দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৮ জুন: নাবালিকা ধর্ষণ মামলায় অভিযুক্ত বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (Vidyasagar University) প্রাক্তন অধ্যাপক তথা বর্তমানে শিলচরের আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (Assam University) অধ্যাপক সুরথ কুমার মালিক-কে ২ দিনের পুলিশ হেফাজত শেষে ১৪ দিনের জেল হেফাজতে পাঠালেন মেদিনীপুর পকসো আদালতের বিচারক। বুধবার শুনানি শেষে বিচারক ১৪ দিনের জেল হেফাজতে পাঠিয়েছেন ধৃত অধ্যাপককে। উল্লেখ্য যে, একই আবাসনের বাসিন্দা, তাঁর দীর্ঘদিনের পরিচিত প্রতিবেশীর ৮ বছরের নাবালিকা মেয়েকে ধর্ষণ করার অভিযোগে রবিবার (২৫ জুন) বছর ৪০’র ওই অধ্যাপককে গ্রেপ্তার করেছিল মেদিনীপুর মহিলা থানার পুলিশ। পকসো (Protection of Children from Sexual Offences) আইনের ৪ ও ৬ নম্বর ধারায় তাঁকে গ্রেফতার করা হয় বলে জানা যায়। পুলিশের আবেদন অনুযায়ী, সোমবার মেদিনীপুর পকসো আদালত ২ দিনের পুলিশ হেফাজত মঞ্জুর করেছিল। প্রাথমিক তদন্ত ও জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ধৃতকে বুধবার ফের মেদিনীপুর আদালতে তোলা হলে বিচারক ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন। ১৪ দিন পর ফের তাঁকে আদালতে তোলা হবে।
ধৃত অধ্যাপকের আইনজীবী এদিন মেদিনীপুর আদালতে জানান, তাঁর মক্কেলকে ফাঁসানো হয়েছে। যদিও, পকসো আদালতের সরকারি আইনজীবীরা অভিযুক্ত পক্ষের দাবি নস্যাৎ করে দিয়েছেন। চূড়ান্ত রায়দানের আগে যে ধৃত অধ্যাপকের জামিন পাওয়ারও কোনো সম্ভাবনা নেই তাও জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট আইনজীবীমহল। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, গত ৮-৯ বছর ধরে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান (Political Science) বিভাগের অ্যাসিস্টেন্ট প্রফেসর (Assistant Professor) হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন অধ্যাপক সুরথ কুমার মালিক। গত তিনমাস হল তিনি অসমের শিলচরে অবস্থিত আসাম বিশ্ববিদ্যালয় (Assam University)- এর অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর (Associate Professor) হিসেবে যোগ দিয়েছেন। নিজের পেশার জগতে যথেষ্ট সফল সুরথ কুমার মালিক শিলচরের এই কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেওয়ার জন্য আপাতত এক বছরের জন্য লিয়েন নিয়েছিলেন বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। ওড়িশার বাসিন্দা সুরথ মাস তিনেক আগে আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দিলেও, তাঁর স্ত্রী ও ছেলে-মেয়ে মেদিনীপুর শহরের আবাসনেই থাকতেন। স্ত্রী ও দুই নাবালক সন্তানকে এবং নিজেদের আসবাবপত্র নিয়ে যাওয়ার জন্য গত ৫-৬ দিন আগে শিলচর থেকে মেদিনীপুর শহরে এসেছিলেন তিনি। রবিবার বিকেলের দিকে তাঁর কোয়ার্টারের ঠিক পাশের কোয়ার্টারের বাসিন্দা অর্থাৎ দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশীর আট বছরের নাবালিকা মেয়ে (তথা নিজের নাবালিকা মেয়ের বান্ধবীর সঙ্গে)’র সঙ্গে জোরপূর্বক শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন কিংবা ধর্ষণ করেন বলে অভিযোগ। এমনকি, ঘটনার কথা নিজের বাবা-মাকে জানালে ছোট্ট মেয়েটিকে মেরে ফেলার হুমকিও দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। এই ঘটনায় অসুস্থ হয়ে পড়া ওই নাবালিকা নিজের বাবা-মাকে সবকিছু জানালে, তাঁরা দ্রুত মেদিনীপুর মহিলা থানার দ্বারস্থ হন। রবিবার রাতেই ওই অধ্যাপককে গ্রেপ্তার করা হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রীরা জানিয়েছেন, “নিন্দা জানানোর কোন ভাষা নেই! পেশাগত দিক দিয়ে উনি সফল হলেও, ওঁর বিষয়ে আগেও নানা ধরনের কথা শুনেছি। কিন্তু, এটা কখনো ভাবিনি, ওঁর নিজের মেয়ের বয়সী নাবালিকার সঙ্গে এই ধরনের আচরণ করবেন। আমরা আপামর মেদিনীপুরবাসী সঠিক তদন্ত এবং উপযুক্ত বিচার চাই।”
অন্যদিকে, রবিবার রাত্রি সাড়ে ৯টা নাগাদ মেদিনীপুর শহরে এক মহিলার উপর অ্যাসিড হামলার ঘটনায় প্রধান অভিযুক্তকে সোমবার সকালেই গ্রেফতার করে মেদিনীপুর কোতোয়ালি থানার পুলিশ। মেদিনীপুর শহরের বাড় মানিকপুরের বাসিন্দা ধৃত সুভাষ চন্দ্র রায়-কে সোমবার দুপুরে মেদিনীপুর আদালতে তোলা হলে বিচারক তার পাঁচ দিনের পুলিশ হেফাজত মঞ্জুর করেছেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, অ্যাসিড হামলায় আক্রান্ত বছর ৪০’র ওই মহিলার বাড়িও বড়বাজার সংলগ্ন বাড় মানিকপুর এলাকায়। শহরের রবীন্দ্রনগর এলাকায় একটি দোকানে তিনি সহকারী হিসাবে কাজ করেন। ওই দিন রাতে ওই মহিলা তাঁর এক সহকর্মী মহিলার (বক্সীবাজারের বাসিন্দা) সঙ্গে হেঁটে হেঁটে ফিরছিলেন অরবিন্দ স্টেডিয়াম সংলগ্ন রাস্তা (রবীন্দ্রনগর) দিয়ে। মহিলার দাবি, রবিবার রাত্রি ৯টা ১৫ নাগাদ শহরের রবীন্দ্রনগরেরই অন্য প্রান্ত থেকে তিনি ও তাঁর সহকর্মী হেঁটে হেঁটে বাড়ি ফিরছিলেন। এমন সময় হঠাৎ দুই যুবক স্কুটি করে এসে তাঁর গায়ে অ্যাসিড ছুঁড়ে পালিয়ে যায়। তাঁর পিঠে ও দুই হাতে সরাসরি অ্যাসিডের আঘাত লাগে। তীব্র যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকেন তিনি। সামান্য আহত হন তাঁর সঙ্গে থাকা সহকর্মীও। ঘটনাস্থলের সামনেই তৃণমূল কার্যালয়ে ছিলেন কর্মীরা। ছিলেন আশেপাশের দোকানদাররাও। তাঁরাই তড়িঘড়ি দুই মহিলাকে উদ্ধার করে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানেই চিকিৎসা হয় ওই দুই মহিলার। রবিবার রাতেই ওই মহিলার স্বামী কোতোয়ালী থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন তাঁর ওই প্রতিবেশী যুবকের বিরুদ্ধে। তাঁর অভিযোগ ছিল, ওই যুবক বারবার তাঁদের উত্ত্যক্ত করত। প্রতিবাদ করায় তাঁর উপরও দু-তিনবার অ্যাসিড হামলা হয়েছে। কিন্তু, প্রমাণের অভাবে পুলিশ তাকে ধরতে পারেনি। এবার তাঁর স্ত্রী’র ওপর হামলা চলায়, পুলিশ ওই যুবককে গ্রেফতার করে নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে।