দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৭ মার্চ: ১৪ বছরে বিয়ে। ১৫ বছর পড়তে না পড়তেই অন্তঃসত্ত্বা! এক জন বা দু’জন নয়; বুধবার এই ধরনের অন্তঃসত্ত্বা নাবালিকাদের যেন লাইন পড়ে যায় পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোনা গ্রামীণ হাসপাতালে। পরিস্থিতি দেখে মাথায় হাত ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক (BMOH) স্বপ্ননীল মিস্ত্রির! চরম ভর্ৎসনা করলেন নাবালিকার সঙ্গে আসা স্বামী, শাশুড়ি কিংবা পরিজনদের। এক নাবালিকা অন্তঃসত্ত্বা স্বীকার করে, “রং নম্বর থেকে ফোন এসেছিল। তারপর প্রেম হয়ে যায়! পালিয়ে বিয়ে করি। এখন বাড়িতে মেনে নিয়েছে।” আরেক নাবালিকা বলে, “বাবা-মা খুব গরীব। বিয়ে দিয়ে দিয়েছে। ভুল তো হয়েইছে। এখন কি আর করব বলো!” ঘটনাচক্রে গতকাল (মঙ্গলবার)-ই জেলায় বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে ‘১০৯৮’ এবং ‘১১২’ নম্বরের প্রচার সহ একাধিক পদক্ষেপের কথা জানিয়েছেন জেলাশাসক খুরশিদ আলী কাদেরী।

জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-‘২৪ অর্থবর্ষে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় ১০৪৩১ জন নাবালিকা গর্ভধারণ করেছিল। এর মধ্যে ১১৩০ জনের বয়স ছিল ১৫ বছরেরও কম! কিছুটা কমে চলতি অর্থবর্ষে এখনও পর্যন্ত জেলার ৯১৩৯ জন নাবালিকা অন্তঃসত্ত্বা হয়েছে। এর মধ্যে ২০৩ জনের বয়স ১৫ বছরের কম। জেলার মধ্যে চন্দ্রকোনা, ক্ষীরপাই, রামজীবনপুর, গড়বেতা আর কেশপুরের অবস্থা সবথেকে ভয়াবহ। বুধবার চন্দ্রকোনা-২ নং ব্লকের চন্দ্রকোনা গ্রামীণ হাসপাতালে দেখা যায়, অন্তত ৪-৫ জন নাবালিকা অন্তঃসত্ত্বা স্বাস্থ্য দপ্তরের কার্ডের জন্য এসেছে, যাদের বয়স ১৫ কিংবা ১৬! এছাড়াও, ১৯ বছরের নিচে আরও একাধিক নাবালিকা অন্তঃসত্ত্বাকে দেখা যায় এদিন। যা দেখে চরম ক্ষুব্ধ ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক স্বপ্ননীল মিস্ত্রি। এই নাবালিকাদের সঙ্গে আসা পরিজনদের চরম ভর্ৎসনা করেন তিনি। ১৬ বছরের এক নাবালিকার শাশুড়িকে তিনি বলেন, “ছেলেকে কি শিক্ষা দিয়েছিলেন? ১৮ বছরের কম বয়সী মেয়েকে বিয়ে করে নিয়ে চলে এলো? আপানারাই বা আটকাননি কেন?” মুখ কাঁচুমাচু করে মহিলা বলেন, “আমরা তো কিছুই বুঝতে পারিনি! ভাব-ভালোবাসা করে বিয়ে করেছে। এখন বলছে, পেটে বাচ্চা চলে এসেছে!” ওই নাবালিকা বলে, “আমার ফোনে রং নম্বর থেকে কল এসেছিল! তারপর প্রেম হয়ে যায়। পালিয়ে বিয়ে করি!”
BMOH স্বপ্ননীল মিস্ত্রি বলেন, “চন্দ্রকোনা-২ নং ব্লকের মহেশপুর, শ্রীকৃষ্ণপুর, ভগবন্তপুর, ঝাঁকরার অবস্থা সবথেকে খারাপ। ওইসব জায়গা থেকে মাসে ৩০-৪০ জন অন্তঃসত্ত্বা নাবালিকা আসে। বকাঝকা করি। এই বয়সে গর্ভধারণের ঝুঁকির বিষয়ে পরিবারের লোকজনদের বোঝানো হয়। বাধ্য হয়েই আমরা কার্ড (পোলিও বা টিকাকরণের কার্ড) ইস্যু করি! শিক্ষা এবং সচেতনতামূলক প্রচার- দুটোই প্রয়োজন।” বিডিও উৎপল পাইক বলেন, “এটা সত্যিই চন্দ্রকোনা, গড়বেতা প্রভৃতি এলাকায় বাল্যবিবাহের হার উদ্বেগজনক। আগের তুলনায় কিছুটা কমেছে ঠিকই, কিন্তু এখনও পরিস্থিতি খুব ভালো নয়। আমরা চেষ্টা করছি।” জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকারিক সৌম্যশঙ্কর ষড়ঙ্গী বলেন, “বাল্যবিবাহ এবং নাবালিকা বয়সে গর্ভধারণের ফলে মা এবং শিশুর নানা শারীরিক সমস্যা থেকে জীবনহানি সবকিছুই হতে পারে। জেলাশাসক ও জেলা পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে আমরা নিরন্তর চেষ্টা করছি এই হার আরও কমিয়ে আনার জন্য।” জেলাশাসক বলেন, “জেলার প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েত, বিডিও অফিস, থানা, হাসপাতাল, বাসস্ট্যান্ড, স্টেশন সর্বত্র বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে আমরা পোস্টার, হোর্ডিং দিচ্ছি। এই ধরনের খবর থাকলেই ১০৯৮ বা ১১২-তে ফোন করুন। বিদ্যাসাগরের মেদিনীপুরে বাল্যবিবাহের হার শূন্যতে নামিয়ে আনতেই হবে।”