দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৮ আগস্ট: তেলেগু ভাষা জানেনা। বলতেও পারেনা। এই ‘অপরাধেই’ ছেলের ওপর অত্যাচার চালিয়ে তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের হোস্টেলের ১১ তলা থেকে ফেলে মেরে ফেলা হয়েছে! যাদবপুর কান্ডে সারা রাজ্য তথা দেশ যখন উত্তাল; ঠিক তখনই গত মাসখানেক আগে (২৪ জুলাই) অন্ধ্রপ্রদেশের বিজয়ওয়াড়ার বিখ্যাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছেলের রহস্য-মৃত্যু নিয়ে আবারও একবার বিস্ফোরক অভিযোগ করলেন মেদিনীপুর শহরের (গোলকুঁয়াচকের) একটি আবাসনের বাসিন্দা (যদিও, স্থায়ী বাসিন্দা বারাসাতের) তথা মেদিনীপুর হোমিওপ্যাথি মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক (তথা অধ্যাপক) ডঃ সুদীপ চৌধুরী। বৃহস্পতিবার ডঃ চৌধুরী এও জানিয়ে দেন, র‌্যাগিং (Ragging)’র বিরুদ্ধে তিনি লড়বেন। হায়দরাবাদ হাইকোর্টে খুব শীঘ্রই মামলা দায়ের করবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি। তিনি এও জানান, “আমার ছেলেও মারণ র‌্যাগিং এর বলি হয়েছে। তবে, ঘটনাটি ভিন রাজ্যে ঘটেছে বলে, যাদবপুরের মতো হাইলাইট হয়নি।” অন্যদিকে, ঘটনার তদন্তের দাবি জানিয়ে পরিবারের তরফে দেশের প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এবং রাজ্যপালকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। এখনও পর্যন্ত তাঁরা কোনও রকম তদন্তের আশ্বাস পাননি। শুধুমাত্র প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে অভিযোগের প্রাপ্তি স্বীকার করে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তবে, আগামী সপ্তাহে পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার এই বিষয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানিয়েছেন সুদীপ বাবু।

thebengalpost.net
সৌরদীপ চৌধুরী :

প্রসঙ্গত, চলতি বছরই মেদিনীপুর কলেজিয়েট স্কুল থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে সৌরদীপ। এরপর, কম্পিউটার সায়েন্সের বি.টেক কোর্সে অন্ধ্রপ্রদেশের বিজয়ওয়াড়ার কে.এল বিশ্ববিদ্যালয়ে (K.L University) ছেলে সৌরদীপ-কে ভর্তি করেছিলেন সুদীপ বাবু। তাঁর বছর ১৯-র মেধাবী ছেলেকে ভয়াবহ র‍্যাগিংয়ের শিকার হতে হয়েছিল বলে অভিযোগ ওই চিকিৎসকের। তাঁর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত মাসের ১৬ জুলাই (২০২৩) তাঁরা (চিকিৎসক ডঃ চৌধুরী ও তাঁর স্ত্রী) ছেলেকে নিয়ে বিজয়ওয়াড়ায় পৌঁছেছিলেন। ১৭ জুলাই সৌরদীপ ভর্তি হয় বিশ্ববিদ্যালয়ে। ১৮ জুলাই থেকে হোস্টেলে থাকতে শুরু করে সে। ক্লাসও করে।ছেলেকে রেখে ২১ জুলাই বাবা-মা ফিরে আসেন মেদিনীপুরে। ২৪ জুলাই দুপুর দেড়টা নাগাদ শেষবারের মতো কথা হয় সৌরদীপের সাথে তাঁর পরিবারের। বিকেল ৩টা ৪৫ নাগাদ সৌরদীপের বাবা ডঃ সুদীপ চৌধুরীর ফোনে এক অচেনা নম্বর থেকে ফোন আসে। ফোনে তাঁকে জানানো হয়, সৌরদীপ হস্টেলের ১১ তলা থেকে পড়ে গেছে। ছেলের অকাল মৃত্যুতে শোকাহত হয়ে পড়েছেন তাঁর বাবা – মা। তবে, এর শেষ দেখে ছাড়বেন বলেও প্রতিজ্ঞা করেছেন ডক্টর চৌধুরী। তিনি বলেন, সৌরদীপ যে ঘরের ব্যালকনি থেকে নিচে পড়ে, সেই ঘরের নম্বর ১১১৮। কিন্তু, সৌরদীপ থাকত ১১১৬ নম্বর ঘরে। সুদীপ বাবুর প্রশ্ন কি কারণে সৌরদীপ নিজের ঘরে ছেড়ে পাশের ঘরে গেল? যদিও, এই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি কলেজ কর্তৃপক্ষ থেকে নিরাপত্তারক্ষীদের মধ্যে কেউই। তাঁর অভিযোগ, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট তাঁকে দেওয়া হয়নি। একটি কাগজে শুধু লিখে দেওয়া হয়েছিল ‘অস্বাভাবিক মৃত্যু’ বলে। ফলে, এ রাজ্যে দাহ করার সময় অসুবিধের মুখে পড়তে হয় গোটা পরিবারকে। কলকাতা পুলিশের হেডকোয়ার্টার লালবাজার থেকে বিশেষ অনুমতি নিয়ে শেষমেশ কেওড়াতলা শ্মশানে দাহ করা হয়।

পুনরায় ময়নাতদন্ত করার ইচ্ছে থাকলেও, আইনি জটিলতার জন্য তা হয়নি বলে অভিযোগ ডক্টর চৌধুরীর। আরো কয়েকদিন মৃতদেহ পিস হেভেনে রাখতে হত। এদিকে, ছেলেকে হারিয়ে এমনিতেই শোকাহত ছিলেন তাঁরা। তার সঙ্গে মৃতদেহ আনতে যাওয়া এবং নিয়ে আসার জন্য যে ধকল তাঁকে সইতে হয়েছিল, তা সামলে উঠতে না পেরেই ছেলের মৃতদেহ দাহ করেন বলে জানান ডঃ চৌধুরী। ছেলের ডেথ সার্টিফিকেট এখনও দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করছেন তিনি। তাঁকে ওইদিন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হয়নি বলেও অভিযোগ সুদীপ বাবুর। নিষেধ করা হয়েছিল হস্টেলে যেতেও। এতেই সন্দেহ বাড়তে থাকে তাঁর। বারবার বলার পর পুলিশের তরফে সাদা কাগজে তাঁকে অভিযোগ দায়ের করতে বলা হয় এবং অভিযোগ দায়ের করার পর রিসিভ কপিও দেওয়া হয়নি। বাধ্য হয়েই ফোনে ছবি তুলে রেখেছিলেন। ছেলের জিনিসপত্রও তাঁর সামনে নিয়ে আসা হয়েছিল বলার আগেই। তবে, অ্যাম্বুলেন্স ভাড়ার ৪০ হাজার টাকা কলেজ কর্তৃপক্ষ মিটিয়ে দেয়। এমনকি, কয়েকদিন আগে ভর্তি ফি বাবদ নেওয়া ১ লক্ষ ৬০ হাজার টাকাও ফেরৎ দেওয়া হয়েছে বলে জানান ডঃ চৌধুরী। এনিয়ে অবশ্য, শর্ত দেওয়া হয়েছিল, তাঁকে লিখে দিতে হবে ছেলের মৃত্যু নিয়ে তাঁর কোনো অভিযোগ নেই! অন্যদিকে, সৌরদীপ তার বাবা-মা’কে বলেছিল তাকে হেনস্থা করা হচ্ছে। তেলুগু ভাষা না জানায় হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে তাকে। ডক্টর সুদীপ চৌধুরী বলেন, ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ার সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার। তেলেগু সিনেমার এক অভিনেতা তথা রাজনৈতিক ভাবে প্রভাবশালী ব্যক্তির কলেজ এটি। তাঁর অভিযোগ, উনি একজন মাফিয়া। তাঁর মুখ বন্ধ করার জন্য চেষ্টা চলছে। তিনি এও জানান, তাঁর ছেলের মৃত্যু হয়েছিল ২৪ জুলাই। ২৭ জুলাই একইভাবে অপর এক ভিন রাজ্যের পড়ুয়াকেও মেরে ফেলা হয়! সেই, তদন্ত ধামাচাপা দিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ৩০ জুলাই থেকে এক মাসের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছুটি ঘোষণা করেছে বলেও অভিযোগ করেছেন মেদিনীপুর হোমিওপ্যাথি মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক ডঃ সুদীপ চৌধুরী। এই সমস্ত তথ্য নিয়েই তিনি হায়দ্রাবাদ হাইকোর্টের দ্বারস্থ হবেন বলে জানান। ইতিমধ্যে, কলকাতায় গিয়ে তিনি আইনজীবীদের সাথে কথাও বলে এসেছেন বলে জানান সৌরদীপের বাবা ডক্টর সুদীপ চৌধুরী।

thebengalpost.net
মেদিনীপুর হোমিওপ্যাথিক মেডিক্যাল কলেজে ডক্টর সুদীপ চৌধুরী (২৭ জুলাইয়ের ছবি) :