দ্য বেঙ্গল পোস্ট বিশেষ প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৫ নভেম্বর: “ঠিক এক মাস আগেই, অক্টোবরের ৫ তারিখে পশ্চিম মেদিনীপুরে এসেছিলেন তিনি। ঘাটাল, দাসপুর, নাড়াজোল, রাজনগর প্রভৃতি এলাকার ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে! বলছিলেন, ‘এরকম বন্যা আমি দেখিনি’! স্থায়ী সমাধান চেয়েছিলেন। ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান অবিলম্বে বাস্তবায়িত করার দাবি করেছিলেন, সংবাদমাধ্যমের কাছেও! গতকাল রাত থেকেই শরীর-মন ভালো নেই! শুধু সেই দিনটির কথাই মনে পড়ছে। ভাগ্যিস একমাস আগে দেখাটুকু হয়েছিল! আসলে, প্রিয়দা-সুব্রতদা’র হাত ধরেই তো কংগ্রেসী রাজনীতিতে আসা। শুধু আমি কেন সত্তরের দশকে আমার মত বহু ছোট-মাঝারি-বড় নেতাই এই দুই ছাত্র নেতার হাত ধরে উঠে এসেছিল! আমাদের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও তো স্বয়ং গতকাল রাতে বলেছেন, তাঁর রাজনৈতিক জীবনে অন্যতম বড় বিপর্যয়!” শুক্রবার (৫ নভেম্বর) সকালে স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে বললেন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার অন্যতম বর্ষিয়ান তৃণমূল কংগ্রেস নেতা তথা জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ শ্যামপদ পাত্র। বললেন, “বঙ্গ রাজনীতির অন্যতম শ্রেষ্ঠ নেতা। প্রবীণ ও নবীন, দুই প্রজন্মের কাছেই সমান গ্রহণযোগ্য। আসলে তিনি তো শুধু নেতা তৈরি করেননি, নীতিও তৈরি করে গেছেন। পঞ্চায়েত নীতি থেকে নগরোন্নয়ন নীতি- মন্ত্রী ও কলকাতার মহানাগরিক হিসেবে সবটাই তিনি দেখিয়ে দিয়ে গেছেন! এরকম রাজনীতিবিদ বঙ্গ রাজনীতিতে আর আসবে কিনা সন্দেহ!” শ্যাম বাবু এও বললেন, “১৯৭২ সালে ঘাটাল কলেজে ভর্তি হওয়া, ছাত্র পরিষদের কর্মী হিসেবে সুব্রত দা’র সান্নিধ্যে আসা, সেদিনের আলোচনায় সেই সব কথাও ফিরে আসছিল। ঘাটাল তথা পশ্চিম মেদিনীপুরের অনেক প্রয়াত নেতার কথা বললেন! বয়সে আমার থেকে মাত্র ২-৩ বছরের বড় ছিলেন, দু’জন দু’জনের কুশল বিনিময় করলাম। তার ঠিক একমাসের মাথায়, এই খবর! বিশ্বাসই হচ্ছে না।”
ঠিক একইরকমভাবে স্মৃতিচারণা করেছেন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার রাজনীতিতে এই মুহূর্তে সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য ও অভিজ্ঞ তৃণমূল কংগ্রেস নেতা ও মন্ত্রী ডাঃ মানস রঞ্জন ভূঁইয়াও। তিনিও সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, “ষাট ও সত্তরের দশকের সেই ভয়াবহ নকশাল আন্দোলনের সময়ে প্রিয় দা (প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সী) ও সুব্রতা’র ছাত্র নেতৃত্বের হাত ধরে আমরা রাজনীতিতে এসেছি। সামনে থেকে প্রত্যক্ষ করেছি তাঁদের অসামান্য নেতৃত্ব। প্রিয় তার অনুপস্থিতিতে ইন্দিরা গান্ধীর কংগ্রেসকে একটা সময় বাংলায় একা টেনে নিয়ে গেছেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়। তিনি নেই, এখনও বিশ্বাস হচ্ছেনা!” শোক প্রকাশ করেছেন মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি সুজয় হাজরা ও ঘাটার সাংগঠনিক তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি আশিস হুদাইতরাও। শোক প্রকাশ করেছেন বাম-কংগ্রেস নেতারাও। এদিকে, দলীয় সূত্রে জানা গেছে, রবীন্দ্র সদনে পৌঁছেছে সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের নশ্বর দেহ! থাকবে দুপুর ২ টো পর্যন্ত। রবীন্দ্র সদন থেকে একডালিয়ার বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার আগে, বিধানসভায় নিয়ে যাওয়া হবে সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের দেহ। প্রসঙ্গত, মাত্র ২৬ বছর বয়সে বালিগঞ্জ কেন্দ্র থেকে ভোটে জিতে প্রথমবার বিধায়ক হয়েছিলেন তিনি। সংসদীয় রাজনীতিতে সাফল্যের সঙ্গে ৫০ বছর পদচারণা করা, বঙ্গ-রাজনীতির অন্যতম বর্ণময় ও বিরল চরিত্র সুব্রত মুখোপাধ্যায় (১৯৪৬-২০২১) বৃহস্পতিবার রাত ৯ টা ২২ মিনিটে প্রয়াত হয়েছেন! বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সুব্রত স্টেন্ট থ্রম্বোসিসে (একপ্রকার হৃদরোগ) আক্রান্ত হয়েছিলেন।