দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২ অক্টোবর: নারায়ণগড় আছে নারায়ণগড়েই! শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের ‘গোষ্ঠী-দ্বন্দ্বের’ও অন্যতম গড় বলা যেতে পারে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার এই নারায়ণগড় এলাকাটিকে। বিধানসভা ভোটে বিপুল আসনে জয়লাভ করার পরও জেলার রাজনীতিতে অন্যতম কাঁটা নারায়ণগড়ে দুই বিবাদমান গোষ্ঠী’র ক্ষমতাভোগের রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব! শুক্রবার নারায়ণগড়ের বিধায়ক সূর্যকান্ত অট্ট এবং মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি সুজয় হাজরা-র সামনেই সেই রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব আরও একবার প্রকট হয়ে গেল! ছিলেন নারায়ণগড়ের ব্লক তৃণমূল সভাপতি মিহির চন্দও। এই মিহির এবং সূর্য গোষ্ঠী-র মধ্যে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব-বিবাদ চিরকালের। এদিনও, ওই দুই গোষ্ঠী’র সমর্থকদের পারস্পরিক বিবাদ ও কলহে জেলা সভাপতির ডাকা দলের গুরুত্বপূর্ণ সাংগঠনিক বৈঠক হয়ে ওঠে রাজনৈতিক কুরুক্ষেত্র! চেয়ার ছোড়াছুড়ি থেকে হাতাহাতি শুরু হয়। মঞ্চ থেকে সূর্য এবং মিহির নিজেদের কর্মী সমর্থকদের উদ্দেশ্যে বারবার সংযত হওয়ার আবেদন করলেও লাভ হয়নি! হস্তক্ষেপ করতে হয় দলের নবনিযুক্ত জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা-কে। ডাকতে হয় পুলিশকেও! বেলদা গঙ্গাধর অ্যাকাডেমি স্কুলে আয়োজিত দলের এই বুথ ভিত্তিক পর্যালোচনা বৈঠক শেষমেশ ভেস্তেই যায়। জেলার অন্যান্য এলাকায় সফল হলেও, দলের স্বার্থে আয়োজিত জেলা সভাপতির এই সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে ডাকা বৈঠক নারায়ণগড়ে বিফলে যায়! এতেও শেষ নয়, বৈঠক শেষে বাড়ি ফেরার পথে সমর মেটিয়া নামক এক তৃণমূল কর্মীকে মার খেয়ে রক্তাক্ত হতে হয় অন্য গোষ্ঠীর হাতে। শুক্রবার রাতের এই ঘটনায়, বেসরকারি নার্সিংহোমে ওই কর্মীর চিকিৎসা করানো হয় বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, একুশের বিধানসভা নির্বাচনে নারায়ণগড় আসনে জয়ী হন তৃণমূল কংগ্রেসের সূর্যকান্ত অট্ট। মাত্র হাজার তিনেক ব্যবধানে বিজেপি প্রার্থী রমাপ্রসাদ গিরি-কে হারান তিনি! যদিও, গোষ্ঠী দ্বন্দ্বে জেরবার নারায়ণগড়ে তৃণমূলের জেতার সম্ভাবনা প্রায় ছিলোনা বলে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছিলেন। শেষমেশ সূর্য অট্ট জয়লাভ করেন এবং প্রথমবারের জন্য বিধায়ক হন। দলের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ আশা প্রকাশ করেছিল, এবার হয়তো নারায়ণগড়ের গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব মিটে যাবে! কারণ, সূর্য বিধায়ক হয়ে প্রশাসনিক বিষয় এবং উন্নয়ণমূলক কাজে মন দেবেন; আর ব্লক সভাপতি মিহির দেখবেন দলের সাংগঠনিক বিষয়! এমনটাই ভাবা হয়েছিল। কিন্তু, এটাযে নারায়ণগড়! তা আর হল কই। বিবাদ মিটলোনা! ক্ষমতা কুক্ষিগত করার সেই মরিয়া নেশায় ফের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। জেলা সভাপতির সামনেই দুই গোষ্ঠীর কর্মীদের অশান্তি। তারপর রাতে এক কর্মীকে মেরে রক্তাক্ত করে দেওয়ার অভিযোগ! ভেতরে ভেতরে ক্ষুব্ধ হলেও, ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করলেন তরুণ জেলা সভাপতি। সুজয় বললেন, “অঞ্চল সভাপতি ও বুথ সভাপতিদের নিয়ে একেবারে নিবিড়ভাবে প্রতিটি বুথের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে পর্যালোচনা হচ্ছে এই বৈঠকগুলিতে। এদিন বৈঠক ছিল নারায়ণগড় ব্লকে। ডাকা হয়েছিল অঞ্চল সভাপতি ও বুথ সভাপতিদের। সেরকমই বসার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু, অতি উৎসাহী বহু কর্মী এসে হাজির হয়েছিলেন! প্রায় ৮০০-৯০০ কর্মীর বসার ব্যবস্থা না থাকায়, একটু অশান্তি হয়েছিল। এটাও কখনও কাম্য নয়। এটা অগ্নিকন্যা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল। কর্মীদের আরও শৃঙ্খলাবদ্ধ হতে হবে। এই বিষয়ে উপযুক্ত বার্তা দেওয়া হয়েছে। তবে, রাতের মারামারির বিষয়টি ভালো করে খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে। যে বা যারাই করুক, এলাকায় কোনো অশান্তি বরদাস্ত করা হবেনা!”
ঘটনার পর পুলিশ: