Supreme Court

Recruitment Scam: “বড় মাত্রার দুর্নীতি” মেনে নিয়েও কয়েক হাজার শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীর চাকরি বাতিলে ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত ‘স্থিতাবস্থা’ বজায় রাখল সুপ্রিম কোর্ট

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, ১৩ এপ্রিল:”শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী নিয়োগে বড় মাত্রার দুর্নীতি সম্পর্কে সুপ্রিম কোর্ট সচেতন। তবে, চাকরি বাতিলের প্রক্রিয়ায় হাইকোর্ট পদ্ধতিগত ত্রুটি করেছে।‌ চাকরি খরিজ করার আগে শিক্ষক ও শিক্ষা কর্মীদের বক্তব্য শোনা হয়নি।” বুধবার দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টে পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী ‘নিয়োগ-দুর্নীতি’ মামলায় এক ঐতিহাসিক শুনানির সাক্ষী থাকলো সারা দেশ। রাজ্যে এখনও অবধি ‘চাকরি হারানো’ প্রায় ৪ হাজার শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীর ভবিষ্যতের সাথে সাথেই, আরো কয়েক হাজার ‘চাকরি হারাতে চলা’ প্রাথমিক শিক্ষকদের ভবিষ্যতও ঝুলে থাকল সুপ্রিম কোর্টের চূড়ান্ত রায়ের উপর। বুধবার (১২ এপ্রিল) প্রায় ৩ ঘন্টা শুনানির পর, আগামী ২৬ এপ্রিল পরবর্তী দিন ধার্য করেছেন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি অনিরুদ্ধ বসু এবং সুধাংশু ধুলিয়া’র ডিভিশন বেঞ্চ। ততদিন অবধি এই সংক্রান্ত সমস্ত মামলায় ‘স্থিতাবস্থা’ (কেপ্ট ইন অ্যাবেয়েন্স) বজায় রাখার নির্দেশ দিয়েছেন দুই বিচারপতি। অর্থাৎ, পরবর্তী শুনানির দিন অবধি এই সংক্রান্ত মামলায় নতুন করে কোনো পদক্ষেপ করতে পারবেনা হাইকোর্ট কিংবা কমিশন। তবে, পরবর্তী শুনানির আগে চাকরিহারানো শিক্ষক ও শিক্ষকর্মীরা নিজেদের স্কুলে যোগদান ও করতে পারবেন না। অর্থাৎ, চাকরি বাতিলের বিষয়টি আপাতত ‘স্থগিত’ থাকলেও, তাদের যে এখনই চাকরি ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে না; এই বিষয়টি স্পষ্ট করে দিয়েছেন বিচারপতি অনিরুদ্ধ বসু। অপরদিকে, দুর্নীতি সংক্রান্ত বিষয়ে সিবিআইকে তদন্ত চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন অপর বিচারপতি সুধাংশু ধুলিয়া।

কলকাতা হাইকোর্টের দুই বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় (বামদিকে) এবং বিশ্বজিৎ বসু’র নির্দেশেই চাকরি গিয়েছে কয়েক হাজার শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীর :

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় (এবং ১টি ক্ষেত্রে বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসুর)’র নির্দেশে এখনও অবধি প্রাথমিকে ২৫৫, নবম-দশমে ৭৭৫, গ্রুপ-ডি’তে ১৯১১ এবং গ্রুপ-সি’তে ৮৪২ জনের চাকরি বাতিল হয়েছে। তাঁদের সকলেরই বেতন এবং স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে গত কয়েকমাস ধরে। কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সুব্রত তালুকদারের ডিভিশন বেঞ্চও তাঁদের চাকরি ফিরিয়ে দেয়নি। এই পরিস্থিতিতে তাঁরা দেশের সর্বোচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত এই এই ধরনের সমস্ত মামলা একত্রিত করে গতকাল অর্থাৎ বুধবার বিচারপতি অনিরুদ্ধ বসুর ডিভিশন বেঞ্চে এই প্রথম নিয়োগ-দুর্নীতি মামলার পূর্ণাঙ্গ শুনানি হল। যেখানে চাকরি হারানোরদের পক্ষে জোর সওয়াল করেন ভারতবর্ষের অন্যতম সেরা এবং বর্ষীয়ান আইনজীবী মুকুল রোহতগী। তিনি বলেন, “কিভাবে পরীক্ষার ৫-৬ বছর পর নাইস আর এক প্রাক্তন কর্মীর বাড়ি থেকে পাওয়া OMR সিটের ক্লোন কপি বা ডুপ্লিকেট কপিকে শিরোধার্য করা হলো? কিভাবেই তা হঠাৎ করে সিবিআই এর হাতে চলে এলো? যেখানে সরকারি নিয়ম মেনে অরিজিনাল ওএমআর শিট নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে।” তাঁর সংযোজন, “যাঁরা নিয়োগ প্রক্রিয়ার সমস্ত ধাপে উত্তীর্ণ হয়ে ৪-৫ বছর ধরে চাকরি করলো, তাঁদের বক্তব্য না শুনে কিভাবে একজন বিচারপতি চাকরি বাতিলের নির্দেশ দিতে পারেন? যেখানে কোন কিছুই এখনো প্রমাণ হয়নি।” তবে, এই পুরো প্রক্রিয়ায় যে বেনজির দুর্নীতি হয়েছে, তা বুঝতে পারেন দুই বিচারপতি। একইসঙ্গে তাঁদের পর্যবেক্ষণ, “চাকরি বাতিলের ক্ষেত্রে হাইকোর্টের পদ্ধতিগত ত্রুটি আছে।” অর্থাৎ, দুর্নীতি হয়েছে মেনে নিয়েও, চাকরিরতদের বক্তব্য না শুনে চাকরি-বাতিলের বিষয়টিতে তাঁদের আইনজীবীর (মুকুল রোহতগীর) সঙ্গে একমত হয়েছেন দুই বিচারপতি। যে বিষয়টি বিচারপতি অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়কে অনেক আগেই ধরিয়ে দিয়েছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী তথা কংগ্রেস নেতা অরুনাভ ঘোষ!

অন্যদিকে, ‘যোগ্য’ চাকরিপ্রার্থীদের আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য এবং সিবিআই (CBI) এর আইনজীবী তথা কেন্দ্রের অতিরিক্ত সলিসিটি জেনারেল এস.ভি রাজু বলেন, পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষক ও শিক্ষা কর্মী নিয়োগে বেনজির দুর্নীতি হয়েছে। যোগ্য চাকরিপ্রার্থীদের নম্বর কমানো হয়েছে। অযোগ্যদের নম্বর বাড়ানো হয়েছে টাকার বিনিময়ে। সেই কারণেই প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী থেকে শুরু করে শিক্ষা দপ্তরের আমলারা জেল খাটছেন। বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য এও বলেন, “এই দুর্নীতি মামলার তদন্ত শুরু হয়েছে প্রাক্তন বিচারপতি রঞ্জিত বাগের দেওয়া বিস্ফোরক রিপোর্টকে কেন্দ্র করে।” এরপরই, ওই রিপোর্ট কলকাতা হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের কাছে তলব করেন দুই বিচারপতি। আগামী ২৬ এপ্রিল তা দেখার পরই মামলার মোড় ঘুরে যেতে পারে বলে সংখ্যাগরিষ্ঠ আইনজীবী মহলের ধারণা! কারণ, প্রাক্তন বিচারপতি রঞ্জিত কুমার বাগ তাঁর তদন্ত রিপোর্টে, গ্রুপ সি ও গ্রুপ ডি নিয়োগে বেনজির দুর্নীতির পরিসংখ্যান তুলে ধরে জানিয়েছিলেন, এই নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ বাতিল হওয়া উচিত! তিনি আর্থিক দুর্নীতির বিষয়টিতেও ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। আর, বিচারপতি অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে সেই তদন্তই করছে সিবিআই এবং ইডি। ফলে, ওই দিন (২৬ এপ্রিল) সুপ্রিম কোর্টে ‘কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে কেউটে’ বেরিয়ে আসতে পারে বলে অনেকের ধারণা। এমনকি, পশ্চিমবঙ্গের নজিরবিহীন নিয়োগ-দুর্নীতি কেলেঙ্কারির বিষয়টি সারা দেশের সামনে বেআব্রু হয়ে পড়তে পারে বলেও অনেকের আশঙ্কা!

মুকুল রোহতগী (আইনজীবী) :

News Desk

Recent Posts

Vidyasagar University: আবহাওয়ার নিখুঁত খবর জানতে ISRO-র সহযোগিতায় আকাশে যন্ত্র লাগানো বেলুন পাঠাল বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৩ জুন: রবিবার (২২ জুন) দুপুর ঠিক ২টো ১…

1 day ago

Midnapore: “১৯৭৮-এর পর এমন ভয়াবহ বন্যা দেখেনি গড়বেতা!” আসরে NDRF-SDRF; প্লাবন পরিস্থিতি চন্দ্রকোনাতেও

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২০ জুন: ১৯৭৮ সালের পর এমন ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতির…

4 days ago

Midnapore: মিয়াজাকি, ব্ল্যাকস্টোন থেকে আম্রপালি, হিমসাগর; মেদিনীপুরে জমজমাট ‘আম উৎসব’

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৮ জুন: ৩০ টাকা প্রতি কেজি থেকে ৩ লক্ষ…

6 days ago

Kharagpur: খড়্গপুরের কারখানায় ভয়াবহ বিস্ফোরণ! মৃত্যু এক শ্রমিকের

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, খড়্গপুর, ১৭ জুন: গ্লিসারিন কারখানায় ওয়েল্ডিং- এর কাজ চলাকালীন ভয়াবহ বিস্ফোরণ!…

1 week ago

Midnapore: প্রায় দু’দশক পরে পশ্চিম মেদিনীপুরে শুরু হয়েছিল প্রাথমিকে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া; থমকে গেল আদালতের নির্দেশে

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৬ জুন: ২০০৮ এর পর ২০২৫। দীর্ঘ প্রায় দুই…

1 week ago

Elephant: হাতির পালকে তাক করে ছোঁড়া হচ্ছে একের পর এক জ্বলন্ত হুলা; নেটমাধ্যমে ছবি ছড়িয়ে পড়তেই নিন্দার ঢল

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, খড়্গপুর, ১৩ জুন: হাতির পালকে তাক করে ছোঁড়া হচ্ছে একের পর…

2 weeks ago