দ্য বেঙ্গল পোস্ট বিশেষ প্রতিবেদন, মণিরাজ ঘোষ, ১২ আগস্ট: “ফাঁসির মঞ্চে গেয়ে গেল যারা জীবনের জয়গান…”, তাঁদের মধ্যে প্রথম সারিতেই মেদিনীপুরের ‘অগ্নি কিশোর’ বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসু। পরাধীন ভারতবর্ষে সর্বকনিষ্ঠ স্বাধীনতা সংগ্রামী, যিনি হাসতে হাসতে ফাঁসির দড়ি গলায় পরেছিলেন, তিনি মেদিনীপুরের বীর পুত্র, সারা দেশের গর্বের নাম- ক্ষুদিরাম! ১১৪ তম আত্মবলিদান দিবসে (১১ আগস্ট) শ্রদ্ধার সঙ্গে সারা দেশ তাঁর প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করলো। শ্রদ্ধাবনত দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বাংলায় টুইট করলেন, “তরুণ বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসু’র সাহস ও দেশপ্রেম ব্রিটিশ শাসনের শিকড় নাড়িয়ে দিয়েছিল!” মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শ্রদ্ধাঞ্জলিতে জ্বলজ্বল করছে, ক্ষুদিরাম স্মরণে বাঁকুড়ার লোককবি পীতাম্বর দাস (মতান্তরে, মুকুন্দ দাস) এর লেখা সেই বিখ্যাত চরণ গুলি- “একবার বিদায় দে মা ঘুরে আসি/হাসি হাসি পরব ফাঁসি দেখবে ভারতবাসী”! শ্রদ্ধায়, আন্তরিকতায় তাঁকে স্মরণ করলো জন্মদাত্রী মেদিনীপুরও। সরকারিভাবে এবং বেসরকারি ভাবে তাঁর জন্মভিটে মেদিনীপুরের হবিবপুর থেকে পৈত্রিক ভিটে (মতান্তরে, জন্মভিটে) কেশপুরের মোহবনী, সর্বত্র কোভিড বিধি মেনেই পালিত হলো ‘আত্মবলিদান দিবস’। কিশোর বিপ্লবী ক্ষুদিরাম’কে শ্রদ্ধা জানিয়ে তাঁর পৈতৃক ভিটে মোহবনীতে জেলা প্রশাসনের তরফে ‘পর্যটনস্থল’ গড়ে তোলার আশ্বাসও দেওয়া হল। তবে, এসবের উর্দ্ধে উঠে মেদিনীপুরের তরুণ প্রজন্ম বুধবার (১১ আগস্ট) সমাজ মাধ্যমের পাতায় তুলে ধরলেন অভিনব এক দাবি বা আবেদন-” ‘বাড়ে উঠে ক্ষুদিরাম’ বলা বন্ধ হোক। তবেই প্রকৃত শ্রদ্ধা জানানো হবে বিপ্লবী ক্ষুদিরামের প্রতি!” হ্যাঁ, নিছকই মস্করা বা পরিহাসের উদ্দেশ্যে, দশকের পর দশক ধরে আপামর বাঙালি এই ‘অপবাক্য’ প্রয়োগ করে আসছেন। অবিলম্বে তা বন্ধ করা হোক, এমনই দাবি সচেতন মেদিনীপুরের তরুণ প্রজন্মের।

thebengalpost.in
১৮ বছরের ক্ষুদিরাম বসু ফাঁসির মঞ্চে ওঠার আগে (ছবি- সংগৃহীত) :

thebengalpost.in
ফেসবুকে উঠলো দাবি :

প্রসঙ্গত, ‘বাড়ে উঠে ক্ষুদিরাম’ বা ‘বাড় খাইয়ে ক্ষুদিরাম’- এই পরিহাস বাক্য যেন বঙ্গ-জীবনের লৌকিক প্রবাদে পরিণত হয়েছে! অতি উৎসাহী হয়ে বা আবেগের বশবর্তী হয়ে কোনো কাজ করতে যাওয়া বন্ধু-বান্ধব-সহকর্মী-আত্মীয়’দের প্রতি নির্দ্বিধায় এই ব্যঙ্গ-বাক্য বা অপ-বাক্য প্রয়োগ করা হয়, কিছুটা মজা বা মস্করা-র ছলেই। প্রশ্ন তুলছেন মেদিনীপুরের সমাজকর্মী থেকে সাংবাদিকরা, “ক্ষুদিরাম কি সত্যিই কোন মজা-মস্করা-হাসি-ঠাট্টা-তামাশা করার মতো ব্যক্তিত্ব? নাকি তিনি অতি উৎসাহী বা নিছক আবেগতাড়িত হয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেছিলেন? কিংবা, নেহাতই কৈশোরের বালখিল্যতায় ফাঁসির দড়ি গলায় পরে গৌরব অর্জনের চেষ্টা নিয়েছিলেন?” উত্তর তাঁরাই দিচ্ছেন, “দেশমাতৃকাকে প্রতি প্রগাঢ় প্রেম, ভারতমাতার শৃঙ্খল মোচনের সুতীব্র বাসনা, দেশ ও দেশবাসীর প্রতি ঐকান্তিক ভালোবাসা থেকেই জীবন উৎসর্গ করার দুঃসাহসিকতা অর্জন করেছিলেন ক্ষুদিরাম! দেশমাতৃকার মুক্তির জন্য, ‘জীবন’ বাজি রেখে লড়াই কিংবা আত্মবলিদানের মধ্য দিয়েই নশ্বর জীবনের প্রকৃত সার্থকতা খুঁজে পেয়েছিলেন ক্ষুদিরাম! অত্যাচারী শাসকের হাত থেকে ভারতমাতা’কে উদ্ধারের জন্য তুচ্ছ জীবনের মায়া ত্যাগ করে বৃহত্তর লড়াইয়ে নেমেছিলেন ক্ষুদিরামের মতো এমনই শত শত বীর সন্তান!” সেই সাহসিকতা আর বীরত্বের মূল্য-কে ‘বাড় খাওয়া’ বা ‘অতি উৎসাহ দেখানো’র মতো লঘু বিষয়ের সাথে তুলনা করে বা মজা করে, তাঁদের বীরত্ব আর মহিমা-কে অপমান করা হচ্ছে না কি? প্রশ্ন তুলছেন মেদিনীপুরের নতুন প্রজন্ম। তাই দাবি, অবিলম্বে বন্ধ হোক এই ধরনের মস্করা। মেদিনীপুরের তরুণ কবিদের অন্যতম প্রতিনিধি, সমাজ ও সংস্কৃতি সচেতন নিসর্গ নির্যাস মাহাত তাঁর সমাজমাধ্যমে এ নিয়ে স্পষ্ট আবেদন রেখেছেন, “বাড় খেয়ে ক্ষুদিরাম- বলা বন্ধ হোক। এটুকুই।” লিখেছেন আরও অনেকেই! সমর্থন জানিয়েছেন, অবিভক্ত মেদিনীপুরের বিশিষ্ট ক্ষুদিরাম গবেষক অরিন্দম ভৌমিকের মতো ব্যক্তিত্বরা। কিন্তু, প্রশ্ন উঠছে, সত্যিই কি বন্ধ হবে এই মস্করা বা পরিহাস বাক্য? মেদিনীপুর বাসীর আবেদনে সারা বাংলা সাড়া দেওয়ার আগে, মেদিনীপুরের আপামর বাসিন্দারাই কি আজ থেকে শপথ নেবেন, এই ‘অপ-বাক্য’ প্রয়োগ না করার বিষয়ে? উত্তর দেবে বিপ্লবের পথ-প্রদর্শক মেদিনীপুর-ই!

thebengalpost.in
মেদিনীপুরের হবিবপুরের জন্মভিটে :