দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৫ সেপ্টেম্বর: শিক্ষা, সাহিত্য, সঙ্গীত ও সমাজজীবনে উল্লেখযোগ্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ বাংলা তথা দেশের পাঁচ গুণী মানুষ পেলেন ‘বিদ্যাসাগর পুরস্কার- ২০২৫’ সম্মান। ‘নবজাগরণের অগ্রদূত’ পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ২০৬-তম জন্মজয়ন্তীকে সামনে রেখে বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) পশ্চিম মেদিনীপুরের বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হলো এই বিদ্যাসাগর পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান। পুরস্কৃত হলেন, শিক্ষাবিদ ও বিশিষ্ট নাট্যকার উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়, কবি ও চিত্রশিল্পী তন্ময় মৃধা, সংগীতশিল্পী সৈকত মিত্র, তরুণ প্রতিভাবান কবি নির্মাল্য মুখোপাধ্যায় এবং পশ্চিমবঙ্গ ক্যাডারের প্রথম একশো শতাংশ দৃষ্টিশক্তিহীন আইএএস তথা সুদক্ষ প্রশাসক কেম্পা হোন্নাইয়া। এদিনের এই মঞ্চ থেকেই ‘অধ্যাপক সুধীর রঞ্জন দাস স্মৃতি পুরস্কার- ২০২৫’ তুলে দেওয়া হয় উৎকল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপিকা জয়ন্তী ডোরার হাতে।

thebengalpost.net
বিদ্যাসাগর পুরস্কার প্রাপকরা:

thebengalpost.net
বিজ্ঞাপন (Advertisement):

মেদিনীপুর শহরের উপকন্ঠে অবস্থিত বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবেকানন্দ সভাগৃহে আয়োজিত এদিনের অনুষ্ঠানে ‘বিদ্যাসাগর স্মারক বক্তৃতা- ২০২৫’ রাখতে উপস্থিত হয়েছিলেন আইআইটি খড়্গপুরের অধিকর্তা (ডিরেক্টর) অধ্যাপক সুমন চক্রবর্তী। এই গুণী ব্যক্তিত্বরা ছাড়াও এদিন উপস্থিত ছিলেন বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক দীপক কুমার কর, প্রাক্তন উপাচার্য অধ্যাপক শিবাজী প্রতিম বসু, নিবন্ধক জয়ন্ত কিশোর নন্দী, ঐতিহাসিক অন্নপূর্ণা চট্টোপাধ্যায় (বিদ্যাসাগর পুরস্কার প্রাপ্ত) সহ অন্যান্য বিশিষ্টজনেরা। বিদ্যাসাগর স্মারক বক্তৃতায় বাংলা ভাষা শিক্ষা ও নারী জাগরণে ঈশ্বরচন্দ্রের অসামান্য অবদান তুলে ধরেন খড়্গপুর আইআইটি’র অধিকর্তা। একটি জাতিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে গেলে নারীদের শিক্ষা ও প্রগতির আলোয় আলোকিত করা প্রয়োজন বলেই মত অধ্যাপক চক্রবর্তী। তাঁর মতে, “বিদ্যাসাগর মহাশয় এই কাজটাই সবার আগে করেছিলেন। বিধবা বিবাহ প্রচলন, বাল্য বিবাহ ও বহু বিবাহ প্রথা রদ থেকে শুরু করে নারীদের জ্ঞান, বুদ্ধি ও শিক্ষার মাধ্যমে নারী-জাগরণ ঘটিয়ে সেযুগের অন্ধকারাচ্ছন্ন সমাজে তিনি আলোর প্রবেশ ঘটিয়েছিলেন।” সেইসঙ্গে তিনি এও বলেন, “একটি সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যেতে গেলে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের উপর সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপের প্রয়োজন।” নারীদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কর্মসংস্থান বিষয়ে আইআইটি খড়্গপুর কর্তৃপক্ষও নানা উদ্যোগ গ্রহণ করছে বলে জানান ডিরেক্টর।

thebengalpost.net
পুরস্কৃত সঙ্গীতশিল্পী সৈকত মিত্র:

