দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৪ ডিসেম্বর: প্রবীণ তৃণমূল কর্মীর পাকা ধান ঘরে তুলতে দিচ্ছেন না দলেরই অঞ্চল সভাপতি! উল্লেখ্য যে, দু’জনই শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের অনুগত কর্মী। একজনের দাবি, “সেই ‘৯৮ সাল থেকে দলটা করছি। যখন এই গ্রামে কেউ তৃণমূল করার সাহস পেত না, তখন থেকে আমরা দল করছি। সেটাই কি তাহলে অপরাধ?” অপরজন দলের বর্তমান অঞ্চল সভাপতি। তাঁর বিরুদ্ধেই এই ‘আজব ফতোয়া’ জারি করার অভিযোগ এনেছেন দলের প্রবীণ কর্মী। যদিও, সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করে, বিষয়টিকে ‘হাস্যকর’ বলে দাবি করেছেন তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি। ঘটনাটি পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার শালবনী ব্লকের শালবনী ৩ নং অঞ্চলের সিদাডিহি গ্রামের। গ্রামের বর্ধিষ্ণু কৃষক তথা দলের প্রবীণ কর্মী চিরঞ্জীব খানের অভিযোগ, গত একমাস ধরে তাঁকে প্রায় পাঁচ বিঘা জমির ধান কাটতে দিচ্ছেন না তাঁরই দলের (তৃণমূলের) অঞ্চল সভাপতি অসিত ঘোষ। কারণ, ধান কাটার আগে তাঁর অনুমতি নিতে হবে! আর তিনি অকারণে নতি-স্বীকার করতে রাজি নন। তাই, মাঠেই পড়ে পাকা ধান!

thebengalpost.net
মাঠেই পড়ে পাকা ধান:

চিরঞ্জীব খানের আরও অভিযোগ, বারবার ধান কাটার মেশিন নিয়ে এলেও অঞ্চল সভাপতির হুমকিতে তারা ভয়ে পালিয়ে যায়। প্রতি বছর ধান কাটার সময় এলেই এই ধরনের সমস্যা তৈরি করা হয় বলেও বিস্ফোরক অভিযোগ করেছেন তিনি। সারা বছর ধরেই এক প্রকার মানসিক ‘নির্যাতন’ করার অভিযোগও এনেছেন তিনি! এই বিষয়ে শালবনী ব্লক তৃণমূল, শালবনী থানা থেকে শুরু করে দলের জেলা সভাপতি ও জেলা পুলিশ-প্রশাসনের কাছেও লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন তিনি। শালবনী থানায় একটি GD-ও করেছেন। তবে, কোনো লাভ হয়নি বলে দাবি তাঁর। রবিবার এই বিষয়ে তৃণমূলের ব্লক সভাপতি নেপাল সিংহ জানিয়েছেন, “এরকম একটা অভিযোগ পাওয়ার পরই দলের তরফে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তাতে উনি সম্ভবত কিছুটা ধান কাটতে পেরেছেন। বাকিটা কেন কাটতে পারেননি, আমরা খোঁজ নিচ্ছি।” চিরঞ্জীব বাবুও জানিয়েছেন, তিনি অনেক কষ্টে আড়াই বিঘা জমির ধান কাটতে পেরেছেন। বাকি পাঁচ বিঘা জমির ধান কাটতে দেওয়া হয়নি। তা এখন ঝরে ঝরে মাটিতে পড়ছে!

রবিবার দুপুরে জেলা তৃণমূলের সভাপতি সুজয় হাজারা জানান, “উনি দলের জেলা কার্যালয়ে এসেছিলেন। আমার সাথে কথা বলে গেছেন। আমি খোঁজ নিয়ে দেখেছি, অভিযোগ অনেকাংশেই সত্য। এগুলো আমাদের দলবিরোধী কাজ। উনি তৃণমূল কর্মী বলেই নয়, অন্য দলের কর্মী হলেও এসবকে মান্যতা দেয় না দল। মা মাটি মানুষের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধায়ও এই সমস্ত কাজ বরদাস্ত করেন না। আমি শনিবারই এই বিষয়ে নির্দেশ দিয়েছি। আশা করছি উনি ধান কাটতে পারবেন। আগামীকালের মধ্যে যদি কোন সুরাহা না হয়, আমি নিজে উদ্যোগ নেব।” যদিও, এই সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন শালবনী ৩ নম্বর অঞ্চল তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি অসিত ঘোষ। তিনি বলেছেন সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন অভিযোগ! অন্যদিকে, শালবনী ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের একটি সূত্রে জানা গেছে, ওঁদের মধ্যে দীর্ঘদিনের কোন পারিবারিক বিবাদ বা ব্যক্তিগত আক্রোশ থাকতে পারে! এর সঙ্গে দলকে যুক্ত করা ঠিক নয়। এই বিষয়ে বিজেপির জেলা মুখপাত্র অরূপ দাসের দাবি, “সম্ভবত দলেরই কর্মী, ওই কৃষকের কাছে অঞ্চল সভাপতি কাটমানি চেয়েছিলেন। দেয়নি বলেই একঘরে করে রাখা হয়েছে। আমরা তো আগেই বলেছি, এই দলে নিজেদের কর্মীরাও কাটমানির হাত থেকে রেহাই পায়না!”

thebengalpost.net
অভিযোগের তীর তৃণমূল অঞ্চল সভাপতির দিকে: