দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১০ সেপ্টেম্বর: “কর্ণগড়ের রানি মাগো অস্ত্র ধরেছিল/ কলকাতার লোকে উকে চুয়াড় বলেছিল!” প্রচলিত এই লোকসঙ্গীতের ‘রানি’-ই হলেন মেদিনীপুরের শিরোমণি। তাঁর মৃত্যু (১৮১২)-র ১৬ বছর পর জন্মগ্রহণ (১৮২৮) করেছিলেন ঝাঁসির রানি লক্ষ্মীবাঈ। শিরোমণি ব্রিটিশ বিরোধী চুয়াড় বিদ্রোহের দ্বিতীয় পর্যায়ের (১৭৯৮-‘৯৯) নেত্রী তথা পরাধীন ভারতবর্ষের ‘প্রথম রাজনৈতিক বন্দিনী’ হিসেবে খ্যাত। পশ্চিম মেদিনীপুরের শালবনী ব্লকের কর্ণগড় এলাকায় অবস্থিত রানি শিরোমণির গড়। ঐতিহাসিক তাৎপর্যপূর্ণ এই গড়ের মধ্যে অবস্থিত বেশ কয়েকটি মন্দির বা স্থাপত্য শিল্প ইতিমধ্যেই ‘সংরক্ষিত পুরাকীর্তি’ বা ‘স্টেট প্রটেক্টেড মনুমেন্ট’-এর মর্যাদা পেয়েছে। গড়ে উঠেছে একটি হেরিটেজ উদ্যান বা পার্কও। তবে, বর্তমানে তার হাল কার্যত ‘বেহাল’। এবার সেই গড়ের সংস্কার ও সংরক্ষণের জন্য আড়াই কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে রাজ্য সরকার। ইতিমধ্যে টেন্ডার প্রক্রিয়াও সম্পন্ন হয়েছে।
পূর্ত দপ্তরের অধীনে আগামী ১০ মাসের মধ্যেই এই কাজ সম্পূর্ণ হবে। গড়ের ভেতরে অবস্থিত ‘হাওয়া মহল’ (বা, জলহরি), আটচালা মন্দির সহ বেশ কিছু স্মৃতিসৌধ সংস্কার ও সংরক্ষণ করা হবে বলে জানা গেছে শালবনী পঞ্চায়েত সমিতি তথা ব্লক প্রশাসন সূত্রে। অন্যদিকে, প্রায় ২৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে গড়ের ভিতরে থাকা কটেজগুলির সংস্কার করবে পঞ্চায়েত সমিতি। এজন্যও দরপত্র (টেন্ডার) আহ্বান করা হয়েছে। ফলে পুজোর আগেই খুশির হাওয়া জঙ্গলমহল শালবনীতে। আগামী বছরের পুজোর আগেই রানি শিরোমণির গড় এক ঐতিহাসিক পর্যটন কেন্দ্র রূপে ধরা দেবে বলেও আশাবাদী তাঁরা।
প্রসঙ্গত, অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষলগ্নে মেদিনীপুর, শালবনী, গড়বেতা, আনন্দপুরের কৃষকদের ঐক্যবদ্ধ করে কর্ণগড়ের দুর্গ থেকেই কৃষক বিদ্রোহের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন রাজা অজিত সিংহের দ্বিতীয় স্ত্রী রানি শিরোমণি। অত্যাচারী ইংরেজরা আদিম ও অন্ত্যজ জনজাতির এই কৃষক বিদ্রোহকে ঘৃণাভরে ‘চুয়াড় বিদ্রোহ’ নাম দেয়। আর শিরোমণিকে চুয়াড় বিদ্রোহের নেত্রী ঘোষণা করা হয়। ১৭৯৯ তাঁকে ‘বন্দী’ করে ব্রিটিশ বাহিনী। ১৮১২ খ্রিস্টাব্দের ১৭ সেপ্টেম্বর (২ আশ্বিন) বন্দীদশাতেই মেদিনীপুরের আবাসগড়ে মৃত্যু হয় রানি শিরোমণির। তাঁর স্মৃতিধন্য কর্ণগড়ের সেই জরাজীর্ণ দুর্গকে কেন্দ্র করে বছর পাঁচেক আগে ঐতিহাসিক পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয় পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীর ইচ্ছেতেই গড়ে তোলা হয় রানি শিরোমণি পার্ক। সংস্কার করা হয় গড়ের ধ্বংসাবশেষ। তৈরি