তনুপ ঘোষ, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৮ আগস্ট: ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ‘বংশধর’ কে? এই নিয়েই পশ্চিম মেদিনীপুরর (ঘাটালের) বীরসিংহ গ্রামে বিদ্যাসাগর স্মৃতি মন্দিরে দুই ব্যক্তির মধ্যে ‘বেনজির’ টানাটানি! দু’জনেরই দাবি তিনিই বিদ্যাসাগরের ‘উত্তরসূরী’। সোমবার সকাল থেকে বিকেল, বিদ্যাসাগর স্মৃতি মন্দিরে এই নিয়েই ‘দুই দাবিদার’ এর মধ্যে চললো তুমুল বাকবিতণ্ডা। আর, তা দেখতেই জমে যায় ভিড়! সমস্ত দিক খতিয়ে দেখে শেষমেষ বিদ্যাসাগরের জন্মভূমির বাসিন্দারা একটি স্থির সিধান্তে আসেন, হঠাৎ করে দেশ-বিদেশে ‘বিখ্যাত’ হয়ে ওঠা অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায় নয়; প্রসাদ বন্দোপাধ্যায়-ই হলেন বিদ্যাসাগর মহাশয়ের প্রকৃত উত্তরসূরী।
প্রসঙ্গত, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ঘাটালের বীরসিংহ গ্রাম ছাড়িয়ে, জেলা থেকে শুরু করে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রান্তেও সকলেই এখন বিদ্যাসাগর মহাশয়ের বংশধর হিসেবে অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায়-কেই চেনেন। সেই মতোই বছরের পর বছর ধরে চলে আসছিল সবকিছুই। বিদ্যাসাগরের বংশধর বা উত্তরসূরী (‘নাতির ছেলে’) হিসেবেই তিনি ডাক পাচ্ছিলেন বিভিন্ন জায়গা থেকে। বিভিন্ন অনুষ্ঠানের পোস্টারেও ছবি দিয়ে লেখা হতো অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম। এদিকে, সোমবার বীরসিংহের বিদ্যাসাগর স্মৃতি মন্দিরে প্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেন, তিনিই বিদ্যাসাগর মহাশয়ের নাতির ছেলে। তিনি তথ্যপ্রমাণ দিয়ে প্রমাণও করেন যে, তিনি বিদ্যাসাগর মহাশয়ের ছোট ভাই ঈশান চন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাতির ছেলে। বেশ কিছুদিন ধরেই এই নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে চলছিল টানাটানি। অবশেষে সোমবার দুপুর নাগাদ উভয়পক্ষই এসে পৌঁছন বীরসিংহ গ্রামে। আর সেখানেই উভয়পক্ষ মাইক্রোফোন হাতে, বীরসিংহ গ্রামের মানুষের সামনে একে অপরের তথ্যপ্রমাণ তুলে ধরা শুরু করেন।
অমিতাভ বন্দোপাধ্যায় তুলে ধরেন, তাঁর বংশগত ইতিহাস। অপরদিকে, প্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়ও তুলে ধরেন তাঁর বংশগত ইতিহাস। দীর্ঘক্ষণ স্মৃতিমন্দিরে চলে এমনই নাটকীয় ঘটনা। এক কথায় ‘বিদ্যাসাগর মহাশয়’-কে নিয়েই টানাটানি! তবে, শেষমেষ জানা যায়, বিদ্যাসাগর মহাশয়ের বংশধর তথা ঈশানচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাতির ছেলে প্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়-ই। প্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ, অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায় বিদ্যাসাগর মহাশয়ের বংশের কেউ নন। উনি মিথ্যে প্রচার করছেন। এমনকি, বিদ্যাসাগর মহাশয় প্রচার-বিমুখ ছিলেন বলেই প্রসাদ বাবুরা কখনোই সামনে আসেননি! অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মিথ্যে নাটকের জন্যই তাঁরা শেষ পর্যন্ত সামনে আসতে বাধ্য হয়েছেন। এদিন অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায়কে তাঁরা আবেদন জানান, কখনো যেন তিনি বিদ্যাসাগর মহাশয়ের উত্তরসূরী বলে নিজেকে পরিচয় না দেন! তবে, এদিন (সোমবার) প্রথম দিকে অমিতাভ বাবু বিদ্যাসাগর মহাশয়ের মেজ মেয়ের সম্পর্ক জড়িয়ে নিজেকে ‘উত্তরসূরী’ হিসেবে দাবি করলেও, তা ধোপে টেকেনি! বিতর্ক শেষে অবশ্য অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায় স্বীকার করেন, তিনি বিদ্যাসাগর মহাশয়ৈর কেউ নন। এমনকি প্রসাদ বাবুই হচ্ছেন বিদ্যাসাগর মহাশয়ের ছোট ভাই ঈশানচন্দ্র পরিবারের বংশধর। এই বিষয়টি নিয়ে বিদ্যাসাগর স্মৃতি মন্দির কমিটির সম্পাদক শক্তিপদ বেরা বলেন, অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায়-কে নিয়ে আমাদের মনে একটা প্রশ্ন ছিল! তবে, উনি সামাজিক কাজ করার জন্য, আমরা আর খতিয়ে দেখিনি। এখন পুরো বিষয়টি আমাদের কাছে স্পষ্ট। এই ঘটনায় কিছুটা হলেও হতবাক বীরসিংহ গ্রামের মানুষজন।