মণিরাজ ঘোষ, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৯ ডিসেম্বর: স্তন ক্যান্সার (ব্রেস্ট ক্যান্সার), জরায়ু মুখের ক্যান্সার (সারভাইকাল ক্যান্সার), মুখ গহ্বরের ক্যান্সার (ওরাল ক্যান্সার)- নির্ণয় হচ্ছে সুস্বাস্থ্য কেন্দ্রেই। সেই সঙ্গে মায়েদের প্রসবকালীন ও প্রসব পরবর্তী চিকিৎসা, শিশুদের যত্ন ও পুষ্টি সংক্রান্ত পরামর্শ, মেন্টাল হেলথ বা মানসিক স্বাস্থ্য পরিষেবা, ডেন্টাল হেলথ বা দাঁতের প্রাথমিক চিকিৎসা, নাক-কান-গলা (ENT)-র প্রাথমিক চিকিৎসা সহ বারো রকমের চিকিৎসা পরিষেবাও মিলছে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘স্বপ্নের প্রকল্প’ সুস্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলিতে। সুগার, প্রেসার, গ্যাস্ট্রোলজিক্যাল সমস্যা সহ ১৪৩ রকমের ওষুধও পাওয়া যায় এই সুস্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলিতে। তাই, এবার গ্রামীণ এলাকাগুলির সাথে সাথে শহরাঞ্চলের ঘন জনবসতিপূর্ণ (স্লাম এরিয়া) এলাকাতেও সুস্বাস্থ্য কেন্দ্র গড়ে তোলার উপর জোর দিচ্ছে রাজ্য সরকার। যদিও, শহরাঞ্চলে সুস্বাস্থ্য কেন্দ্র গড়ে তোলার ক্ষেত্রে একটি বড় সমস্যা দেখা দিচ্ছে। যা হল, জমির অভাবই বা জমি-জট! পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ক্ষেত্রেও এই সমস্যা প্রকট। এই জেলার পৌর এলাকা বা শহরাঞ্চলের জন্য নতুন করে যে ২১টি সুস্বাস্থ্য কেন্দ্রের অনুমোদন পাওয়া গিয়েছে- তার জমি জোগাড় করতেই কার্যত হিমশিম খেতে হচ্ছে প্রশাসন তথা স্বাস্থ্য দপ্তরকে। এদিকে, আগামী ১৫ জানুয়ারির মধ্যে জমি চিহ্নিত করতে না পারলে ফেরত চলে যেতে পারে বরাদ্দ অর্থও! রবিবার সন্ধ্যায় ঠিক এমনটাই জানিয়েছেন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকারিক ডঃ সৌম্যশঙ্কর সারেঙ্গী।

thebengalpost.net
মেদিনীপুর শহরের একটি সুস্বাস্থ্য কেন্দ্র:

thebengalpost.net
বিজ্ঞাপন (Advertisement):

উল্লেখ্য, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় সব মিলিয়ে মোট ৮৬৮টি সাব সেন্টার বা উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র রয়েছে। এর মধ্যে, ৬৪৩টিকে ইতিমধ্যেই সুস্বাস্থ্য কেন্দ্রে পরিণত করা হয়েছে। গত ২০২৩-‘২৪ অর্থবর্ষে জেলার প্রায় ১১ লক্ষ ৩৪ হাজার মানুষ এই সুস্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলি থেকে স্বাস্থ্য পরিষেবা পেয়েছেন। যা রাজ্যের মধ্যে অন্যতম রেকর্ড! এই পরিষেবার জন্য গত অর্থবর্ষে পুরস্কৃতও হয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর। রবিবার সন্ধ্যায় তা মনে করিয়ে দিয়েছেন CMOH ডঃ সারেঙ্গী। তিনি জানিয়েছেন, “গ্রামীণ এলাকায় সুস্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলির মাধ্যমে ক্যান্সার নির্ণয়, টেলিমেডিসিনের মতো উল্লেখযোগ্য পরিষেবার মাধ্যমে উপকৃত হচ্ছেন মানুষজন। এই ধরনের পরিষেবা শহরের ঘন জনবসতিপূর্ণ এবং পিছিয়েপড়া (মূলত বস্তি বা স্লাম এরিয়া) এলাকাগুলিতেও পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে উদ্যোগী হয়েছে রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তর তথা রাজ্য সরকার। যাতে শহরাঞ্চলের এই সমস্ত এলাকায় দুয়ারে দুয়ারে প্রাথমিক ও গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য পরিষেবা পৌঁছে দেওয়া যায়, সেজন্যই এই উদ্যোগ। তাছাড়াও, অনেকেই মেডিক্যাল কলেজে লাইন দিয়ে চিকিৎসা পরিষেবা নিতে চান না। তাই সুস্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলিতে প্রাথমিক ও অত্যন্ত জরুরি কিছু পরিষেবা দেওয়া হচ্ছে।”

thebengalpost.net
বিজ্ঞাপন (Advertisement):

পশ্চিম মেদিনীপুরের ‘জেলা শহর’ মেদিনীপুর, ‘রেল শহর’ খড়্গপুর এবং ঘাটালে যে ১১টি ইউপিএসসি (আর্বান প্রাইমারি সাব সেন্টার) আছে, সেখানে কয়েকটি অতিরিক্ত পরিষেবা (টেস্ট) ছাড়া প্রায় সুস্বাস্থ্য কেন্দ্রের মতোই পরিষেবা পাওয়া যায়। এবার এই সমস্ত শহর তথা জেলার পৌরএলাকাগুলির জন্য দুই ধাপে মোট ৪৮টি সুস্বাস্থ্য কেন্দ্রের অনুমোদন দেয় রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তর। অর্থ বরাদ্দও করা হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে যে ২৭টির জন্য অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছিল তার মধ্যে ১০টির কাজ ইতিমধ্যেই সম্পূর্ণ হয়ে গেছে। বাকি ১৭টির কাজ চলছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে অনুমোদনপ্রাপ্ত ২১টি সুস্বাস্থ্য কেন্দ্রের মধ্যে ১১টির জমি চিহ্নিত করা হয়েছে ইতিমধ্যে। এখনও জমি চিহ্নিত করা যায়নি ১০টি সুস্বাস্থ্য কেন্দ্রের জন্য। মেদিনীপুরে ৫টি, খড়্গপুরে ৪টি ও ঘাটালে ১টি সুস্বাস্থ্য কেন্দ্রের জমি চিহ্নিত করার কাজ জোরকদমে চলছে বলে রবিবার জানিয়েছেন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকারিক। তিনি বলেন, “জেলাশাসক খুরশিদ আলী কাদেরী সহ জেলা প্রশাসন ও মহাকুমা প্রশাসনের তৎপরতায় জোর কদমে জমি চিহ্নিত করার কাজ চলছে।” এই জমি চিহ্নিত করার সময়সীমা ৩১ ডিসেম্বর অবধি থাকলেও, জেলা স্বাস্থ্য দফতরের অনুরোধে তা বাড়িয়ে ১৫ জানুয়ারি অবধি করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন CMOH ডঃ সৌম্যশঙ্কর সারেঙ্গী।

thebengalpost.net
জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকারিক ডঃ সৌম্যশঙ্কর সারেঙ্গী:

thebengalpost.net
বিজ্ঞাপন (Advertisement):