নিজস্ব প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর (ঘাটাল ও ডেবরা), ৯ জুন : ঠিক আড়াই মাস পর ফিরলো ভয়াবহ স্মৃতি! বুধবার ভোর ৩ টা নাগাদ পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল কোভিড হাসপাতালে উদ্ধার হল করোনা রোগীর ঝুলন্ত দেহ। এর আগে, গত ২৪ শে এপ্রিল শালবনী করোনা হাসপাতালেও এক রোগী আত্মহত্যা করেছিলেন, হাসপাতালের চার তলা থেকে লাফ দিয়ে। ঘাটাল করোনা হাসপাতালে অবশ্য চিকিৎসাধীন রোগী বছর ৪৮ এর শিবরাম ঘোষের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। হাসপাতাল সূত্রে খবর, সপ্তাহ দুয়েক আগে ঘাটাল মহকুমার ক্ষীরপাইয়ের পালংপুর এলাকার বাসিন্দা শিবরাম ঘোষকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তিন দিন আগে তাঁর করোনা রিপোর্ট নেগেটিভ এলে, ছুটি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়; কিন্তু অক্সিজেন স্যাচুরেশন ফের কমে গিয়ে শ্বাসকষ্টের সমস্যা শুরু হওয়ায় তাঁকে হাসপাতাল থেকে ছাড়া হয়নি। আজ সকালে হাসপাতালের ইন গেটের সামনে ওই রোগীর ঝুলন্ত দেহ দেখতে পাওয়া যায়। মানসিক অবসাদের জেরে আত্মহত্যা কিনা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। দেহটি ময়নাতদন্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন ঘাটাল থানার পুলিশ। এদিকে, মৃত ব্যক্তির ছেলে পীযুষ ঘোষ জানিয়েছেন, “গতকাল রাতেও বাবার সঙ্গে কথা হয়েছিল। তখনও ভাবিনি এরকম কিছু হতে পারে! কিন্তু, এতজন হাসপাতাল কর্মীর চোখ এড়িয়ে কিভাবে এই ঘটনা ঘটালেন, তা ভেবে পাচ্ছি না!” এই বিষয়ে, ঘাটাল করোনা হাসপাতালের সুপার’কে ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। তবে, জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর বিষয়টিকে প্রাথমিকভাবে আত্মহত্যার ঘটনা বলেই মনে করছে। ঘটনার তদন্ত হবে বলেও তাঁরা জানিয়েছেন।
অন্যদিকে, ডেবরা সুপার স্পেশালিটি ও করোনা হাসপাতালের ফার্মাসিস্ট ওয়ার্ডে কর্তব্যরত কোম্পানির চুক্তিভিত্তিক কর্মী সঞ্জয় ভট্টাচার্য গতকাল রাতে বিষ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে বলে অভিযোগ। বছর ৩৫ এর যুবক সঞ্জয় মঙ্গলবার রাতে বিষ খায় বলে জানা গেছে। প্রথমে তাকে ডেবরা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালেই ভর্তি করা হয়। পরে অবশ্য অবস্থার অবনতি হলে গভীর রাতেই মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে স্থানান্তরিত করা হয়। এই মুহূর্তে তার অবস্থা কিছুটা স্থিতিশীল বলে জানা গেছে। পরিবারের অভিযোগ, কর্তৃপক্ষের তরফে মানসিক চাপ দেওয়া হচ্ছিল, সেজন্যই আত্মহত্যা করেছে। এই বিষয়ে ডেবরা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের সুপার এবং ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক ডাঃ আরিফ জানিয়েছেন, “এরকম একটি ঘটনা ঘটেছে। তবে, উনি সরাসরি হাসপাতালের কর্মী নন, যে কোম্পানি দায়িত্বে আছে, তাঁদের কর্মী। তাঁদের সুপারভাইজারের সঙ্গে আমাদের সরাসরি কথা হয়, কাকে কোন ওয়ার্ডে বা কোন কাজে দেওয়া হবে। স্বাভাবিকভাবেই এই বিষয়ে কোম্পানির সঙ্গে ওই যুবকের মতানৈক্য হয়েছিল। কিন্তু, এটা অত্যন্ত স্বাভাবিক ব্যাপার। এর জন্য আত্মহত্যা করলে, অতি মারি পরিস্থিতিতে মানুষের জন্য সেবা করবে কিভাবে। আমরা চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীরাতো শারীরিক-মানসিক সমস্ত চাপের মধ্য দিয়েই দীর্ঘ দু’বছর ধরে কাজ করে চলেছি। কিন্তু, এরকম কঠিন পরিস্থিতিতে সামান্য কারণে রীতিমতো হুমকি দিয়ে আত্মহত্যা করার চেষ্টা আসলে বাকি সকলকেই চাপে ফেলে দেওয়া। আমরা পুরো ঘটনা ডেবরা থানা এবং জেলা স্বাস্থ্য ভবনে জানিয়েছি।”