এ প্রসঙ্গেই আইআইটি খড়্গপুরের ডিরেক্টর তথা বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানী অধ্যাপক চক্রবর্তী এদিন উল্লেখ করেন, প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে স্বল্প খরচেই কিভাবে রোগ নির্ণয় করা যায়, তা নিয়ে নিরন্তর গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা। শহরের উন্নত ডায়াগনস্টিক ল্যাবরেটরির পরিষেবা যেখানে পৌঁছয় না, সেইসমস্ত প্রত্যন্ত অঞ্চলেও কিভাবে সহজে রোগ নির্ণয় করা সম্ভব, সেই বিষয়ে এদিন আলোকপাত করেন অধ্যাপক সুমন চক্রবর্তী। তাঁর মতে, ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশের অধিকাংশ মহিলাই রক্তাল্পতা বা অ্যানিমিয়ায় ভোগেন। বাড়িতে বসেই কিভাবে স্মার্টফোনের (‘হিমো কিউআর’ অ্যাপের) মাধ্যমে ‘হিমোগ্লোবিন লেভেল’ পরীক্ষা করা যায়, টর্চের মতো যন্ত্র (‘ওরোস্ক্রিন’)-এর সাহায্যে ওরাল ক্যানসার শনাক্ত করা যায় এবং সম্পূর্ণ গোপনীয়তা বজার রেখে মহিলাদের যোনিপথের সংক্রমণের পরীক্ষা করা যায় (‘প্রিপ্যাপ কিউআর’-এর সাহায্যে) তাও তুলে ধরেন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এর এই প্রথিতযশা অধ্যাপক।

thebengalpost.net
পুরস্কৃত মেদিনীপুরের কৃতি সন্তান কবি নির্মাল্য মুখোপাধ্যায়:

অন্যদিকে, বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে তাঁদের ‘বিদ্যাসাগর পুরস্কার’-এ সম্মানিত করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন পুরস্কার প্রাপকরা। প্রখ্যাত সংগীতশিল্পী শ্যামল মিত্রের সুযোগ্য সন্তান সৈকত মিত্র এদিন পুরস্কার-মঞ্চ থেকে সকলের অনুরোধে দু’টি সংগীত পরিবেশনা করেন। সুর মূর্ছনায় ভেসে যায় সমগ্র প্রেক্ষাগৃহ। মেদিনীপুরের কৃতি সন্তান তথা এই সময়ের এক স্বনামধন্য কবি তথা সাহিত্য-স্রষ্টা নির্মাল্য মুখোপাধ্যায় মাত্র ৪৩ বছর বয়সেই এই মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার পেয়ে ‘অভিভূত’ বলে জানান। নির্মাল্য নিজেও এই বিশ্ববিদ্যালয়েরই প্রাক্তনী ছিলেন বলে জানান। কিভাবে ‘অন্ধকারের পথ’ পেরিয়ে আলোর দিশারী রূপে একজন সফল আইএএস (IAS) অফিসার হয়ে উঠেছেন সেই গল্প শোনান কর্নাটকের টুমাকুরু জেলার চৌদানাকাপ্পি গ্রামের, কৃষক পরিবারের সন্তান তথা বর্তমানে পশ্চিম মেদিনীপুরের অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) কেম্পা হোন্নাইয়া। উপাচার্য অধ্যাপক দীপক কুমার কর বলেন, “এই পুরস্কার ও বক্তৃতা প্রদান অনুষ্ঠান নিছকই সম্মাননা জ্ঞাপনের মঞ্চ নয়, বিদ্যাসাগরের আদর্শকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার এক অনন্য উদ্যোগও বটে।” উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর, মেদিনীপুরের ‘মহামানব’ তথা শিক্ষা ও সমাজ সংস্কারক পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ২০০-তম জন্মদিবসকে সামনে রেখেই ‘বিদ্যাসাগর পুরস্কার’ প্রদান অনুষ্ঠানের সূচনা হয় মেদিনীপুরের এই বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ে।

thebengalpost.net
IIT খড়্গপুরের ডিরেক্টরকে সম্মানিত করলেন উপাচার্য: