খুশি মৌমিতা, টিয়া, শম্পা সহ ৪০টি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সকল স্বয়ংসিদ্ধারাই!