Categories: Uncategorized

Midnapore: পিংলার বাজি কারখানায় বিস্ফোণে মৃত্যু হয়েছিল ১৩ জনের; অভিযুক্ত ৩ জনের ১৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড! ‘CID ফাঁসিয়েছে, হাইকোর্ট যাব’, দাবি সাজাপ্রাপ্তের স্ত্রী-র

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২১ আগস্ট: ২০১৫ সালের ৬ মে। রাত্রি ৯-টা নাগাদ পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলা থানার ব্রাহ্মণবাড় গ্রামে রাম মাইতির (রামপদ মাইতি) বাজি কারখানায় ভয়াবহ বিস্ফোরণে কেঁপে উঠেছিল প্রায় গোটা এলাকা। ভয়ঙ্কর এই বিস্ফোরণে মৃত্যু হয়েছিল কারখানার মালিক রামপদ মাইতি, তাঁর স্ত্রী সহ ১৩ জনের! এর মধ্যে, ১০ জনই ছিল মুর্শিদাবাদ থেকে আসা শিশু শ্রমিক। মর্মান্তিক সেই ঘটনার প্রায় ৮ বছর পর, গত শনিবার (১৯ আগস্ট) রায়দান করেন মেদিনীপুর জেলা আদালতের প্রথম অতিরিক্ত জেলা দায়রা বিচারক সেলিম সাহিল। ওই দিন অভিযুক্ত তিন জনকেই, যথাক্রমে- রঞ্জন মাইতি, নিমাই মাইতি এবং শেখ সুরজ-কে দোষী সাব্যস্ত করেন বিচারক। আজ, সোমবার (২১ আগস্ট) দোষী সাব্যস্ত তিনজনের সাজা ঘোষণা করেন বিচারক সেলিম সাহিল। বে-আইনিভাবে বিস্ফোরক পদার্থ মজুদ করার অপরাধে অর্থাৎ ১৯০৮ সালের বিস্ফোরক পদার্থ আইন (Explosive Substances Act, 1908) অনুযায়ী অভিযুক্ত ৩ জনেরই ১৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং ১০ হাজার টাকা জরিমানা (অনাদায়ে আরও ৬ মাসের সশ্রম কারাদণ্ড)-র সাজা ঘোষণা করেন বিচারক। এছাড়াও, আরও প্রায় ১১-টি ধারায় দোষী সাব্যস্ত ওই ৩ জনের সাজা ঘোষণা করা হয়। সমস্ত সাজাগুলি একই সঙ্গে চলবে বলে জানিয়েছেন সরকার পক্ষের আইনজীবী দেবাশীষ মাইতি। তবে, আসামীরা ইতিমধ্যেই যেহেতু ৮ বছর জেলে কাটিয়ে ফেলেছেন; সেক্ষেত্রে ‘সশ্রম কারাদণ্ডে’র এই সাজা বাকি ৭ বছরের জন্য প্রযোজ্য হবে বলেও জানান তিনি। ঘটনায় মৃত ১০ জন শিশু শ্রমিকের প্রত্যেকের পরিবারকে ২ লক্ষ টাকা করে দেওয়ার জন্য সরকারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলেও জানান আইনজীবীরা।

সাজা ঘোষণার পর:

এদিন বিকেল ৩টা নাগাদ বিচারক সাজা ঘোষণা করার পরই, মেদিনীপুর আদালত চত্বরে কান্নায় ভেঙে পড়েন নিমাই মাইতির স্ত্রী সুলেখা মাইতি সহ রঞ্জন মাইতি ও শেখ সুরজের পরিবারের সদস্যরা। তদন্তকারী CID টিম এবং স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ করে বছর ৫২-র নিমাই মাইতি-র স্ত্রী সুলেখা মাইতি বলেন, “সিআইডি আমাদের ফাঁসিয়ে দিল। আমাদের কাছে ২০ লক্ষ টাকা চেয়েছিল। দিতে পারিনি বলেই আমার স্বামী ও ভাশুর-কে ফাঁসিয়ে দিয়েছে। আমরাও তৃণমূল করি। কিন্তু, স্থানীয় বড় বড় তৃণমূল নেতারা নিজেদের গা বাঁচাতে, আমাদের ঘাড়ে দোষ চাপিয়েছে। আমরা বারবার সিবিআই (CBI) তদন্তের দাবি করে এসেছি। বিচারককেও সব কাগজপত্র দিয়েছি। বারবার অনুরোধ করেছি। কিন্তু, আমাদের কোন কথাই শুনলেন না। আমরা হাইকোর্টে যাব। সিবিআই তদন্তের দাবি জানাবো।” তাঁর সংযোজন, “এই কারখানা ছিল রামপদ মাইতির। আমার স্বামী (নিমাই মাইতি) আর ভাশুরের (রঞ্জন মাইতি) মুরগির দোকান। এখনও আমার ছেলে (১৪ বছর বয়সী) সেই দোকান চালায়। ঘটনার দিন আমার স্বামী দোকানেই ছিল। আর, ভাসুর ছিল তার মেয়ের বাড়িতে (জলচকে)। পিংলা থানার ওসি (সেই সময়কার) আর এলাকার তৎকালীন তৃণমূল নেতা গৌতম জানা (এখন বিজেপি করেন বলে অভিযোগ)-র চক্রান্তে আমার স্বামী আর ভাসুরকে গ্রেফতার করা হয়। রাম মাইতির ওই কারখানা থেকে পুলিশ আর গৌতম জানা সহ এলাকার কিছু তৃণমূল নেতা মাসে মাসে টাকা নিতো। পুলিশের মদতেই কারখানা চলতো। আমাদের পরিবারের সকলেই নির্দোষ। ওই কারখানার সঙ্গে যদি আমাদের কোন সম্পর্ক থাকতো, তাহলে আমাদের পরিবারের কেউ না কেউ তো আহত বা নিহত হতো! এই রায় আমরা কিছুতেই মেনে নেব না। আমরা হাইকোর্টে, প্রয়োজনে সুপ্রিম কোর্টে যাব।” বিচারকের কক্ষ থেকে বেরিয়ে সাজাপ্রাপ্ত নিমাই মাইতি ও রঞ্জন মাইতি এবং তাঁদের আইনজীবী প্রসূন দাস অধিকারীও একই দাবি করেছেন।

আদালত চত্বরে কান্নায় ভেঙে পড়েন সুলেখা মাইতি :

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের ৬ মে পিংলার ওই অবৈধ বাজি কারখানায় বিস্ফোরণ আর ১৩ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু ঘিরে রাজ্য রাজনীতি উত্তাল হয়ে উঠেছিল। বিস্ফোরণের তীব্রতা এতটাই ছিল যে, মৃতদের দেহের অংশ গাছের উপর ঝুলতে দেখা গিয়েছিল! সেই সময় পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার পুলিশ সুপার ছিলেন, বর্তমান বিজেপি নেত্রী ভারতী ঘোষ। বিরোধীদের অভিযোগ ছিল শাসকদল আর পুলিশের মদতেই ওই অবৈধ বাজি কারখানা চলতো, মোটা অঙ্কের মাসোহারা-র বিনিময়ে। বিস্ফোরণে মৃত্যু হয় ওই কারখানার মালিক রামপদ মাইতি ও তারঁ স্ত্রী এবং কারখানার প্রধান কর্মচারী শুভেন্দু ভক্তা সহ কারখানায় কর্মরত মুর্শিদাবাদ জেলার ১০ জন শিশু শ্রমিকের। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী তথা পুলিশ মন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে ঘটনার তদন্তে নামে সিআইডি। জলচক থেকে এলাকার সক্রিয় তৃণমূল নেতা রঞ্জন মাইতি এবং ব্রাহ্মণবাড় গ্রাম থেকে তাঁর ভাই নিমাই মাইতি-কে গ্রেফতার করা হয়। এছাড়াও, শিশু শ্রমিক যোগান দেওয়ার অপরাধে, মুর্শিদাবাদ জেলা থেকে শেখ সুরজ-কে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রায় ৮ বছর ধরে মামলা চলে মেদিনীপুর আদালতে। গ্রামের অসংখ্য মানুষ সাক্ষী দেন। তাঁদের মধ্যে অনেকেই নাকি দাবি করেছেন, এলাকার তৃণমূল নেতা রঞ্জন মাইতির মদতেই রামপদ মাইতি বাজি কারখানার আড়ালে বোমা তৈরি করতেন! শেষ পর্যন্ত গত শনিবার অভিযুক্ত তিন জনকেই দোষী সাব্যস্ত করেন বিচারক এবং সোমবার তাঁদের সাজা ঘোষণা করেন।

রঞ্জন মাইতি :

News Desk

Recent Posts

Midnapore: শিক্ষা, সাহিত্য, সঙ্গীতের সাথেই মিশে গেল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ছটা; ঈশ্বরের আলোয় আলোকিত ‘বিদ্যাসাগর পুরস্কার’-এর মঞ্চ

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৫ সেপ্টেম্বর: শিক্ষা, সাহিত্য, সঙ্গীত ও সমাজজীবনে উল্লেখযোগ্য অবদানের…

19 hours ago

Midnapore: সকাল থেকেই চলছিল অভিযান, পুজোর আগেই কেশিয়াড়ি থেকে পাকড়াও মহারাষ্ট্রের দুই কুখ্যাত দুষ্কৃতী

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৩ সেপ্টেম্বর: গোপন সূত্রে খবর পেয়ে মঙ্গলবার সকাল থেকেই…

2 days ago

IIT Kharagpur: শত চেষ্টাও বিফলে, ন’মাসে ছয় পড়ুয়ার অস্বাভাবিক মৃত্যু IIT খড়্গপুরে; ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধার গবেষকের

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২১ সেপ্টেম্বর: ফের ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধার আইআইটি খড়্গপুরে! শনিবার…

4 days ago

Midnapore: দুর্ভেদ্য নাকা পয়েন্ট, স্টেশন চত্বরে বসছে CCTV; মেদিনীপুরে কুড়মি আন্দোলন ঠেকাতে কড়া জেলা পুলিশ ও রেল

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৯ সেপ্টেম্বর: 'কেউ কথা রাখেনি..!' না রাজ্য সরকার না…

7 days ago

IIT Kharagpur: বিশ্ব উষ্ণায়ন আর মানব সভ্যতার বিবর্তন, বনাঞ্চলে ব্যাহত সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়া; IIT খড়্গপুরের গবেষণায় উঠে এলো চমকপ্রদ তথ্য

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, খড়্গপুর, ১৯ সেপ্টেম্বর: গত কয়েক বছরে সবুজায়নে উল্লেখযোগ্য সাফল্য পেয়েছে ভারত।…

7 days ago

Midnapore: বাড়ি নয় যেন ‘হাজারদুয়ারি’! কোটি কোটি টাকা প্রতারণা করে সপরিবারে ‘ফেরার’ বেলদার স্বর্ণ ব্যবসায়ী

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৬ সেপ্টেম্বর: বিশাল জায়গার উপর প্রাসাদোপম বাড়ি। উঁচু পাঁচিল…

1 week ago