হয় ৯টি কটেজ। চুক্তির ভিত্তিতে নিয়োগ করা হয় বেশ কয়েকজন কর্মীকে। যদিও, অতিমারী পর্বের পরই ভেঙে পড়ে সার্বিক পরিকাঠামো। গত কয়েক বছর ধরেই গড় সংস্কারের দাবি তোলেন স্থানীয় বাসিন্দারা সহ বিভিন্ন সংস্থা। বছরখানেক আগে ফের রানি শিরোমণির গড়ের হাল ফেরানোর উদ্যোগ নেয় বর্তমান জেলা প্রশাসন। গড় দেখভালের দায়িত্ব দেওয়া হয় শালবনী পঞ্চায়েত সমিতিকে। সেইসঙ্গেই নবরূপে গড় সংস্কারের জন্য রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন জানানো হয়। তিন-চার মাস আগেই সেই অনুমোদন মেলে। পূর্ত দপ্তরের তরফে বরাদ্দ হয় প্রায় আড়াই কোটি (২ কোটি ৪২ লক্ষ ৬৭ হাজার) টাকা। গড় সংস্কারের জন্য জুলাই মাসে দরপত্র আহ্বান করা হয়। সম্প্রতি সেই প্রক্রিয়াও সম্পন্ন হয়েছে। আগামী ৩০০ দিন বা ১০ মাসের মধ্যেই পূর্ত দপ্তর এই কাজ সম্পূর্ণ করবে বলে জানিয়েছেন শালবনীর বিডিও রোমান মন্ডল। তিনি এও জানিয়েছেন, “আগামী বছর পুজোর আগেই নবরূপে সেজে উঠবে রানি শিরোমণির ঐতিহাসিক গড়।” তিনি এও মনে করিয়ে দেন, “মাসখানেক আগেই গড়ে উদ্ধার হওয়া ‘পদচিহ্ন’কে রাজ্যের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের মিউজিয়ামে স্থান দেওয়ার আবেদন জানিয়েছে জেলা প্রশাসন। শালবনী পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি নেপাল সিংহ বলেন, “স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রানি শিরোমণির বীরগাথা সম্পর্কে সম্পূর্ণ ওয়াকিবহাল। তাঁর উদ্যোগ ও অনুপ্রেরণাতেই আবারও শিরোমণির স্মৃতিধন্য এই গড়কে সাজিয়ে তুলতে আমরা বদ্ধপরিকর।” উল্লেখ্য যে, গড়ের অদূরেই আছে সুপ্রাচীন মা মহামায়ার মন্দির। সেখানে প্রতিদিনই বহু ভক্তের সমাগম হয়। গড়ের সংস্কার হলে পর্যটনকেন্দ্র হিসেবেও এই এলাকার গুরুত্ব বাড়বে বলে দাবি শালবনীর বাসিন্দা তথা পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন কর্মাধ্যক্ষ সন্দীপ সিংহ প্রমুখের।
দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১০ সেপ্টেম্বর: জঙ্গলমহলবাসীর প্রিয় হাতি রামলাল। খাবারের খোঁজে এদিক-ওদিক…
দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১০ সেপ্টেম্বর: এযেন সেই ছোটবেলার চোর-পুলিশ খেলা! সামনে দৌড়চ্ছেন…
দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৭ সেপ্টেম্বর: প্রায় ৯ বছর পর অনুষ্ঠিত হচ্ছে স্কুল…
দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৫ সেপ্টেম্বর: "আমার বাড়ি মুর্শিদাবাদ, গত দুই দিন আগে…
দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৪ সেপ্টেম্বর: দেশের সেরা কলেজের তালিকায় ৪২-তম স্থানে শহিদদের…
দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৪ সেপ্টেম্বর: "তোমরা যাকে মহিষাসুর বলো, আমরা তাকেই বলি…